সোর্স মুছাকেও মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন বাবুল!


স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করিয়ে নিজের সোর্স মুছাকেও মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন পুলিশের সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। মিতু হত্যার পর দুই সপ্তাহ ধরে তিনি মুছাকে রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন। দিয়েছিলেন সতর্ক থাকার পরামর্শও। মুছার স্ত্রীর দাবি, যখন মুছা ধরা পড়ে যান, তখন তাঁকেও মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন বাবুল।
২০১৬ সালের ২১ জুন সকালে যখন মুছা ধরা পড়েন, তখন চট্টগ্রামে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে বাবুল বলেছিলেন, ‘এমন খুনিকে এক মুহূর্তও বাঁচিয়ে রাখা ঠিক হবে না।’ কিন্তু ওই সময় পুলিশ কর্মকর্তারা বাবুল আক্তারের এমন নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেননি। উল্টো তৎকালীন সিএমপি কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহির বিষয়টি বাবুলকে স্মরণ করিয়ে দেন। কিন্তু বাবুল বারবার বলেছিলেন, ‘রাখো তোমার কমিশনার, তোমরা আমার জন্য এটুকুই করবে না? আমি তোমাদের জন্য এত কিছু করেছি। তোমরা গুরুদক্ষিণা দেবে না?’
বাবুল গুরুদক্ষিণা চেয়েছিলেন এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। আর মুছাকে সতর্ক থাকার জন্য বাবুল নির্দেশনা দিয়েছিলেন, এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার। তিন মাস আগে থেকেই বাবুল স্ত্রী হত্যার পরিকল্পনা এঁটেছিলেন, এমন তথ্য দিয়েছেন হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহকারী এহতেশামুল হক ভোলা। অবশ্য তিনি আদালতে এমন স্বীকারোক্তি দেননি। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে অন্য একটি হত্যা মামলায় রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সময় এমন দাবি করেছিলেন ভোলা।
আলাপকালে মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার বলেন, ‘মিতু হত্যার দু-তিন দিন পর মুছা বাসায় ফোন রেখে বের হয়েছিলেন। এই সময় ল্যান্ডফোন থেকে একটি কল আসে, সেই কলটি আমি রিসিভ করি। অন্যপ্রান্ত থেকে যিনি ফোন করেছিলেন তিনি তাঁর পরিচয় দেননি। তিনি মুছা কোথায় জানতে চান, আমি বলেছিলাম, মুছা বাইরে। এরপর আবার জিজ্ঞেস করেন, মুছা কি বাসার বাইরে? তখন আমি বলি, হ্যাঁ, বাসার বাইরে। তখন তিনি বলেন, মুছাকে বলবা একটু সতর্ক থাকতে। এই বলে ফোন রেখে দেন।’
পান্না আক্তার বলেন, ‘আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি, অন্যপ্রান্ত থেকে কথা বলেছেন বাবুল আক্তার। পরে আমি মুছার কাছে জানতে চাই, তোমাকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে কেন? তুমি কি কোনো অপরাধে জড়িয়েছ? তখন মুছা বলেছিল, বাবুলের নির্দেশে কাজটি সে করেছে। মুছা আরো বলেছিল, এই বিষয়ে কখনোই কারো কাছে মুখ না খুলতে। যদি তিনি (পান্না) মুখ খোলেন, তাহলে মুছার ক্ষতি হয়ে যাবে।’
এত দিন পর কেন এসব কথা বলছেন?—এমন প্রশ্নের জবাবে পান্না বলেন, ‘মুছাকে প্রশাসনের লোকজন আটক করে নিয়ে গেছে। এত দিন আশায় ছিলাম মুছা ফিরে আসবে। কিন্তু মুছা এখনো ফিরে আসেনি। আবার বাবুল আক্তার এখন আর মামলার বাদী নেই, তিনিও আসামি হয়েছেন।’ তাহলে মুছা কোথায়? এই প্রশ্নের জবাবে পান্না বলেন, ‘আমি এখনো বলছি। মুছাকে প্রশাসনের লোকজন নিয়েছে আমার সামনে থেকেই। মুছাকে এখনো আদালতে সোপর্দ করা হয়নি। আমি মুছাকে আদালতে সোপর্দ করার দাবি জানাচ্ছি।’ আপনি কি মনে করছেন মুছা এখনো জীবিত আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের লোকজন কেন মুছাকে মারবে, প্রশাসন তো মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা। তাই আমি এখনো মনে করি, প্রশাসনের কাছে মুছা আছে এবং তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।’
এমবি
