ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news

হেমন্ত এসেছে নীরবে

হেমন্ত এসেছে নীরবে
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

আজ তেসরা কার্তিক। বাংলা বর্ষ পঞ্জিকা মতে হেমন্ত ঋতু শুরু হয়ে গেছে দুই দিন আগেই। তবু রাজধানী ঢাকাতে এই ঋতুর আমেজ নেই। যদিও গ্রামীণ জনপদে তাপমাত্রা কমে আসায় খানিকটা হেমন্তের আমেজ পাওয়া যাচ্ছে। কার্তিক আর অগ্রহায়ণ দুই মাসের হেমন্ত পেরিয়ে শীত আসে। নাতিশীতোষ্ণ এই আবহাওয়া বছরের সব চাইতে স্বস্তির সময়। আরামের সময় হলেও বায়ু দূষণ আর বাড়তি তাপমাত্রার কারণে ঢাকায় এটি খুব একটা টের পাওয়া যায় না।

আবহাওয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, ঢাকার তাপমাত্রা কমতে আরও কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে। ৬০ দিনের হেমন্তকে ঢাকায় টের পাওয়া যায় ৪০ দিনের মতো। যদিও এখন ভোররাতের দিকে হালকা শীত পড়তে শুরু করেছে। গ্রামে হেমন্তের আগমনে ভোরের দিকে খানিকটা কুয়াশা পড়ে। ঘাসের উপর নরম শিশির জমে।

আবহাওয়া অধিদফতরের দীর্ঘ মেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়, অক্টোবর মাসে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিকের অপেক্ষা কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। আবার এ মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থেকে কিছুটা বেশি থাকতে পারে।

তবে নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। পাশাপাশি এ মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাবে।

আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, অক্টোবর মাসে হেমন্তকাল এলেও তাপমাত্রা এবং দূষণের কারণে আমরা সে নরম আবহাওয়াটা শহরে পাই না বললেই চলে। তিনি বলেন, শহরে দূষণের কারণে তাপমাত্রা গ্রামের তুলনায় বেশি থাকে। এখনও একই অবস্থা বিরাজ করছে। তবে গ্রামে তাপমাত্রা আগের তুলনায় বেশ কিছুটা কমে আসায়, বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত সময়টায় গ্রামের মানুষ হেমন্তের আবহাওয়া অনুভব করতে পারছেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে এখন আষাঢ়-শ্রাবণে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয় ভাদ্র-আশ্বিনে তারচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়। এর প্রধান কারণ মৌসুমি বায়ুর প্রভাব। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, বিদায় নিয়েছে মৌসুমি বায়ু। ফলে পুরোপুরি বিদায় নিলো বর্ষা। এই বায়ুর প্রভাবে শরতের দেখাও খুব সময়ের জন্য পেয়েছে মানুষ। 

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’-এর বায়ুমান সূচক (একিউআই) অনুযায়ী ঢাকায় আজ বায়ু দূষণের মানমাত্রা ১১২। এই মাত্রার অর্থ হলো বাতাসের মান 'অস্বাস্থ্যকর' পর্যায়ে রয়েছে।

বায়ুর এই মানের বিষয়ে বায়ু দূষণ বিশেষজ্ঞ মো. কামরুজ্জামান বলেন, বায়ু দূষণের কারণে আমরা আসলে গ্রীষ্ম আর শীত ছাড়া আর কোনও ঋতুই অনুভব করতে পারি না। কারণ দূষণের কারণে বদলে যায় আবহাওয়া,  বদলে যায় তাপমাত্রা। দূষণের ফলে হেমন্তের আবহাওয়াও তাই আমরা বুঝতে পারি না।

হেমন্তে নতুন ফসল কাটাকে কেন্দ্র করে নবান্ন উৎসবের সূচনা। এসময় দেশে আমন ধান কাটা শুরু হয়। যদিও এখন হেমন্ত বছরের প্রধান ফসল আহরণের মৌসুম নয়। এখন দেশের প্রধান ফসল হিসেবে বোরো মৌসুমকেই বিবেচনা করা হয়। মূলত এখন হেমন্তে বোরো ধান রোপণ শুরু হয়। কিন্তু সুদীর্ঘ কালের ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে এখনও আমন ধান কাটলে গ্রামীণ জনপদে নতুন পিঠা-পুলির উৎসব শুরু হয়। হেমন্তের আগমন ধরে দেশের গাছিরা খেজুরের গাছ কাটার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। একটু তাপমাত্রা কমে এলেই গাছিরা গাছ কাটতে শুরু করবে।

তবে চলতি বছর বাজার দরের হাল-চালে চিড়ে চ্যাপ্টা হচ্ছে মানুষ। বাজারের উত্তাপ কোনও কিছুকেই দমাতে পারছে না। শীতের আগমনে এই উত্তাপ কিছুটা কমতে পারে। হেমন্তের শুরুতে কৃষকের ক্ষেতে নতুন সবজীতে ডালপালা মেলতে শুরু করেছে।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন