ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

Motobad news

কুয়াকাটায় ১৫ জেলে পরিবারে কান্নার রোল

কুয়াকাটায় ১৫ জেলে পরিবারে কান্নার রোল
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় দু’টি মাছ ধরার ট্রলারসহ ১৫ জেলে ভারতীয় কারাগারে আটক রয়েছে। ফলে কর্মহীন ওই সকল পরিবারের লোকজন অর্ধহারে অনাহারে দিনযাপন করছে। তাদের কান্না ও আহাজারীতে ভারী হয়ে আসছে আকাশ-বাতাশ।

স্থানীয় ও জেলে পরিবার সূত্রে জানা যায়, দু’মুঠো ভাতের জন্য কর্মের তাগিদে ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর কুয়াকাটার মৎস্য বন্দর আলীপুর থেকে এফ,বি তানজিলা ও এফ, বি তাহিরা নামক দু’টি মাছ ধরা ট্রলারে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে যান ১৫ জেলে।
ঘন কুয়াশায় পথ হারিয়ে ভারতীয় জল সীমানায় প্রবেশ করায় ওই ট্রলারসহ জেলেদের আটক করে ভারতীয় কোস্টগার্ড। পরে আদালতের মাধ্যমে তাদের জেল হাজতে পাঠান হয়। আটক জেলেরা হচ্ছে পান্না মিয়ার মালিকানাধীন এফ,বি তানজিলা ট্রলারের মাঝি আলমগীর হোসেন, নাইম ফরাজী, রহিম মোল্লা, জহির, পান্না মিয়া, ইউসুফ, ইসমাইল, তারাইয়া, কবির আহম্মদ এবং শাহজাহান ফকিরের মালিকানাধীন এফ,বি তাহিরা ট্রলারের মাঝি মোঃ তৈয়ব, ড্রাইভার খাইরুল আমিন, ইব্রাহিম সরদার, ইসমাইল, কফিল উদ্দিন, জাহিদ। আটক এসব জেলেরা হচ্ছে পর্যটন নগরী কুয়াকাটার লতাচাপলী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।

বর্তমানে ওই জেলে পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বজনদের ফিরিয়ে পাওয়ার আশায় ও দীর্ঘদিন জেলহাজতে থাকার বেদনায় মর্মাহত। অপরদিকে হতদরিদ্র এসব জেলে পরিবারে আর কোন কর্মক্ষম লোক না থাকায় অনাহারে-অর্ধহারে মানবেতব জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, স্বজনদের ফিরে পেতে তাদের মধ্যে চলছে হাহাকার ও দু’মুঠো ভাতের জন্য করছে আহাজারী। এযেন হৃদয় বিদারক এক করুন দৃশ্য। আটক জেলে পরিবারে শিশু ও নারীদের কান্না ও আহাজারীতে কাটছে দিন, যেন দেখার কেউ নেই। 

জেলে পল্লীতে গেলে অশ্রুবিজড়িত কণ্ঠে নাসরিন হু হু করে কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘মোরা এ্যাহোন খামু কি, মোগ আয় রোজগারের আর কেউ নাই, আমনেরা মোগ পোলাপানের বাবকে আইন্না দেন’।

এদিকে ট্রলার মালিকরা জেলেদের ফিরিয়ে আনতে চালাচ্ছে অবিরাম চেষ্টা কিন্তু তাদের এ চেষ্টা যেন বৃথা প্রয়াস। কারণ সংশ্লিষ্ট হাই কমিশনের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তাদের স্বদিচ্ছা ছাড়া এর কোন সমাধান করা সম্ভব নয় বলে দাবী করছেন ট্রলার মালিকরা।

এফ,বি তাহিরা ট্রলারের মালিক শাহজাহান ফকির বলেন, ‘আমাদের ট্রলার ও জেলেরা আটক হওয়ার পর থেকে আমরা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি, তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য’। ‘আমরা স্থানীয় চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে হাই কমিশন পর্যন্ত যোগাযোগ করেছি কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সমাধান পাইনী’।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আয়ের একমাত্র উৎস্য ওই ট্রলার’। ‘এখন ট্রলার ও জালপালা ফিরিয়ে পাওয়ার দুশ্চিন্তা. আরেক দিকে ট্রলারের যে সকল জেলে আটক রয়েছে তাদেরকে তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে না দিতে পারার যন্ত্রণা’।

এ ব্যাপারে আলীপুর মৎস্য আড়ৎদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি ও লতাচাপলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘প্রকৃত পক্ষে জেলেদের ফিরিয়ে আনা জরুরী, কারণ ওই সকল জেলে পরিবারে আর কোন কর্মক্ষম লোক নাই’। ‘তাই তাদের ভরণ পোষণ এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে’। ‘অপরদিকে যাদের ট্রলার তারাও জালপালা হারিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পরেছে’। ‘এখন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ একান্ত জরুরী’।

হতদরিদ্র জেলে পরিবারের কথা চিন্তা করে অবিলম্বে তাদের মুক্ত করতে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ হাই কমিশনে যারা রয়েছেন তাদের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা এলাকাবাসীর।


এমইউআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন