ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

Motobad news

বাজানের চাকরি লাগবে না, জানডা ফেরত আইনা দাও...

বাজানের চাকরি লাগবে না, জানডা ফেরত আইনা দাও...
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

‘বাজানে ঢাকায় গেছিলো চাকরির ভাইবা দিতে। ফোনে কইছিল, ঈদের আগেই ফিরা আইবে। বাড়িতে সবার লগে ঈদ করবে। কিন্তু বাজানে আর আইলো না। তোমরা আমার বাজানরে আইনা দাও। বাজানের চাকরি লাগবে না। জানডা ফেরত আইনা দাও।’ আহাজারি করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন রিজিয়া বেগম (৭৫)। 

পদ্মায় স্পিডবোট দুর্ঘটনায় নিহত শাহাদাত হোসেনের (২৭) মা রিজিয়া। আদরের সন্তানকে হারিয়ে এখন নির্বাক হয়ে পড়েছেন তিনি। সন্তান হারানো শোক কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না মা রিজিয়া বেগম। শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো এলাকায়।

নিহত শাহাদাতের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার নিয়ামতকান্দি এলাকায়। তাঁর বাবার নাম আদম আলী মোল্লা। ছয় ভাই ও চার বোনের মধ্যে শাহাদাত সবচেয়ে ছোট। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শাহাদাত রাজধানী ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন। বাড়িতে ফেরার পথে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি।

শাহাদাতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ঢাকার একটি মেসে বন্ধুদের সঙ্গে ভাড়া থাকতেন শাহাদাত। করোনা মহামারি চলায় সম্প্রতি গ্রামের বাড়ি চলে আসেন শাহাদাত। সম্প্রতি তিনি আবারও চাকরির সন্ধানে ঢাকায় ফিরে যান। সবশেষ রোববার একটি চাকরির পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তিনি। বাড়ির কাছাকাছি এসে পদ্মায় স্পিডবোট দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি।

নিহত শাহাদাতের বড় ভাই শহিদুল মোল্লা বলেন, ‘আমরা ছয় ভাই। তিন ভাই প্রবাসী। সবার ছোট ভাই শাহাদাতকে ঘিরে আমাগো অনেক স্বপ্ন ছিল। আম্মায় কইতো, তার ছোট বাজানে বড় চাকরি করবে। অনেক বড় হবে। মানুষের মতো মানুষ হবে। কিন্তু একটা দুর্ঘটনায় আমাগো সব আশা-ভরসা শেষ হইয়া গেল।’

স্পিডবোট দুর্ঘটনায় শাহাদাত ছাড়াও মাদারীপুরে আরও তিনজন নিহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন শিবচর উপজেলার মৌলতীকান্দি এলাকার আজিত মোল্লার ছেলে আলম মোল্লা (৩৮), রাজৈর উপজেলার শঙ্কারদি এলাকার তারা মিয়া মীরের ছেলে তাহের মীর (৩০), সদর উপজেলার শ্রীনদী এলাকার আবদুল মান্নান মোল্লার ছেলে আব্দুল আহাদ (৩০)। নিহত সবার বাড়িতে চলছে মাতম।

রাজৈরের নিহত তাহের মীর পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। ঢাকাতেই কাজ করতেন। লকডাউনে ঢাকায় কাজ না থাকায় বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। ছেলের মৃত্যুশোকে পাথর হয়ে পড়েছেন মা হাসিনা বেগম। তাহেরের স্ত্রী পাগলপ্রায়। কান্না করতে করতে তাহেরের স্ত্রী সুফিয়া বেগম বলেন, ‘আমার মাইয়া পোলা কারে বাবা কইয়া বোলাইবে। আমার যে আর কিছু রইল না। সব শেষ হইয়া গেল।’

তাহেরের মা হাসিনা বেগম বলেন, ‘ভোর রাইতে ঢাকার থেকে রওনা দেওয়ার আগে আমারে ফোন দিছিল। কইছিল, আমরা যেন সেহেরি খাইয়া লই। ফোন দিয়া আমাগো ঘুম ভাঙ্গাইছে। পরে আর ফোন দেয় নাই।’

জানতে চাইলে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন বলেন, ‘স্পিডবোট দুর্ঘটনায় বিভিন্ন জেলার ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। শিবচর থানায় মামলাও হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা এই স্পিডবোট চলাচলে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


/ইই
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন