নলছিটিতে আওয়ামী লীগের দুই নেতার পাল্টাপাল্টি হামলা, মামলা!

ঝালকাঠির নলছিটিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জেলা পরিষদের সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যে দুই দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ নিয়ে নলছিটি থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে ও সন্ধ্যায় সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। এতে ঝালকাঠি জেলা পরিষদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার জে এম হাতেম ও রানাপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান হাওলাদার আহত হয়েছেন। আহত দুজনেরই বাড়ি রানাপাশা ইউনিয়নে। তাঁরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত। হামলা ও সংঘর্ষে উভয় পক্ষের আরো পাঁচ জন আহত হয়।
এ নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রানাপাশা ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঝালকাঠি জেলা পরিষদের সদস্য ও নলছিটি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার জে এম হাতেমের সঙ্গে রানাপাশা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. শাহজাহান হাওলাদারের বিরোধ চলছিল।
ইঞ্জিনিয়ার হাতেমের বাড়ি রানাপাশা ইউনিয়নের দক্ষিণ রানাপাশা গ্রামে, আর ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহানের বাড়ি দক্ষিণ রানাপাশা গ্রামে। বিরোধকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় তাদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ইঞ্জিনিয়ার হাতেম কোন পক্ষে অবস্থান নিলে, ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান নেন অন্য পক্ষের। দুই পক্ষেই বিভক্ত হয়ে পড়ে স্থানীয়রা।
এমনকি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরাও দুই পক্ষেই রয়েছেন। গত বছরের ২ ডিসেম্বর এক নারী ইঞ্জিনিয়ার হাতেমের বিরুদ্ধে তাকে উত্ত্যক্ত করার লিখিত অভিযোগ করেন ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে।
ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাটি মীমাংসা করার জন্য জেলা পরিষদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার হাতেমকে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন হাতেম। তাঁর ধারণা ইউপি চেয়ারম্যানই ওই নারীকে দিয়ে অভিযোগ করিয়েছেন। এ নিয়ে বিরোধ আরো তীব্র হয়। বিভিন্ন সময় একে অপরের বিরুদ্ধে নানা ধরণের আপত্তিকর কথা বলেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে রানাপাশা ইউনিয়ন পরিষদের পাশে ইঞ্জিনিয়ার হাতেমের ওপর হামলা করে ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ তাঁর সমর্থকরা। এতে জেলা পরিষদের সদস্য আহত হন। এর জবাব দিতে সন্ধ্যায় নলছিটি লঞ্চঘাট থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান হাওলাদার, ইউপি সদস্য সাইদুর রহমান মন্টুসহ কয়েকজনের ওপর পাল্টা হামলা চালায় ইঞ্জিনিয়ার হাতেমের লোকজন। এতে ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান ও ইউপি সদস্য সাইদুর রহমান মন্টুসহ তিন-চার জন আহত হন। আহতদের মধ্যে ইউপি সদস্য মন্টুকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ব্যাপারে রানাপাশা ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান হাওলাদার বলেন, ইঞ্জিনিয়ার হাতেমের বিরুদ্ধে এক নারী লিখিত অভিযোগ দেয় ইউনিয়ন পরিষদে। যেহেতু উনি জেলা পরিষদের সদস্য, তাই আমি লিখিত নোটিশ না দিয়ে সম্মান জানিয়ে তাকে ফোনে বিষয়টি মীমাংসা করে নেওয়ার জন্য বলেছি। এতে তিনি উল্টো আমার ওপর ক্ষেপে গিয়ে মিথ্যাচার করছিলেন। আমার কোন লোকজন তাকে মারেনি, এটাও তাঁর বানানো কথা। বরংচ উল্টো তিনি ঝালকাঠি থেকে ৩০-৪০ জন ভাড়াকরা লোক এনে হাতুড়ি, লোহার রড ও লাঠিসোটা দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে।
ইঞ্জিনিয়ার জে এম হাতেম বলেন, আমার বাড়ি আর ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ি দুই প্রান্তে। আমার সঙ্গে তাঁর কোন বিরোধ নেই। তিনি আমাকে সহ্য করতে পারেন না। কিছু হলেই আমার সমালোচনা করেন। আমার বিরুদ্ধে এক নারীকে নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করিয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে সে এবং তাঁর পরিষদের লোকজন আমার ওপর হামলা করে। আমি তাঁর কোন লোকের গায়ে হাত দেইনি।
নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, দুইপক্ষের হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা পরিষদের সদস্য জে এম হাতেম ১০ জনকে আসামি করে একটি ও ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষে ইউপি সদস্য সাইদুর রহমান সেন্টু বাদী হয়ে আটজনকে আসামি করে পাল্টা মামলা দায়ের করেছেন। আমরা ঘটনা তদন্ত করছি। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমবি
