আমতলী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশী প্রজাতির মাছ


বরগুনার আমতলী উপজেলাসহ দক্ষিনাঞ্চল থেকে নানা কারনে হারিয়ে যাচ্ছে দেশী প্রজাতির বড়, ছোট, গুরা মাছ। এসব মাছ এখন আর সচরাচর দেখা যায় না। মানুষের খাদ্য তালিকায় মাংসের পরে স্থান পেয়েছে মাছ। মাছ পুষ্টিগুণ থেকে আমাদের শরীরের বিভিন্ন ভিটামিনের অভাব পূরণ করে। এরমধ্যে মলা-ঢেলা প্রভৃতি ছোট মাছের মধ্যে অন্যতম যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।
মাছের চলনভূমি ধানী জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ, পুকুর নালা, ডোবা, খাল-বিল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এসকল মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তার স্থান এখন দখল করেছে, চাষের মাছ। ব্যাপক জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকেও মাছ আমদানি হচ্ছে আমাদের দেশে। এক সময় শোল, টাকি, গজার, পাবদা, পুঁটি, শিং, মাগুর, বাটা, সরপুঁটি, বাইন, ফলি, বেদা, গুইঙ্গা, খইলশা, বাইলা, বোয়াল, মটকাচিংড়ি, মলেন্দাসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশী সাচরা মাছ খুব সহজে পাওয়া যেত। বাড়ির পাশে পুকুর, ডোবা ও নালায় ঝাকি জাল দিয়ে এসব মাছ ধরা হতো। তিন বেলাই মাছ-ভাত খেত বাঙালী। এখন আর দেশী এসব মাছ সচরাচর পাওয়া যায় না।
জানা গেছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে একদিকে মাছের চাহিদা বেড়েছে। অপরদিকে ভরাট হয়ে যাচ্ছে জলাশয়। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মতস্য বিচরণ ক্ষেত্র। যে কারণে দেশী এসব সাচরা মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়াও অধিক ফলনের আশায় জমিতে নানা ধরনের কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করায়, এসব মাছ মরে যাচ্ছে। বংশ বিস্তার হচ্ছে না। নদী-নালা ও খালে এক শ্রেণীর জেলে বিন্তিজাল, ধর্মজাল ও ঘেরজালসহ ছোট ফাঁসের বিভিন্ন ধরনের জাল ব্যবহার করে রেণুপোনা নিধন করায় মাছের বংশ বিস্তার বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
তারপরেও শহর কিংবা গ্রামগঞ্জের হাট-বাজারে মাঝে মধ্যে এসব মাছ পাওয়া গেলেও সরবরাহ খুব কম। সুস্থ ও সুঠাম শরীর গঠনের জন্য এসব মাছের ভূমিকা অপরিহার্য। উপজেলার বাগড়ি গ্রামের একাধিক বাসিন্দরা জানান, ছোটকালে নদী-নালায় মাছ ধরতে ধরতে বড় হয়েছি। আমবশ্যা-পূর্ণিমার জোতে তেঁতুলিয়া নদীর পানি ঘরের পাশে ক্ষেত টইটম্বুর করত। তহন আমি পল্লা দিয়ে ওই পানিতে বোয়াল, শোল, বাইন আরও কত কি ধরতাম।
এখন খাল-বিল, নদী-নালা, হাওর-ঝিল ইত্যাদি দিন দিন বেদখল ও ভরাট করে মানুষ বাড়িঘর তৈরী করছে। এক সময় উপজেলার বাজার থেকে থেকে প্রতিদিন দেশীয় কই, শিং, মাগুর, শৌল, গজাল, বোয়াল, টাকি, পাবদা, টেংরা, ফলি, খলিশা, ভেটকি, পাবদা, পুঁটি প্রভৃতি মাছ নিয়ে আসতো বিক্রি করেত কিন্তু বর্তমানে তেমন মাছ আসে না।
এছাড়াও বিভিন্ন বাজারে হরদম মাছ বিক্রি হতো। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায় এর বিপরীত চিত্র। দেশীয় প্রজাতির মাছের সংখ্যা খুবই সীমিত। যা আছে তার আবার দাম চড়া হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা কিনতে হিমশিম খায়। এরকম হলে আগামী প্রজন্ম আর মাছ পাবে না মাছের গল্প শুনবে। তাই সবাইকে দেশীয় মাছ রক্ষায় এগিয়ে আসার আহবান সচেতন মহলের।
এইচকেআর
