ঢাকা বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

Motobad news

আমতলী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ নরসুন্দর পেশা

 আমতলী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ নরসুন্দর পেশা
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

মানুষ মাত্রই সৌন্দর্য পিয়াসী। আর এই সৌন্দর্যের  অন্যতম উপকরণ হলো চুল। চুল নিয়ে মানুষের ভাবনার অন্ত নেই। চুল-দাড়ি কাটা-ছাটা, সেভ করা প্রতিদিন  প্রয়োজনীয় কাজের একটি অংশ। সেই কারণেই কেশবিন্যাসের কারিগর নাপিতের  প্রয়োজনীয়তা। আগে হাট-বাজারের বট বৃক্ষের ছায়ায়, খেয়াঘাটে, ফুটপাতে কিংবা গ্রামগঞ্জের রাস্তাঘাটে  ইটের ওপর সাজানো পিঁড়িতে বসে নাপিতরা গ্রামবাংলার মানুষের চুল-দাড়ি কাটতো।  

সেই আদি পরিচিত দৃশ্য এখন সচরাচর চোখে পরে না। কারণ আধুনিক সভ্যতার ক্রমবির্বতনে কেশ কারিগরদের গতিধারায় লেগেছে নতুনত্বের ছোঁয়া। যাদের  শৈশব কেটেছে গ্রামে তাদের স্মৃতিতে আজও  চোখের সামনে ভাসে সে স্মৃতিময় দিনগুলো। তবে এখনও গ্রামের কিছু হাট-বাজারে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। যদিও তা খুবই কদাচিৎ। যাকে আমরা  বলি নাপিত বা শীল । বংশ পরম্পরায়  তারা এ পেশাকে ধারণ করে চলেছে  যুগ যুগান্তরে। নাপিত বা নরসুন্দর এমন এক শ্রেণীর পেশা যারা পুরোনো কায়দায় রাস্তার পাশে আয়না  ঝুলিয়ে বিভিন্ন ভাবে মানুষের চুল ছাঁটেন এবং দাড়ি - গোঁফ কামিয়ে থাকেন।  

 নরসুন্দর আমতলীর  সর্বত্রই বিরাজমান ছিল, এদের সামাজিক অবস্থান মিশ্র ধরনের। বিভিন্ন ধর্ম বর্ণের লোকজন এ পেশায় সম্পৃক্ত থাকলেও বেশির ক্ষেত্রেই এরা নরসুন্দর স¤প্রদায়ভুক্ত। গ্রাম-গঞ্জের হাটবাজারে গেলে এখনও কোথাও কোথাও  চোখে পড়ে চিরচেনা সেই দৃশ্য।  রাস্তার পাশে,  হাটে-ঘাটে জলচৌকিতে বসিয়ে ও কাঠের বক্সে বসে ক্ষুর, কাঁচি, চিরুনি, সাবান, ফিটকারি, পাউডার ও লোশন নিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষকে সুন্দর করার কাজ করে যাচ্ছেন এসব নরসুন্দর বা নাপিতরা।আমতলী বাজাওে রাস্তার পাশে  বসে নরসুন্দরের কাজ করা হলদিয়ার, রবিন্দ্র, তারিকাটার, নুরমোহাম্মাদ জানান, মানুষ আমাদের কাছে বসতে চায়না ।

 কোন রকম  পরিবার পরিজন নিয়ে  অর্ধহারে  অনাহারে বেচে আছি।  গ্রামের বাজারে নাপিতদের নির্দিষ্ট স্থানে বা দোকানে লোকেরা তাদের চুল কাটা, ছাঁটা, এবং ছোটখাট কাটাছেঁড়ার কাজ করত । এসব সেবা প্রদানের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ  করত নাপিত। এই উপার্জনের অর্থ হতে পারে, আবার কোন দ্রব্যসামগ্রীও হতে পারে। আগেকার দিনে নাপিতদেরকে কাজের বিনিময়ে সাধারণত দ্রব্যসামগ্রী দেওয়া হতো।  

আধুনিকতা:বর্তমানে চুল-দাড়ি কাটার সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতিতেও পরিবর্তন হয়েছে। সেলুনে এখন আর শান দেয়া ক্ষুর দেখাই যায় না। তার বদলে এসেছে ব্লেড লাগানো ক্ষুর। এসেছে শেভিং ক্রিম, লোশন, চুলের কলপ। আগে এগুলো ছিল কল্পনার অতীত। দৈনন্দিন গ্রামীণ জীবনযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ অনুষাঙ্গিক বিষয়ের  মধ্যে  চুল কাটা-ছাটা,সেভ ইত্যাদি  কাজে  দীর্ঘকাল ধরে নিয়োজিত নরসুন্দর বা নাপিতদের বর্তমানে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আগেকার দিনে তাদের আয় দিয়ে সংসার ভালোভাবে চললেও এখন তারা  আর্থিক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারছেনা । তাই দিনে  হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম পেশা নরসুন্দর বা নাপিত।  


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন