বিকেলে মারধর, সকালে ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার


দাদনের টাকার জন্য বৃহস্পতিবার বিকালে কীটনাশক ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হাওলাদারকে (৫৫) মারধর করেছে দাদন ব্যবসায়ী জহিরুল।
শুক্রবার সকালে কীটনাশক ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হাওলাদারের মরদেহ তার বাড়ির টয়লেটের সামনে থেকে গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করেছে।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দাদন ব্যবসায়ী জহিরুলকে পুলিশ আটক করেছে। শুক্রবার সকালে তালতলী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার তেঁতুলবাড়ীয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর হাওলাদারের ছেলে আলিম হাওলাদার ২০১৮ সালে দাদন ব্যবসায়ী জহিরুলের কাছ থেকে ৯০ হাজার টাকা দাদন নেন। ওই টাকা দিয়ে আলিম হাওলাদার জাল নৌকা তৈরি করে সাগরে মাছ শিকারে যান। কিন্তু সাগরে তেমন মাছ ধরা না পড়ায় ওই দাদনের সুদ-আসল টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হন আলিম।
দাদনের টাকার জন্য জহিরুল বিভিন্ন সময়ে আলিমকে চাপ প্রয়োগ করে আসছে। গত তিন বছরে ৯০ হাজার টাকার সুদে আসলে দুই লাখ চল্লিশ হাজার টাকা হয়। গত দুই বছরে দাদনের দেড় লাখ টাকা সুদ পরিশোধ করেন আলিম। কিন্তু এতে তুষ্ট হয়নি দাদন ব্যবসায়ী জহিরুল। দাদনের আসল ৯০ হাজার টাকার জন্য জহিরুল প্রায়ই জেলে আলিমকে চাপ প্রয়োগ করে আসছে।
জহিরুলের নির্যাতন সইতে না পেরে আলিম ৭০ হাজার টাকা মূল্য ধরে তার জাল ও নৌকা জহিরুলকে দিয়ে দেয় এবং বাকি ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে এক মাসের সময় নেন আলিমের বাবা কীটনাশক ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হাওলাদার। কিন্তু তারা নির্ধারিত সময়ে ওই টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দাদন ব্যবসায়ী জহিরুল ও তার লোকজন বৃহস্পতিবার বিকলে জাহাঙ্গীর হাওলাদার ও তার ছেলে আলিমসহ পরিবারের চারজনকে মারধর করে।
বৃহস্পতিবার রাতে জাহাঙ্গীর হাওলাদার প্রকৃতির ডাকে ঘরের বাহিরে যান। এরপর আর সে ঘরে ফিরে আসেনি। তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে পাইনি- এমন দাবি স্ত্রী শেফালী বেগমের। শুক্রবার সকালে জাহাঙ্গীর হাওলাদারের মরদেহ তার বাড়ির টয়লেটের সামনে রশি পেঁচানো অবস্থায় পরিবারের লোকজন দেখতে পান।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তার মরহেদ উদ্ধার করে। পরে মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে প্রেরণ করা হয়। এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে দাদন ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলামকে ওই দিন দুপুরে পুলিশ আটক করে। এ ঘটনায় তালতলী থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
নিহতের স্ত্রী শেফালী বেগম বলেন, দাদনের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় গতকাল দাদন ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম আমার ছেলে, স্বামী, পুত্রবধূ ও আমাকে মারধর করেছে। রাতে আমার স্বামী প্রকৃতির ডাকে বাহিরে যান। এরপর আর সে ঘরে ফিরেনি। শুক্রবার সকালে গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় টয়লেটের সামনে আমার স্বামীর মরদেহ দেখতে পাই। আমার স্বামীকে জহিরুল ও তার লোকজন হত্যা করে ফেলে রেখেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
তালতলী থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান মিয়া বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দাদন ব্যবসায়ী জহিরুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
এইচকেআর
