ঢাকা রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

Motobad news

পিরোজপুরে ১৫ বছর ধরে ১৭ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা 

পিরোজপুরে ১৫ বছর ধরে ১৭ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা 
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার নাজিরপুর-বৈঠাকাটা-বানারিপাড়া সড়কের ১৭ কিলোমিটার জায়গার পিচ ও পাথর উঠে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। ফলে সড়কটি প্রায় চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রায়ই ঘটে চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এ সড়ক ব্যবহারকারী কয়েক লাখ মানুষ।


জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে পিরোজপুরে নাজিরপুর-বৈঠাকাটা-বানারিপাড়া সড়কের পিরোজপুর অংশের সাড়ে ১৬ কিলোমিটার সড়ক ছিল সড়ক ও জনপদ (সওজ) এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) যৌথ দায়িত্বাধীন। 

২০১৫ সালের এক পত্রে নাজিরপুর-বৈঠাকাটা-বানারিপাড়া সাড়ে ১৬ কিলোমিটার সড়কটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীনে দেওয়া হয়। পরে ২০১৭ সালে আরেকটি পত্রের মাধ্যমে এলজিইডির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দুই দপ্তর ভিন্ন ভিন্ন চিঠিতে মালিকানা প্রদান করায় সৃষ্টি হয়েছিল দাপ্তরিক জটিলতা। ফলে সড়কটি নির্মাণে কোনো দপ্তরই ঝুঁকি নিচ্ছিল না। তবে  দাপ্তরিক জটিলতা নিরসন করে গত বছরে সড়কটির মালিকানা পায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। 

এরপর প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি নির্মাণের জন্য কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইফতি ইটিসিএল প্রাইভেট লিমিটেড। ২০২৪ সালের জুন মাসে কাজ শুরু এবং ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে ৪টি ধাপে কাজটি শেষ করার কথা। তবে এখনো শুরু হয়নি রাস্তা নির্মাণের কাজ। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি পুননির্মাণ বা মেরামত না হওয়ায় চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে বাধার সৃষ্টি হওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে এসব এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিনই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। সড়কের বেশিরভাগ জায়গায় পিচ-খোয়া উঠে গেছে সৃষ্টি হয়েছে ছোট, বড় গর্তের। বৃষ্টিতে পানি জমা এবং শুকনা মৌসুমে ধুলায় দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায় স্থানীয় মানুষের। 

বৈঠাকাটা ভাসমান বাজার থেকে উপজেলা সদরে প্রতিনিয়ত ছোট বড় শত শত গাড়ি এবং কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে। নাজিরপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের জনগণের নাজিরপুর সদরে আসার রাস্তা এটি। 

রাস্তাটি নদীর পাশ দিয়ে মালবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে কোথাও কোথাও রাস্তা নদীতে বিলীন হওয়ার পথে। সড়কের অবস্থা এতটাই বেহাল যে, প্রতিদিন চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করে এখানকার মানুষ। জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স বা অন্যান্য গাড়ি পাওয়া নিয়েও তৈরি হয় শঙ্কা। দীর্ঘদিন থেকে অবহেলিত গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দ্রুত ঠিক করার দাবি চলাচলকারী জনগণের।


নাজিরপুর উপজেলার কলারদোনিয়া গ্রামের ভ্যানচালক রেজাউল ইসলাম বলেন, বছরের পর বছর রাস্তা খারাপ থাকায় এ রাস্তায় মালামাল নিয়ে ভ্যান চালানো বেশ কষ্টকর। কয়েকদিন পরপর ভ্যান নষ্ট হচ্ছে। ঠিক করতে অতিরিক্ত টাকা খরচ হচ্ছে।


বৈঠাকাটা ভাসমান বাজারের ব্যবসায়ী খবিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, এই সড়ক বেহাল অনেক দিন ধরেই। সড়কের কোথাও খানাখন্দ আবার কোথাও ঢিবির মতো উঁচু-নিচু। সড়কটি একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলে ট্রাক পাওয়া যায় না। ট্রাকচালকরা এ রাস্তায় চালতে চায় না। ট্রাক আনতে হলে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয়।

 

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, রাস্তাটি ১৫ বছর ধরে কাজ হয় না ৫ বছর ধরে খুবই বেহাল দশায় আছে, কিন্তু দেখার কেউ নেই। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে গিয়ে পৌঁছেছে। এ পথ দিয়ে এখন আর যাতায়াত করার কোনো অবস্থা নেই। মানুষ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্সও এ রাস্তায় ঢুকতে চায় না। আমরা খুব কষ্টে দিন পার করছি। 

পিরোজপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী রনজিত দে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকেও যুগ্ম সচিব রাস্তাটি পর্যবেক্ষণ করে গেছেন। আশা করছি খুব দ্রুতই রাস্তাটি মেরামতের কাজ শুরু হবে।
 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন