৭ দিনেও খবর নেয়নি কেউ


পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ফরাজি কান্দা গ্রামের অনেকেই কখনও সরকারি কোনো ত্রাণ পাননি বলে দাবি করেছেন। তাদের দাবি, দেশে অনেক দূর্যোগ-মহামারি হয়েছে কিন্তু কোনো সময়েই সরকারি ত্রাণ সহায়তা আসেনি।
প্রায় একই অভিযোগ টিয়াখালী ইউনিয়নের ১, ২ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বঙ্গবন্ধু কলোনি ও কলাপাড়া পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদেরও। ঝড়ে কাদা-পানিতে নষ্ট চাল, কুড়িয়ে শুকিয়ে হচ্ছে রান্না। কেউ খাচ্ছেন তিনদিন আগে রান্না করা ভাত। আর সেসব চাপা কষ্ট বুকে রেখেই আক্ষেপ করে বলছেন- ঘূর্ণিঝড় রিমালের সাত দিন পেরিয়ে গেলেও খবর নেয়নি কেউ, আসেনি ত্রাণ বা খাদ্য সহায়তা।
শনিবার (১ জুন) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন গ্রামের দু-একটি পরিবার ছাড়া বাকি সবাই সরকারি ত্রাণ বা অন্য সকল ধরনের সুবিধা হতে বঞ্চিত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মিলছে না পর্যাপ্ত খাবার। আর অন্য সময়ে বিভিন্ন বেসকারি প্রতিষ্ঠান খাদ্য সহায়তা নিয়ে এলেও এবার তাও মেলেনি।
ঝড়ের আগের রাতেও বঙ্গবন্ধু কলোনির মো. শাহ আলমের ঘরে চাল ছিল ১২০ কেজি। ঝড়ের দুদিন পর যখন বাড়ি ফিরেছেন, তখন আর সে চাল তিনি পাননি। কাদা-পানিতে একাকার হয়ে সব চাল নষ্ট হয়েছে। তবু যতটা পেরেছেন, কাদা ধুয়ে ২-৩ কেজি বের করে তাই শুকিয়েছেন। এরপর সেই শুকনো চাল রেঁধে খাচ্ছেন। ভাতকে পান্তা বানিয়ে বাসি হলেও পুরো পরিবারসহ খাচ্ছেন তিন-চার দিন ধরে। তিন দিনের সেই বাসি ভাত খেতে খেতেই আক্ষেপ নিয়ে বলেন, এত বড় একটা দূর্যোগ গেলো, অথচ কেউ একটু খাবার নিয়ে এগিয়ে এলো না।
জয় বাংলা পল্লীর সাবিনা খাতুন বলেন, আমরা সবাই এদ্দিন বাজার না করেই চলছি। মেম্বার-চেয়ারম্যান কেউ আসেনি। তারা এসে ঈদে একটু দেখা করে ৫-৭ কেজি চাল দিয়ে যায়। ওই পর্যন্তই।
তিনি বলেন, কলাপাড়া পৌরসভার বর্তমান যিনি মেয়র, তিনি ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন। প্রথমবার এসে ভোট চেয়ে অনেক কথা বলেছিলেন, কিন্তু কিছুই করেননি। তিন মাসের মধ্যে আমাদের রাস্তা করার কথা ছিল, তিন মাস গিয়ে পুরো পাঁচ বছর হয়েছে। আবার ভোটের সময় এসে নতুন করে ওয়াদা দিয়ে গেছেন, আমরা তাকে ভোট দিয়ে ঠিকই ওয়াদা রেখেছি, কিন্তু তিনি আর এমুখো হননি।
বৃদ্ধা আছিয়া খাতুন বলেন, ঈদ-কোরবানিতে এসে কেউ একটু দেখা করে যায়, আর কোনো জিনিসই আমরা সাহায্য পাই না। আমাদের এতো বড় দূর্যোগ, কেউ একটু দেখা করতেও আসেনি। আমাদের কালভার্টটা ভেঙে গিয়েছিল, এতোবার বলে এসেও কিছু হয়নি, পরে আমরাই তা আবার ঠিক করেছি। এখন তো আবার ভাঙছে, তো ঘর ঠিক করবো নাকি কালভার্ট!
তিনি বলেন, সাত দিন ধরে কারও ঘরে চাল নাই, চুলা নাই। একজনের ঘরে ছিল, সেইটা দিয়েই এখন রান্না চলছে সকলের। একটা চুলায় মনে করেন যে হচ্ছে ২৭টি পরিবারের রান্না। আর চাল ডালেরও তো বড্ড অভাব। অনেক সময় বাচ্চাদের কোনরকমে খাইয়ে নিজেদের বেশিরভাগ সময়ই না খেয়ে থাকতে হয়।
ঝড় এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যত মানুষ আছে, তাদের সকলের এখন একটাই অভিযোগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ত্রাণ মাঠ পর্যায়ে পৌঁছায় না যথাযথভাবে।
এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে টিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সুজন মোল্লা বলেন, বন্যা যতদিন চলেছে, ততদিন তাদের শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। পরের দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে খিচুড়ি খাওয়ানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এসেছেন, কিছু খাদ্য সহায়তা দেওয়া আছে। এগুলো উপজেলা পরিষদ থেকে পাস হলে দ্রুতই তালিকা করে তাদের পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী গিয়েছে মাত্র আজ দুদিন! একটু সময় তো লাগবেই। এরপর ৫ তারিখে উপজেলা নির্বাচন। দু-এক দিনের মধ্যে না হলেও নির্বাচনের পর দেওয়া হবে।
আর কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র বিপুল হাওলাদার বলেন, ত্রাণ সহায়তা কিছু দেওয়া হয়েছে এবং আরও বাকি আছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ দিয়ে উদ্বোধন করে গেছেন। আজকে সম্ভব না, কালকে থেকে ত্রাণ দেওয়া হবে।
এইচকেআর
