পরিবারকে দ্বীনের দুর্গ হিসেবে গড়ে তুলুন-হযরত নেছারাবাদী হুজুর


পরিবারকে দ্বীনের দুর্গ হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.)-এর ছাহেবজাদা ও গদ্দিনশীন পীর আমীরুল মুছলিহীন হযরত মাওলানা মুহম্মদ খলীলুর রহমান (নেছারাবাদী হুজুর)।
তিনি বলেন, ‘ইসলামের মূলমন্ত্র কলেমায়ে তাইয়্যেবার শিক্ষণীয় মূল বিষয় তিনটি। তা-হলো তৌহীদ-আদর্শভিত্তিক ঐক্য, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সাম্য ও রসূল (স.)-এর আদর্শ বাস্তবায়ন।
শুধু মুখে কলেমা উচ্চারণ করলেই মুসলমানিত্বের দাবি করা যাবে না বরং দুনিয়ার প্রত্যেক কলেমাঅলা সে যে-ই হোক না কেন, তাঁর তরীকা ও মযহাব, পীর-শায়েখ যে-ই হোন না কেন, তৌহীদী আদর্শের ভিত্তিতে সে আমার ভাই হিসেবে তাঁর সঙ্গে ঐক্যের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
কলেমার এই প্রথম শিক্ষার সঙ্গে-সঙ্গে দ্বিতীয় শিক্ষা:-আল্লাহ তায়ালা যেহেতু‘উখ্রিজাত লিন্নাস’ অর্থাৎ মানবজাতির কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে আমাকে সৃষ্টি করেছেন, সেহেতু দুর্নীতি-দুষ্কৃতি প্রতিরোধ-পূর্বক ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিপূর্ণ সাম্যভিত্তিক আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
তৃতীয়ত শিক্ষা, রসূলে করীম (স.)-এর উম্মত হিসেবে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের নিমিত্ত-লিল্লাহিয়াত, এত্তেবায়ে সুন্নাহ, এক্বামতেদ্বীন, তাবলীগেদ্বীন, আমরু বিল মারূফ নাহী আনিল মুনকার, জিহাদ ফী-সাবীলিল্লাহ, এ‘তেসাম বি হাবলিল্লাহ, এতায়াতে উলিল আমর, এলেম-সোহবত ও যেকের-ফেকের; কুরআন-সুন্নাহর এই ১০টি মৌলিক বিধানকে জীবনের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করলেই মুসলমানিত্বের দাবি করা সম্ভব।
বৃহস্পতিবার বাদ আছর ঐতিহ্যবাহী ঝালকাঠি নেছারাবাদ দরবার শরীফে অনুষ্ঠেয় দুই দিনব্যাপি বার্ষিক ঈছালে ছওয়াব ওয়ায-মাহফিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নেছারাবাদী হুজুর এসব কথা বলেন।
নেছারাবাদী হুজুর বলেন-পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে রাষ্ট্র; গোটা এই প্রক্রিয়ার মূল চালিকাশক্তিই হচ্ছে পরিবার। একটি পরিবার যখন ধ্যানে-জ্ঞানে কলেমায়ে তাইয়্যেবার এই ত্রিশক্তি ধারণ করতে সক্ষম হয়, তখন মরদুদ শয়তান থেকে শুরু করে নফ্সে-আম্মারা কিংবা কোন অপশক্তিই তাদের বেঈমান বানাতে পারে না।
দুনিয়ার সব মানুষ নাস্তিক্যবাদী চক্রান্তে বেঈমানে পরিণত হলেও স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই ঐ পরিবারবর্গকে ঈমানের মোহর অঙ্কিত করে রাখবেন এবং তাদেরকে হায়াতে তাইয়্যেবাসহ মঙ্গলময় জীবনের অধিকারী করবেন। এর অসংখ্য উদাহরণ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে আমাদের চারো পাশে।
আমরা দ্বীনের জন্য যাদের শ্রদ্ধা করি-সেই সল্ফেসালেহীন-আওলিয়ায়ে কেরামের পারিবারিক জীবনের দিকে তাকালে আমরা কী দেখতে পাই? তারা বংশ পরম্পরায় তাদের সন্তান ও আপনজনদের কী-ভাবে গড়ে ছিলেন যে, আজও তাদের ছোঁয়ায়, তাদের অনুসৃত পথে আমরা অবিকৃত ইসলামের স্বাদ গ্রহণ করছি। দুনিয়ায় অসংখ্য দেশ রয়েছে-যেখানে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ পড়ে আছে, নামাযী নেই; মক্তব-খানকাগুলো পরিণত হয়েছে আস্তাকুঁড়ে।
ধর্মনিরাপেক্ষতার মস্তিষ্কে নাস্তিক্যবাদ সওয়ার হয়ে পৃথিবীর দিকে দিকে ধর্মদ্রোহিতা-খোদদ্রোহিতার যে বীজ বুনে চলেছে-কুফরির সমুদ্রমাঝে জেগে ওঠা তৌহীদের দ্বীপ-এই বাংলাদেশকে নিয়েও তাদের চক্রান্তের শেষ নেই।
কী অর্থনীতি, কী রাষ্ট্রনীতি, কী সমাজনীতি, কী শিক্ষানীতি-সর্বত্রই তারা সরিষার ভূতের মতো বিরাজ করছে মুখোশের অন্তরালে। তাদের টার্গেট পরিবার, মাধ্যম স্কুল-মাদরাসায় পড়ুয়া শিশুকিশোর।
কোমল শিক্ষার্থীদের মধ্যে আধুনিক শিক্ষার নামে বস্তুবাদী ভোগ-বেলল্লাপনা শেখানোর মাধ্যমে পরিবার-প্রথা ভেঙে দিয়েই তারা ঐসমস্ত রাষ্ট্র থেকে ইসলামের নাম-নিশানা মুছে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলো।
এদেশেও এখন পর্যন্ত যতোটুকু ইসলাম আছে তাও রয়েছে ঐসব পরিবারের জন্যই। সুতরাং স্কুল-মাদরাসায় নাস্তিক্যবাদী ষড়যন্ত্রে যাই শেখানো হোক-আপনার পরিবারকে দ্বীনের দুর্গ হিসেবে গড়ে তুলুন, কলেমায়ে তাইয়্যেবার ত্রিশিক্ষাকে গলার তাবীয বানিয়ে পরিবারের ঐতিহ্য রক্ষা করুন! খোদাদ্রোহী যালেমরা এই ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের দ্বারা অবশ্যই পরাভূত হবে ইনশাআল্লাহ!’
সন্ধ্যায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে প্রথম দিনের মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে নসীহত পেশ করেন ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা গাজী শহিদুল ইসলাম, উপাধ্যাক্ষ প্রখ্যাত মুহাদ্দেস হযরত মাওলানা আব্দুল কাদির আল মাদানী, শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা মনিরুজ্জামান, শায়খে-সিলেটি মুফতী আবু ইয়াহইয়া মুহাম্মদ যাকারিয়াসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত বক্তা ও পীর ছাহেবান। আগামী শনিবার বাদ-ফজর হযরত নেছারাবাদী পীর ছাহেব হুজুরের সমাপনী বয়ান ও আখেরী মুনাজাতের মধ্যে দিয়ে সমাপ্ত হবে দক্ষিণ বাংলার সবচেয়ে প্রতীক্ষিত ঐতিহ্যবাহী এ মাহফিল।
এইচকেআর
