ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news

ঝালকাঠিতে স্কুল শিক্ষিকাকে হত্যাচেষ্টা মামলা তুলে নিতে হুমকি

ঝালকাঠিতে স্কুল শিক্ষিকাকে হত্যাচেষ্টা মামলা তুলে নিতে হুমকি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

ঝালকাঠি শাহী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রুনা খানমকে আদালত থেকে হত্যাচেষ্টা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে মামলার আসামি আতিকুল ইসলাম ওরফে স্বপনের (৩৮) বিরুদ্ধে। 

আতিক ও তাঁর সহযোগিদের হুমকিতে দুটি নাবালক শিশু সন্তান নিয়ে রুনা খানম নিরাপত্তাহীনতায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। এ ব্যাপারে ঝালকাঠি থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি করা হলেও হুমকি দাতা আতিককে আটক করেনি পুলিশ। 

জানা যায়, গত ৪ এপ্রিল সকাল ১০ টার দিকে শহরের রোনাল্ডসে রোডের নিজ বাসা থেকে বাহের রোডে শাহী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে কালিবাড়ির সামনে রুনা খানমকে (৩০) পেটে ও বুকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুড়িকাঘাত করে তাঁর সাবেক স্বামী আতিকুল ইসলাম। রক্তাক্ত জখম হয়ে শিক্ষিকা রুনা খানম রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। 

স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

ঘটনার সময় সাধনার মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের এটিএসআই শাখাওয়াত হোসেন স্থানীয়দের সহযোগিতায় রক্তমাখা ছুড়িসহ আতিকুল ইসলামকে আটক করে থানায় সোর্পদ করা হয়। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় আহত রুনা খানমের বড় বোন রোজি খানম (৩৮) বাদী হয়ে আতিকুল ইসলামকে একমাত্র আসামি করে ঝালকাঠি থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করে। 

এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৫ এপ্রিল আতিকুল ইসলামকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। প্রায় চারমাস জেল হাজতে থাকার পর হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভ করে আতিক। 

এরই মধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঝালকাঠি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ রানা গত ৩০ জুন আতিককে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পারভেজ শাহরিয়ার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য তারিখ নির্ধারণ করেন। 

সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ পরার পর থেকেই আতিক এবং তাঁর সহযোগিরা স্কুলে যাওয়া আসার পথে রুনা খানমকে নানা রকম হুমকি এবং রাস্তাঘাটে অনুসরণ করা শুরু করে। 

রুনা খানম অভিযোগ করে বলেন, জামিন পাওয়ার পর থেকে আতিক একাধিকবার আমাকে সরাসরি মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দিয়েছে। 

আমার বাসায় লোক পাঠিয়ে আমার শিশু দুই সন্তানকে অপহরণের হুমকি দিয়ে বলেছে, একবারতো জানে বেচেঁ গেছো, এবার আর জানে বাচঁতে পরবিনা। 
রুনা খানম আরও বলেন, আতিকের ভয়ে শিশু সন্তানদের নিয়ে বাসার বাইরে বের হই না, শুধু ভয়ে ভয়ে স্কুলে যাই। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন বাতিলের আবেদন করেছি কোন লাভ হয়নি। 

আতিক হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছে তাই ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাঁর জামিন বাতিল করেনি। সর্বশেষ আতিক গত ২৪ নভেম্বর রুনা খানমকে স্কুলে যাওয়ার পথে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি প্রদান করে। ওই দিনই রুনা খানম ঝালকাঠি সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। 

উল্লেখ্য, গত ২০২১ সালের ১৮ জুলাই আতিক ও রুনার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। পারিবারিক কলহের কারনে পরের বছর ২০২২ সালের ১৫ জুন বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। রুনার আগের ঘরের দুটি সন্তান আছে। আতিক পুনরায় রুনাকে নিয়ে  সংসার করতে চাইলেও রুনা তা প্রত্যাখান করে। 

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যার জন্য রুনার ওপর হামলা চালায় আতিক। অভিযুক্ত আতিকুল ইসলাম স্বপন বলেন, জামিন পেয়ে আমি তাকে (রুনাকে) কোন হুমকি দেইনি, তবে লোক মারফত সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের জন্য অনুরোধ করেছি, এটা অপরাধের কিছু নয়। 

ঝালকাঠি সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান ইয়েন বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে আতিকুল ইসলাম আমাদের সমিতির সদস্য রুনা খানমকে কুপিয়ে হত্যার চেস্টা করেছে। 

আমরা আতিকের কঠোর বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। এখন আবার হুমকি দিচ্ছে। প্রশাসন যদি ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে আমরা আবার রাস্তায় আন্দোলন করবো। 

রুনা খানমের জিডির তদন্ত কর্মকর্তা ঝালকাঠি থানার এসআই সাখাওয়াত হোসেন বলেন, জিডির তদন্তের অনুমতি চেয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেছি। এখনও অনুমতি পাইনি।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন