অপরাজিতা ইসরাত জাহান সোনালীর সাফল্য গাঁথা


এক সময়ের তরুণী এখন অপ্রতিরোধ্য নারী। হয়েছেন অপারাজিতা। নানা ঘাতপ্রতিঘাত পেরিয়ে হয়েছেন জনপ্রতিনিধি। ব্যর্থতার দুয়ারে তালা মেরে নিজেকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে তুলে ধরেছেন।
একের পর এক সফলতায় নারীদের মাঝে তিনি দৃষ্টান্ত। সফল এই নারী হচ্ছেন ঝালকাঠি শহরের সরকারি মহিলা কলেজ এলাকার বাসিন্দা ইসরাত জাহান সোনালী।
তিনি বর্তমানে সদর উপজেলা পরিষদের ভাইসচেয়ারম্যান। এছাড়াও তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এবং ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের রাজনৈতিক ফেলো। তাকে দেখে অনেক নারীই এখন রাজনীতির মাঠে প্রবেশ করেছেন, হয়েছেন উদ্যোক্তা।
করোনাকালে তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। দিয়েছেন বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা। তাঁর সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড নজর কেড়েছে জেলাবাসীর।
জানা যায়, ইসরাত জাহান সোনালী সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় রেড ক্রিসেন্টের যুব প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি গার্লস গাইড এসোসিয়েশনের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত হন।
স্কুল জীবন থেকে অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর প্রবল উদ্দিপনায় নিজেকে লিডারসিপের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁর বাবা মোদাচ্ছের হাওলাদার ছিলেন ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁর কাছ থেকে অনুপ্রানিত হয়ে ইসরাত জাহান সোনালী নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
তাঁর নেতৃত্বে মহিলা কলেজে প্রথম ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ধারাবাহিকভাবে তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ফলে ২০০১ সালে ঝালকাঠি পৌর মহিলা লীগের আহ্বায়ক কমিটির দায়িত্ব পায়।
২০০৬ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত জেলা মহিলালীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সাল থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং ২০১৯ সাল থেকে ঝালকাঠি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর পদ লাভ করেন।
সেই থেকে তিনিই এ পদে রয়েছেন। লেখাপড়া ও রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে থাকেন এই নারীনেত্রী।
এলাকার মানুষের ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০০৯ সালে ঝালকাঠি সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নারী ভাইসচেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয় লাভ করেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে উপজেলা পরিষদে ভাইসচেয়ারম্যান পদে আছেন।
২০১১ সাল থেকে অপরাজিতা নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। প্রকল্প থেকে নেতৃত্ব বিকাশ এবং দক্ষতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এলাকার নারী নেত্রীদের সঙ্গে নিয়ে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন।
এতে করে দিনদিন তাঁর জনপ্রিয়তা এবং বিভিন্ন পর্যায়ে পরিচিতি বাড়তে থাকে। ধানসিঁড়ি বহুমূখী সমবায় সমিতি গড়ার মধ্য দিয়ে তিনি উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখেন। যার ফলশ্রুতিতে তিনি সমন্বিত উদ্যোগে টেইলারিং, ক্যাটারিং ও ফুডসাপ্লাই বিষয়ে অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করেন, যা এখনো চলমান রয়েছে।
এলাকায় নানা ধরনের সামাজিক কাজে অবদান রাখার মধ্য দিয়ে উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন কমিটির সঙ্গে তিনি যুক্ত হয়েছেন। নিরলসভাবে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
যে সকল কমিটিতে তিনি যুক্ত হয়েছেন, ত হচ্ছে- বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা কেন্দ্রীয় পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের সদস্য, বিভাগীয় অপরাজিতা নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক, জেলা অপরাজিতা নেটওয়ার্কের সভাপতি, জেলা নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ঝালকাঠি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক, মহিলা ক্রিড়া সংস্থা ঝালকাঠি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক, ধানসিঁড়ি বহুমূখি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় অপরাজিতা নেটওয়ার্কের সদস্য। বর্তমানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী প্রচার সেলের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ইসরাত জাহান সোনালীর পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় কাজে নিজেকে সব সময় নিয়োজিত রাখার স্বপ্ন লালন করেন। সেবা মূলক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত থেকে মানুষের সেবক হয়ে অপরাজিতা সোনালী পরিচয়ে এগিয়ে যেতে চান।
ইসরাত জাহান সোনালী বলেন, আমি মনে করি পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরকেও ক্ষমতায়িত হতে হবে। নেতৃত্ব দানে নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে। নতুবা সমতা ও মূল্যবোধের জায়গায় নারীরা আজীবন পিছিয়ে পড়বে।
আজকে অনেক কষ্ট করে আমি নিজেকে তৈরি করেছি। আজ মানুষ আমাকে ভালোবাসে। আমি যে কাজ করি মানুষ আমাকে সমর্থন করে। বভিষ্যতেও ভালো কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের হৃদয়ে আস্থা অর্জন করতে চাই।
এইচকেআর
