রাজাপুরে সাতুরিয়া এম এম উচ্চ বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান


ঝালকাঠির রাজাপুরে শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হকের প্রতিষ্ঠিত সাতুরিয়া মেহেরুন্নেছা মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। পলেস্তরা খসে পড়ছে শিক্ষার্থীদের মাথায়। ভবনের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। এতে উৎকণ্ঠায় শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করছে শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, সাতুরিয়া গ্রামে শের-ই বাংলা এ কে ফজলুল হক তাঁর খালার নামে ১৯৪১ সালে সাতুরিয়া মেহেরুন্নেছা মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত করেন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই গৌরবের সঙ্গে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে এলাকার মানুষের মাঝে। বিদ্যালয়ে তিনটি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে একটি একতলা ছাদ বিশিষ্ট যা ১৯৬৫ সালে নির্মিত হয়। অপরটি টিনসেট সেমিপাকা এবং একটি দোতলা ভবন যা ২০০২ সালে নির্মিত হয়।
বিদ্যালয়ের দুইটি কক্ষে অফিস এবং বাকি কক্ষ গুলোতে ঝুঁকি নিয়েই সাড়ে চারশত শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যত্রুম চালিয়ে যাচ্ছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নির্মাণের পরে ভবনগুলোর টুকিটাকি মেরামোত হলেও বর্তমানে ভবনগুলো একেবারে নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
ভবনের দেয়াল ও ছাদের পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে শিক্ষার্থীদের মাথায়। ছাদ খসে পড়ে প্রায়ই আহত হয় শিক্ষার্থীরা। ভবনের পিলার ও সিলিংয়ে বিশাল বিশাল ফাটল দেখা দিয়েছে। পলেস্তারার ভেতরে থাকা লোহার রডগুলো বের হয়ে গেছে। বর্ষাকালে ছাদ থেকে চুইয়ে পানি পরে। যে কোনো মুহুর্তে ধসে পড়তে পারে বিদ্যালয়ের ভবনগুলো। ঘটতে পারে বড়ো ধরনের দুর্ঘটনা।
বিদ্যালয়ে অন্য কোনো ভবন না থাকায় বাধ্য হয়েই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যেই পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা সব সময় আতঙ্কে থাকেন। ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। অবিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। জেলার ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির সংখ্যাও দিন দিন কমে যাচ্ছে।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুরাইয়া আক্তার জানায়, ভবনের দেয়াল ও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে প্রায়ই আমরা আহত হই। ভবনের পিলার ও সিলিংয়ে বিশাল বিশাল ফাটল দেখা দিয়েছে। বর্ষাকালে ছাদ থেকে পানি পরে। ভবনগুলো পরিত্যাক্ত ঘোষণার পাশাপাশি একটি নতুন ভবনের দাবি জানাচ্ছি।
অভিভাভক সাব্বির আহমেদ রাজীব বলেন, সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে সব সময়ই আতঙ্কে থাকি আমরা। ভবনের ছাদ খসে পড়ে প্রায়ই আমাদের সন্তানেরা আহত হয়। স্যারেরা যখন শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভবনের দ্বিতীয় তলাতে যায় তখন পুরো ভবন কাঁপতে থাকে। কখন যেনো বড়ো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রিনা আক্তার বলেন, আমার বিদ্যালয়ে সাড়ে চারশত শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়ের ভবন পুরাতন ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারনে আমি তাদের ঠিকমত পাঠদান দিতে পারছি না। প্রায়ই ছাদ ভেঙে পড়ে তাই শিক্ষার্থীরা সব সময় আতঙ্কে থাকে। শিক্ষকদের ক্লাসে পাঠালো তারা বলে ম্যাডাম কোন যায়গায় আমি ক্লাস করাবো। আমি তাদের জায়গা দিতে পারছি না। শিক্ষা বান্ধব সরকার জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার আকুল আবেদন যেনো একটি নতুন ভবন দেওয়া হয়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তফা আলম বলেন, শের-ই বাংলা এ. কে ফজলুল হক প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী সাতুরিয়া মেহেরুন্নেছা মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়টি আমি পরিদর্শন করে দেখেছি ভবনটির অবস্থা অত্যান্ত নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো মুহুর্তে এটি ধসে পরতে পারে। নতুন করে ভবনটি নির্মাণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। আমরা প্রত্যাশা করি খুব শিগগিরই এই বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
এইচকেআর
