ঢাকা বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

Motobad news
শিরোনাম
  • ‘মব জাস্টিস’ মানবতার শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে : তারেক রহমান বৃহস্পতিবার শুরু এইচএসসি পরীক্ষা, অংশ নিচ্ছে ১২ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী হাসিনার সেই ‘৪০০ কোটি টাকার’ পিয়নের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট-সঞ্চয়পত্র ফ্রিজ একজন ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, একমত বিএনপি পৃথিবীর সর্বনাশের জন্য আমরা আসামি : প্রধান উপদেষ্টা আওয়ামী লীগ আস্তে আস্তে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই: ফয়জুল করীম আইএমএফের অর্থছাড়: ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো রিজার্ভ বাকেরগঞ্জের কারখানা নদীতে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, আতঙ্কে গ্রাম ছাড়চ্ছেন মানুষ পন্টুনের ধাক্কায় ট্রলার থেকে ছিটকে নদীতে, জেলে নিখোঁজ
  • আকলিমা নাসিমার তিনমাসের পিঠার জীবন

    আকলিমা নাসিমার তিনমাসের পিঠার জীবন
    গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

    বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতির একটা বিশেষ অংশ জুড়ে রয়েছে পিঠা পার্বণ। শীতের আগমনেই পিঠার সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে গ্রামের মেঠো পথ থেকে শহরের কংক্রিটে। অগ্রহায়ণ থেকে মাঘ, পুরো তিনমাসই বাংলার পথে প্রান্তরে পিঠার মৌ মৌ গন্ধে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে।

    কিছুকাল আগেও পিঠা পার্বণ ঘরোয়া আয়োজনে সীমাবদ্ধ ছিলো। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে পিঠাও যেন আলোর মুখ দেখতে শিখে গেছে। গলির মোড়ে মোড়ে নেপথ্যের কারিগররা পিঠাকে ক্রেতার হাতে তুলে দিচ্ছেন নামমাত্র মূল্যে। স্বল্পমূল্যে স্বল্পায়ু নিয়েই  চলছে অমৃত বিনিময়। তবে নেপথ্যের কারিগর এসব পিঠা বিক্রেতাদেরও যেন একটা সুসময় কাটে পুরো শীতের সময় জুড়ে।

    উপকূলীয় জেলা বরগুনার ৬ নং বুড়িরচর ইউনিয়নের ছোট লবনগোলা গ্রামের বাসিন্দা মোসম্মৎ আকলিমা বেগম। গৃহকর্তা আলম খাঁ রিক্সা চালিয়ে কোনমতে সংসার চালনোর ব্যবস্থা করলেও পরিবারের বাড়তি আয়ের মাধ্যম হিসেবে আকলিমা বেগম শীতের তিনমাস জুড়ে চেয়ারম্যান বাজারে পিঠা বিক্রি করেন।  খেজুরের গুড়ের ভাপা, হরেক রকমের ভর্তা দিয়ে চিতই, পাটিসাপটা পিঠা সহ ডিমসেদ্ধ, ছোলা ও ঝালমুড়ির আয়োজন থাকে তাঁর দোকানে। এসব পিঠা তৈরির মূল উপকরণ  চালের গুড়ো,  খাঁটি খেজুর গুড় ও নারকেল। 

    গত ১০ বছর ধরে আকলিমা বেগম একই স্থানে পিঠা বিক্রি করেন। রাস্তার পাশে মাসিক ৩০০ টাকা জমি ভাড়া দিয়ে নিজের ওঠানো ঘরে দোকানের পসরা সাজিয়েছেন তিনি। ষাটোর্ধ বয়সেও ক্লান্তি নেই তার, পিঠা বিক্রিতেই মিলছে অপার আনন্দ। বেচাকেনা সম্পর্কে জানতে চাইলে আকলিমা বলেন, " আগের চাইতে আল্লাহর রহমতে বেচাকেনা ভালো। করোনা সময় প্রায় না খাইয়া মরার উপক্রম হইছিলো তয় এ্যাহন অনেক বেচাকেনা হয়।" ভূমিহীন আকলিমা আরো জানান, সরকার কর্তৃক খাস জমি বা একটা ঘরের ব্যবস্হা করা হলে তাঁর ব্যবসায় প্রসার ঘটানো যেতো।

    আকলিমা বেগমের বটবৃক্ষ আলম খাঁ পাশে থাকলেও বিধবা নাসিমা বেগম একাই ধরেছেন সংসারের হাল। মৃত হামিদ মিয়ার স্মৃতি আর দুই সন্তানকে কোলে আগলে বরগুনা সদরের স্টাফ কোয়ার্টারের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন বরগুনা পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মী নাসিমা বেগম। 

    পৌরসভায় মাস্টাররোলে চাকুরির পাশাপাশি তিনি  বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্স সংলগ্ন একটি স্থানে গত ২০ বছর ধরে পিঠা বিক্রি করেন। সংসারের বাড়তি উপার্জনের জন্যই অগ্রহায়ণ -পৌষ- মাঘ এই তিম মাস বাহারি পিঠা বিক্রি করেন। শুটকি,চিংড়ি, ধনে পাতা বা কাঁচামরিচের ভর্তাসহ একটু চিতা পিঠার মূল্য পাঁচ টাকা এবং খেজুরের গুড়ের একটি ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠার মূল্য দশ টাকা। নাসিমা জানান, বস্তি উচ্ছেদ অভিযানে ঘর হারিয়ে তিনি এখন হাড়ভাঙা পরিশ্রম দিয়েও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন, তদুপরি পিঠা বিক্রির তিনমাস কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। 

    শীতের আগমন থেকে শেষ এই তিনমাসে পাঁচ-দশ অঙ্কে কেটে যায় আকলিমা-নাসিমার পিঠার জীবন। উপকূলীয় জেলা বরগুনার আকলিমা - নাসিমার মতো হাজারো গৃহিনী রয়েছেন বাংলার ঘরে ঘরে যারা শীত এলেই বাড়তি উপার্জন উৎস হিসেবে পিঠা বিক্রি করেন।

    পিঠা বিক্রি একদিকে যেমন একটি উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে অপরদিকে  দুঃখ দুর্দশাগ্রস্ত মানুষগুলো ক্ষণিকের জন্য হলেও মুক্তি দেয়।

    আবহমান বাংলার সংস্কৃতিকে জীবন্ত করে রাখতে হলে এসব পিঠা বিক্রেতাদের উৎসাহিত করা প্রয়োজন। শীতের সময়ে পিঠার আমেজ বেঁচে থাকলে আকলিমা-নাসিমার মুখের হাসিও বেঁচে থাকবে যুগযুগান্তর ধরে। পিঠার মৌ মেখে বাংলার সংস্কৃতি,  বাংলার রূপ রস ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বদরবারে। 
     


    জিয়াদ মাহমুদ/ এইচকেআর
    গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ