পাচারের সময় সরকারি কৃষি যন্ত্র জব্দ


বরগুনার পাথরঘাটায় ট্রাকে করে ৮টি ধান চাষের সিডার ও ৬টি পাওয়ার টিলার রাতের আধারে পাচারের সময় জব্দ করে স্থানীয়রা। পরে সেগুলো উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবিরের মাধ্যমে পাথরঘাটা থানা পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয়।
রোববার (১৮ ডিসেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাঁঠালতলী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম। জব্দ করা যন্ত্রগুলো কৃষি সম্প্রসারণের লক্ষে ভর্তুকি দিয়ে বিতরণের জন্য বলে মনে করছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিশির কুমার বড়াল।
পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, ১৫ ডিসেম্বর রাত সাড়ে নয়টার দিকে পাথরঘাটা-ঢাকা মহাসড়কের কাঁঠালতলী ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা থেকে এগুলো জব্দ করে পুলিশ হেফাজতে দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যান্ত্রিক কৃষি পদ্ধতি চালুর লক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে এক লাখ চল্লিশ হাজার টাকা ভর্তুকি দিয়ে কৃষকের কাছ থেকে এক লাখ আট হাজার টাকার বিনিময়ে পাথরঘাটা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে ১১৪টি পাওয়ার টিলার ও সিডার মেশিন বিতরণ করা হয়।
কাঁঠালতলী ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা আবদুল জলিল ডিলার জানান, ১৫ ডিসেম্বর রাতে স্থানীয়রা সরকারের ভর্তুকি দেওয়া কৃষি যান্ত্রিক মেশিন ট্রাকে করে পাচার হচ্ছে দেখে স্থানীয়রা জব্দ করে ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে থানা পুলিশের হেফাজতে দিয়েছে। এর আগেও বেশ কয়েকবার এ এলাকা থেকে ট্রাক ভরে কৃষি পণ্য পাচার হয়েছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, কাঁঠালতলী এলাকার প্রিন্স, আব্দুস সোবহান ও তার ভাই সাত্তারসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী গ্রাম থেকে ভর্তুকি দেওয়া কৃষি যন্ত্র সংগ্রহ করে যশোর-খুলনা এলাকায় বিক্রি করেন।
স্থানীয় গ্রাম পুলিশ মনোরঞ্জন জানান, সরকারের দেওয়া কৃষি মালামালগুলো এলাকার কৃষকরা পান না। কৃষি অফিসের মাধ্যমে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এগুলো কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, পাথরঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিশির কুমার বড়াল ও অফিসের লোকজন এর সঙ্গে জড়িত আছেন। অফিসের লোকজন ম্যানেজ করেই প্রভাবশালী লোকজন সরকারের ভর্তুকি দেওয়া মালামাল কিনে তা মোটা অংকে বিক্রি করে পাচার করে দিচ্ছেন।
সরকারি মালামাল অবৈধভাবে কেনার বিষয়ে অভিযুক্ত সাত্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতারা প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।
আরেক অভিযুক্ত সোবহান জানান, তাঁর ভাই সত্তার এ পণ্যগুলো এলাকা থেকে কিনেছেন। পরে সেগুলো বিক্রি ও ভাড়া দেয়ার জন্য অন্য এলাকায় পাঠানো হচ্ছিল। তবে এর কোনো বৈধতা আছে কিনা জানতে চাইলে সোবহানের ছেলে ইসমাইল সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন।
পাথরঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিশির কুমার বড়াল জানান, ভর্তুকি দিয়ে বিতরণ করা কৃষি যান্ত্রিক মেশিন দুই বছরের আগে বিক্রি করার অনুমোদন নেই। এছাড়াও কেউ নিয়ে ভাড়ায় খাটালেও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অনুমোদন নিতে হবে।
তবে জব্দ হওয়া মালামালগুলো কাদের- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। তদন্তের পর বিষয়টি জানা যাবে। যাচাই-বাছাই ও বিতরণে কোনো অনিয়ম হয়নি বলেও জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।
এইচকেআর
