জ্যান্ত সাপ-ব্যাঙ-কেঁচো সবই খান ‘ডিসকভারি আকরাম’


জ্যান্ত সাপ, ব্যাঙ, কেঁচো থেকে শুরু করে ইঁদুর, তেলাপোকা, শামুক, কাঁকড়া, কুঁচিয়া, কাঁচা—কী খান না পাবনার কাঠমিস্ত্রি আকরাম প্রামাণিক! বিদেশি টিভি চ্যানেল ‘ডিসকভারি’ দেখে তাজা এসব প্রাণী খাওয়াতে আসক্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। এজন্য স্থানীয়রা তার নাম দিয়েছেন ‘ডিসকভারি আকরাম’। তবে আকরাম ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত’ বলে মনে করছেন অনেকে। তার মানসিক চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন তারা।
আকরাম প্রামাণিক পাবনা সদর উপজেলার ঘোড়াদহ গ্রামের মৃত জুব্বার প্রামাণিকের ছেলে। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভাইরাল হওয়ার নেশায় জ্যান্ত সাপ, কেঁচো, বিচ্ছু, ব্যাঙসহ বিভিন্ন প্রাণী ও কীটপতঙ্গ খেয়ে চলেছেন আকরাম প্রামাণিক। ডিসকভারি চ্যানেলের বিয়ার গ্রিলসের মতো বিশ্বে পরিচিতি পাওয়ার আশায় দর্শনার্থীদের নিয়মিত এসব খেয়ে দেখান আকরাম।
গত ৮-১০ বছর ধরে পোকামাকড় খেয়ে চলেছেন আকরাম। প্রথমে টিভি চ্যানেল দেখে কৌতূহলে ছোট খাট পোকামাকড় খেতেন। ধীরে ধীরে তার আসক্তি বেড়ে যায়। পোকামাকড় খেয়ে বিশ্বে পরিচিত হওয়ার নেশায় পড়ে যান। পারিবারিক বাধা-বিপত্তি তাকে এ বিপজ্জনক পথ থেকে সরাতে পারেনি। এখন সাপ- বিচ্ছু, কুঁচিয়া, কেঁচো, ব্যাঙ খাওয়া শুরু করেছেন। পেশাগত কাজেও তার অনীহা এসে গেছে।
স্থানীয় লোকজন ও তার সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০২ সালের দিকে ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করার সময় এসব ইতর প্রাণী খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলেন আকরাম। পথে হেঁটে যেতে যেতে ঝিঁঝি পোকা পেলে খেয়ে ফেলতেন। কেঁচো দেখলেও চিবিয়ে খেতেন। এখন তার কীটপতঙ্গ খাওয়ার সংখ্যা বেড়ে চলেছে। গ্রামের বাড়ি পাবনার ভাড়ারায় পদ্মা পাড়ে গিয়ে কাঁচা মাছ খেয়ে লোকজনকে আনন্দ দেন। লোকজনকে আনন্দ দেওয়ার জন্য কখনো বাজি ধরেও তিনি কুঁচিয়া, ব্যাঙ, সাপ খেয়ে দেখান।
স্থানীয় বাসিন্দা মামুন হোসেন, জাকারিয়া, শফিক, শাহীন ও আলমগীর হোসেন জাগো নিউজকে জানান, ‘ডিসকভারি আকরামকে’ তারা কাঁচা মাছ থেকে শুরু করে ব্যাঙ, ইঁদুর, কুঁচিয়া, সাপ, কাঁকড়া, গোবরে পোকা খেতে দেখেছেন। শুধু তাই নয়, ছিঁড়ে খান যেকোনো গাছের পাতা। বিষয়টি তাদের কাছে বিস্ময়কর মনে হয়। কারণ এসব কীটপতঙ্গ খেয়েও তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছেন।
ডিসকভারি আকরামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়ির উঠানে এলাকার মানুষের ভিড়। উঠানে রাখা ইঁদুর ধরার ফাঁদে জ্যান্ত ইঁদুর, ব্যাঙ, কুঁচিয়া, সাপ, তেলাপোকা, কাঁকড়া, কেঁচো ও সাপ। তিনি অবলীয়ায় সেগুলো খেয়ে বলছিলেন ‘খুব স্বাদ’। স্বাদ বাড়ানোর জন্য তিনি কাঁকড়ার সঙ্গে মুড়ি মিশিয়ে খেলেন। তার খাওয়ার দৃশ্য থেকে উপস্থিত লোকজন অবাক হন।
কথা হয় আকরাম প্রামাণিকের সঙ্গে। তিনি জানান, স্যাটেলাইট চ্যানেল ডিসকভারি দেখে তার পোকামাকড় খাওয়ার ইচ্ছা জাগে। সেই থেকে একের পর এক পোকামাকড় ধরে অবলীলায় খেতে থাকেন। এখন তিনি সাপ, ব্যাঙ, ইঁদুর, তেলাপোকাসহ বিভিন্ন পোকামাকড় খেতে পারেন। এতে তার শারীরিক কোনো সমস্যা হয় না।
আকরামের স্ত্রী মুর্শিদা খাতুন জানান, তাদের ৩০ বছরের সংসার। দুটো মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। আরও দুই মেয়ে রয়েছে। ২০-২২ বছর আগে তার স্বামীর এই নেশায় ধরে। আগে ঘৃণা লাগলেও স্বামীর পছন্দের কারণে এখন আর খারাপ লাগে না। স্বামীর পছন্দ তাই তিনিও পছন্দ করেন।
ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খান গনমাধ্যমকে বলেন, আকরাম প্রামাণিক যেভাবে নির্বিচারে সব খাচ্ছেন, তা একেবারেই পাগলামি। তার দ্রুত মানসিক চিকিৎসা করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আকসাদ আল মাসুর আনন বলেন, ভাইরাল হওয়ার জন্য আকরাম যা করছেন তা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিষাক্ত প্রাণী কাঁচা খেয়ে তিনি রোগাক্রান্ত হতে পারেন।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. ওমর ফারুক মীর বলেন, আকরাম প্রামাণিক যা খেয়ে থাকেন তার সবই খাদ্য। পৃথিবীর অনেকেই এসব খেয়ে থাকেন। তবে আকরাম এগুলো কাঁচা খেয়ে থাকেন। তবে এসবের মধ্যে বিষাক্ত অংশও থাকে। যদি বিষাক্ত অংশ না ফেলেন তাহলে তিনি বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন।
এইচকেআর
