ঢাকা শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

Motobad news

সেতু না বানিয়ে টাকা লোপাট

সেতু না বানিয়ে টাকা লোপাট
বরগুনার তালতলী উপজেলার ঝাড়াখালী গ্রামের আমজেদ বয়াতির বাড়ির সামনে লোহার সেতু তৈরি না করায় গ্রামবাসী একটি বাঁধ নির্মাণ করেছে।
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বরগুনার তালতলী উপজেলার ঝাড়াখালী গ্রামের আমজেদ বয়াতির বাড়ির সামনে লোহার সেতু তৈরি না করায় গ্রামবাসী একটি বাঁধ নির্মাণ করেছে। 

সেতু না বানিয়ে প্রকল্পের তিন লাখ ৯০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। বরগুনার তালতলী উপজেলায় তিন অর্থবছর আগের এই ঘটনা সম্প্রতি জানাজানি হয়েছে। এর নেপথ্যে রয়েছেন তালতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল আবেদীন মিঠু।

উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় একটি প্যাকেজে টয়লেটে, টিউবয়েল ও লোহার সেতুর জন্য ছয় লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।


এই বরাদ্দ থেকে উত্তর ঝাড়াখালী গ্রামের আমজেদ বয়াতির বাড়ির সামনে সেতু নির্মাণ করার জন্য তিন লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। বরাদ্দে একই এলাকার একটি পুরনো লোহার সেতুর মালপত্র সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ওই সময় নির্মাণকাজের জন্য দরপত্র ডাকা হলে বরগুনার এক অজ্ঞাতপরিচয় ঠিকাদার কার্যাদেশ পায়। সেই ঠিকাদারের কাছ থেকে তালতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল আবেদীন মিঠু ও তাঁর ব্যবসায়ী অংশীদার সোহেল কাজটি চুক্তিতে নেন।  

এরপর নিয়ম অনুসারে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ওই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার কথা। একই প্যাকেজে থাকা টয়লেট ও টিউবয়েল নির্মাণ করা হয়। এদিকে লোহার সেতু নির্মাণ না করে ওই সময় (জুন মাসের শেষে) পুরো প্যাকেজের টাকা উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) অফিসের সঙ্গে যোগসাজশ করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তুলে নেয়।

সম্প্রতি এই খবর জানাজানি হওয়ার পর এই প্রতিবেদক সরেজমিনে ঝাড়াখালীর আমজেদ বয়াতির বাড়ির সামনে লোহার সেতু দেখতে পাননি।

দক্ষিণ ঝাড়াখালীর লিটন হাওলাদার ও নান্নু হাওলাদার অভিযোগ করেন, তিন বছর আগে বয়াতিবাড়ির সামনে একটা লোহার সেতু হওয়ার কথা ছিল। ওই সময় ঠিকাদার এসে খালের প্রস্থ মেপে গেলেও আজ পর্যন্ত কোনো সেতু নির্মাণ করা হয়নি। বর্তমানে তাঁদের চলাচলের জন্য ওই স্থানে গ্রামবাসীর উদ্যোগে মাটি দিয়ে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।

কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য জালাল গাজী বলেন, ‘সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আলতাফ হোসেন আকন এডিপি বরাদ্দের তালিকায় সেতুটি দিয়ে যান। তিনি মারা গেছেন তিন বছর আগে; কিন্তু আজ পর্যন্ত ঠিকাদার সেতু নির্মাণ করেননি। ’

উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল আবেদীন মিঠু বলেন, ‘আমি ও আমার অংশীদার সোহেল বরগুনার এক ঠিকাদারের কাছ থেকে চুক্তিতে কাজটি কিনেছি। ওই প্যাকেজের দুটি কাজ সম্পন্ন করা হলেও সেতু নির্মাণকাজ করা হয়নি। বৃষ্টি থাকার কারণে আমরা কাজ করতে পারিনি। সবে বৃষ্টি শেষ হয়েছে। এখন কাজ শুরু করব। অফিসে আমার এক লাখ টাকা জামানত রয়েছে। এ ছাড়া আমার নামে পে অর্ডার কেটে অফিসে জমা দিয়েছি। ’ কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। তিনি ঠিকাদারের নাম জানেন না বলে দাবি করেন।

তদারকি কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী মুরাদ হোসেন জানান, বরগুনার এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দিয়ে তালতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল আবেদীন মিঠু ওই কাজটি পেয়েছেন। পে অর্ডার রেখে ঠিকাদারকে সব বিল তোলার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। গত তিন অর্থবছরে কাজ না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘বর্ষা শেষ হলে কাজ শুরু করা হবে। ’

সদ্যোবিদায়ি উপজেলা প্রকৌশলী আহম্মদ আলী প্রশ্নের জবাবে মুঠোফোনে বলেন, ‘কাজ শেষ না হলে সরকারি কোনো আইনে পে অর্ডার রেখে বিল দেওয়ার বিধান নেই। ’ তাহলে দিলেন কেন—প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদককে মিঠুকে চিনি। ঠিকাদারের নাম আমাদের জানা নেই। ’

তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম সাদিক তানভীর বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন