বরগুনায় সিডর দিবস পালিত


উপকূলের মানুষের ভয়াবহ স্মৃতির স্বরণে বরগুনা প্রেসক্লাবের আয়োজনে প্রতি বছরের মতো পালিত হয়েছে সিডর দিবস। স্বরণ সভা দোয়া অনুষ্ঠান কালো ব্যাজ ধারণের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে গর্জনবুনিয়ার সিডরস্মৃতি স্তম্ভে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাড. সঞ্জীব কুমার দাস। এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাওসার হোসেন, নলটোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুজ্জামান মাহফুজ, ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির উপজেলা টিম লিডার জাকির হোসেন মিরাজ, বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি জহিরুল হাসান বাদশা , বরগুনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাফিজ, প্রিন্ট মিডিয়া সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম টিটু, সাংবাদিক ফেরদৌস খান ইমন, শাহ আলী প্রমূখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বরগুনা প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি আবু জাফর সালেহ।
বরগুনাসহ উপকূলবাসীর জন্য একটি স্মৃতিময় বেদনার দিন ১৫ নভেম্বর। ২০০৭ সালের এ দিনে ঘূর্ণিঝড় সিডর উপকূলীয় অঞ্চলকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল। কেড়ে নিয়েছে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণ। সেদিনের সেই দু:সহ স্মৃতি আজো উপকূলবাসীকে মনে করিয়ে দেয়। অনেক পরিবারের কান্না এখনও থামেনি।
সরকারী তথ্য অনুযায়ী সিডরের আঘাতে বরগুনা জেলার ১ হাজার ৩৪৫ জন মানুষ মারা গেছে। নিখোঁজ রয়েছে আরো ১৫৬ জন। ৩০ হাজার ৪৯৯ টি গবাদী পশু ও ৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৯ টি হাস-মুরগী মারা যায়। জেলার ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬১ টি পরিবারের সবাই কমবেশী ক্ষতির শিকার হন। সম্পূর্নভাবে গৃহহীন হয়ে পরে জেলার ৭৭ হাজার ৭৫৪ টি পরিবার। বেসরকারী হিসেবে নিহতের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার।
সিডরে এতো মৃত্যুর অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, ঐ সময় আবহাওয়া বিভাগের সতর্কবানী যথাযথ ছিলনা। আবহাওয়া অফিস ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত থেকে হঠাৎ করে ১০ নম্বর বিপদ সংকেতের কথা ঘোষণা করে। মংলা সমুদ্র বন্দরকে কেন্দ্র করে যে সতর্ক সংকেত প্রচার করা হয়েছিল, তা বোঝার উপায় বরগুনার মানুষের ছিলনা।
রেডক্রিসেন্টের সেচ্ছাসেবকরা ছিল প্রায় নিষ্ক্রিয়। দু’এক জায়গায় তাঁরা মাইকিং করলেও বেশীর ভাগ জায়গায়ই কোন রকম সংকেত প্রচার করা হয়নি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তথ্য অফিস মাইকিং করলেও তা ছিল শহর এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। যারাও ঘূর্ণি ঝড়ের সংকেত শুনেছেন, তাঁরাও পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্রের অভাবে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারেননি।
জাগো নারীর প্রধান নির্বাহী হোসনেয়ারা হাসি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত স্থানীয় ভাষায় বোধগম্য করে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। সিপিপির টিম লিডার জাকির হোসেন মিরাজ বলেন, ঘূর্ণিঝড় কর্মসূচির সেচ্ছাসেবকসহ বিভিন্ন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সাংবাদিক হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, উপকূলীয় এলাকায় আরো আরও কমিউনিটি রেডিও স্টেশন করতে হবে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, সিডরের মতো ভয়াবহ ঝড় মোকাবেলায় সরকারের কাছে সাইক্লোন সেল্টার সহ বেরীবাধ সংরক্ষণে বিশেষ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। আরও সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
এইচকেআর
