ডাক্তার দেখানোর পরে ওষুধ দেখাতে হয় কোম্পানির প্রতিনিধিদের


ডাক্তার দেখানোর পরেই ওষুধ কিনে দেখিয়ে যেতে হয় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি এবং ডাক্তারের সহকারীদের। এমন চিত্র দেখা গেছে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. সোহরাব উদ্দীন ব্যক্তিগত চেম্বারে।
বুধ ও বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় তাঁর বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সরকারী ডিউটিতে থাকার কথা থাকলেও দেখা যায় ব্যক্তিগত চেম্বারে। সেখানে রোগি দেখার পরেই তাঁর দুইজন নারী সহকারী প্রত্যেক রোগীকে বলছেন ওষুধ কিনে এখনই দেখিয়ে যাবেন। এরপর কিছুক্ষণ পরপর কোম্পানীর লোকরা রোগীদের কাছ থেকে দেখে যাচ্ছেন ঠিকমত তাদের ওষুধ কেনা ও লেখা হয়েছে কিনা। এ ছাড়াও তাঁর চেম্বারের নীচেও সবসময় থাকে ওষুধ কোম্পানির লোকদের ভীড় নিচে নামলেই রোগীদের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলতে চেষ্টা করেন তাঁরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিশু রোগীর অভিভাবক জানান, আমার ৩ বছরের বাচ্চাকে ডাক্তার সোহরাব সাহেবকে দেখানোর পরে ডাক্তার সাহেব পাচটি ওষুধ লিখে দিলে সন্দেহ হয় এরপর ফার্মেসীতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা জানান সর্দি এবং কাশির ওষুধও লিখে দিয়েছেন। আশ্চার্যের বিষয় আমার বাচ্চার সর্দি কাশি হয়নি এরপর আমি ওিই ওষুধ কিনে খাওয়ানি।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সোহরাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে অফিসের সময়ে ব্যক্তিগত চেম্বার করার চিত্র দেখা গেছে প্রতিনিয়ত। ধারাবাহিকভাবে গত কয়েক বছর ধরেই তিনি এভাবে অফিস টাইমে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার পরিবর্তে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখছেন।
জানা যায়, ডা. সোহরাব উদ্দীন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে যোগদান করার পর থেকেই তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি এই দায়িত্বে কর্মরত থাকলেও তাঁর কাছে কেউ সেবা পাচ্ছে না। কারণ তিনি সরকারি হাসপাতালে কতর্ব্য পালনের পরিবর্তে ডিউটিকালীন সময় বরগুনা ফার্মেসি পট্টি তাঁর ব্যক্তিগত চেম্বার করেই সময় কাটান। তাছাড়া তাঁর ব্যক্তিগত চেম্বারেও রোগীদের স্বজনদের সাথে চড়াও হয়ে রাগান্বিতভাবে কথা বলেন বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন।
তাঁর কাছে চিকিৎসার পরামর্শ নিতে আসা কুলসুম বেগম জানান, আমার ছেলে বেশ কয়েকদিন থেকে অসুস্থ। ছয় নভেম্বর তাঁর কাছে ব্যক্তিগত চেম্বারে আমার ছেলের চিকিৎসা করাই। ডাক্তার সাহেব তিনদিন পরে আবারো ছেলেকে নিয়ে আসতে বলে। তিনদিন পর আজ সকাল ৯ টা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত তাঁর ব্যক্তিগত চেম্বারে অপেক্ষা করি। দেড় ঘন্টা অপেক্ষা করার পর সদর হাসপাতালে তাঁর কাছে যাই। সেখানে অনেক খোঁজাখুঁজির পরে তাকে হাসপাতালের সামনে দেখতে পাই। চিকিৎসার বিষয়ে তার সাথে কথা বলতে চাই। কিন্তু তার পিছনে হেঁটে তাঁর সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি কথা না বলে তাঁর ব্যক্তিগত চেম্বারে যায়। সেখানে গিয়ে আবার ছেলেকে চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি চলে আসি। তাছাড়া সে রোগীর গার্ডিয়ানদের সাথে সব সময় চড়াও কন্ঠে কথা বলে। যেটা একজন ডাক্তারের কখনোই কাম্য না।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১১ টায় গিয়ে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। যেখানে নবজাতক ও শিশু রোগীদের প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নিজের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখেন।
সরকারি ডাক্তার হয়েও অফিস টাইমে ব্যক্তিগত চেম্বার করতে পারবে কিনা বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (এমবিবিএস বিসিএস স্বাস্থ্য) ডাক্তার সোহরাব উদ্দীন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, আমি এখন বাজারে আমার চেম্বারে আছি। তিনটার পরে হাসপাতালে আসবো।
এইচকেআর
