ইসলামিয়া ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়গনেস্টিক সেন্টার পরিদর্শন 

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে দুঃস্থ, দরিদ্র ও স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত মা ও শিশু স্বাস্থ্যের জন্য ‘ইসলামিয়া ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়গনেস্টিক সেন্টার’ নামে একটি বেসরকারি স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি  চিকিৎসা কেন্দ্র আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়েছে।

শনিবার বিকেলে চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনের সংসদ সদস্য এসএম শাহজাদা। দেশের বিখ্যাত প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সার্জন নাঈমা কবীর সেবা কেন্দ্রটির উদ্যোক্তা।

বেসরকারি পর্যায়ে এ চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রটি চালু উপলক্ষে সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা সেবা কেন্দ্রটি পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ সময় গলাচিপা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মু. শাহীন শাহ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম, গলাচিপা সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফোরকান কবির, গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এমআর শওকত আনোয়ার ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরদার মুহম্মদ শাহ আলম, গলাচিপা প্রেসক্লাবের সভাপতি সমিত কুমার দত্ত মলয়, কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. হুমায়ুন কবীর প্রমুখ। 

পরিদর্শন শেষে সংসদ সদস্য এসএম শাহাজাদা বলেন, ‘গলাচিপার বিচ্ছিন্ন কিছু দ্বীপ চর রয়েছে। এ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রাঙ্গাবালী উপজেলাসহ এ উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের মা এবং শিশু স্বাস্থ্যের চিকিৎসায় কষ্ট এবং ভোগান্তির শেষ ছিলনা। আমার মনে হয় সেবা কেন্দ্রটি চালু হওয়ায় মানুষের ভোগান্তি কমবে। দোড় গোড়ায় বসে মানুষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ভালো চিকিৎসা পাবে। এটা গলাচিপার মতো প্রতন্ত একটি উপজেলার জন্য সু-সংবাদ।’

গলাচিপা উপজেলা চেয়ারম্যান মু. শাহীন শাহ বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ে গিয়ে গরীব-দুঃস্থ মানুষের সেবা করার লোক পাওয়া যায়না। সেদিক থেকে চিন্তা করলে নাঈমা কবীর অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এ সেবা কেন্দ্রটি সাধারণ মানুষের সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

গলাচিপা প্রেসক্লাবের সভাপতি সমিত কুমার দত্ত মলয় বলেন, ‘আমরা শুনেছি নাঈমা কবীর একজন ভালো চিকিৎসক। উপক‚লের গর্ভবতী মা এবং শিশু স্বাস্থ্য সেবার জন্য তাঁর মত একজন চিকিৎসকের প্রয়োজন ছিল।’

কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘নাঈমা কবীর শুধু গলাচিপা নয়, পার্শ্ববর্তী কলাপাড়া উপজেলায়ও গরীব ও অসহায় মানুষের সেবা দিয়ে সুনাম কুড়িয়েছেন।’

রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া গ্রামের খাদিজা বেগম (২৬) বলেন, ‘গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সমস্যা, সন্তান প্রসবকালীন সময়ে অস্ত্রপচারের জন্য কলাপাড়া উপজেলা সদর, পটুয়াখালী, বরিশাল পর্যন্ত যাইতে হইত। এই কেন্দ্রটি চালু হওয়ায় আমাগো এহন আর দূরে যাইতে হইবেনা। আমরা ঘরের ধারে বইয়া সেবা পামু।’

গলাচিপা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সোমা রানী (২০) বলেন, ‘মা ও শিশু স্বাস্থ্যের জন্য এ রকম একটা সেবা কেন্দ্র চালু হওয়ায় আমাগো উপকার হইছে। মা ও শিশু স্বাস্থ্যের চিকিৎসার জন্য আমরা আগে দূরে যাইতাম। এতে অর্থ খরচ আর কষ্টও হইত। এখানে চিকিৎসা নিলে আমাগো অর্থ খরচ এবং কষ্ট কম হইবে।’

ইসলামিয়া ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়গনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাঈমা কবীর বলেন, ‘এই অঞ্চলের নারীরা অনেক বেশী রক্ষনশীল। তাই আমরা সম্পূর্ণ মহিলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সেবিকাদের দ্বারা অস্ত্রপচার ও পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ মানসম্পন্ন চিকিৎসা প্রদান করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। 

তাছাড়া গর্ভকালীন জরুরী, সময়োপযোগী চিকিৎসার প্রয়োজনে গর্ভবতী মা’দের তালিকা তৈরি করে সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে আমরা অগ্রসর ভ‚মিকা রাখতে চাই। এমনকি গর্ভবতী মা’দের সন্তান প্রসবের সময় প্রয়োজনে আমরা তাৎক্ষণিক নিরাপদ রক্ত দানের ব্যবস্থাও নিশ্চিত করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘গর্ভফুলের নিন্মবস্থান, জড়ায়ুতে বাচ্চার আড়াআড়ি অবস্থান, গর্ভকালীন খিচুনি, উচ্চ রক্তচাপ, বাচ্চার গর্ভকালীন সঠিক অবস্থান নির্ণয়, গর্ভকালীন বাচ্চার অপুষ্টি ইত্যাদি চিহ্নিত করে মাতৃ মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে এ সেবা কেন্দ্র ভ‚মিকা রাখবে।’ 

২০০০ সাল থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নাঈমা কবীরের উদ্যোগে উপক‚লের বরগুনা জেলার পাথরঘাটা, বামনা, আমতলী, পিরোজপুর জেলার কাউখালী, মঠবাড়িয়া, ভান্ডারিয়া, ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া, বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ উপজেলা এবং পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া, মহিপুর, মির্জাগঞ্জ, খলিসাখালী এলাকায় স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।