মিয়ানমারে খাদ্য সংকট, দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা


গত ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের জাতীয় অর্থনীতি ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা কার্যত পঙ্গু হয়ে পড়েছে। চলমান জান্তাবিরোধী আন্দোলনের কারণে দেশের সমস্ত কলকারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে হু হু করে। ব্যাংকগুলোতে দেখা দিয়েছে অর্থের সংকট। এর মধ্যেও সামরিক বাহিনীর ধরপাকড় চলছে। সাধারণ মানুষের জীবিকা নির্বাহের কোনোরকম সুযোগ নেই। ফলে আগামী দিনগুলোতে অবস্থা কী দাঁড়াবে তা নিয়ে চিন্তিত মিয়ানমারবাসী। খবর এএফপির।
আয়ে মার নামে ৩৩ বছর বয়সী এক ইয়াঙ্গুনবাসী নিজের সাত ছেলে নিয়ে তার দুশ্চিন্তা এএফপির সাংবাদিকের কাছে ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আপাতত ভাত ও শাকসবজি খেয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছি। সামনের দিনগুলোতে কীভাবে চলব, এখনও জানি না। বাচ্চাদের তো আর অনাহারে রাখতে পারব না। খাবার জোগাতে ঘর ছেড়ে স্বামীর সঙ্গে বাইরে কাজ নিতে বাধ্য হয়েছেন আয়ে মার। স্বাভাবিক সময়ে যে দেশ চাল, মটরশুঁটি ও ফলমূল রপ্তানি করে, ধীরে ধীরে সে দেশ দুর্ভিক্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে ইতোমধ্যে সতর্ক করেছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। ওয়াহ ওয়াহ নামে এক বিক্রেতা জানান, সাধারণ মানুষ আরও আগেই তাদের ক্রয়ক্ষমতা হারিয়েছে। তারপরও প্রতিদিন খাবারের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তিনি বলেন, আমার দোকানে কিছুই বিক্রি হয় না। এক বাটি শুকনো মাছ মাত্র ৫০০ কিয়েট (০.৩৩ ডলার) দিয়ে কেনার লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা ভয়ের মধ্য দিয়ে দিন পার করছি। তিন সন্তানের বাবা উইন নেইং তুন বলেন, মাংস খাওয়ার সামর্থ্য আরও আগেই হারিয়েছি। এখন শাকসবজি খেয়ে বেঁচে আছি। আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা শুধু ভাত-লবণ খেয়ে দিন কাটাচ্ছে।
ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, রাজধানী নেপিদো ছেড়ে একটু দূরে, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোর জনজীবন আরও ৫০ শতাংশ বেশি ব্যয়বহুল। আগামী ছয় মাসের মধ্যে দেশটির তিন দশমিক চার মিলিয়ন মানুষ অনাহারে দিন কাটাবে। মিয়ানমারের জরুরি খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন বলেও জানায় সংস্থাটি।
গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে অভ্যুত্থান ঘটায় সেনাবাহিনী। সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে এবং সু চিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তার করে। একই সঙ্গে দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।
এমইউআর
