ইয়াসের প্রভাব : প্লাবিত হয়েছে বরিশালের সবগুলো উপজেলা


ঘূর্ণিঝড় ইয়ােসের প্রভাবে বরিশাল জেলায়ি বিভিন্ন জনপদ পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সেই সাথে ভেঙে গেছে রক্ষা বাঁধ। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মাছের ঘের, ফসলী জমি। পানিবন্দী রয়েছে সহস্রাধিক পরিবার বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বরিশাল জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার সুব্রত বিশ্বাস জানিয়েছেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের খোঁজখবর রাখা হচ্ছে সার্বক্ষণিক। এছাড়া সহায়তা পাঠানো হচ্ছে। তিনি জানান, জেলার ১০ টি উপজেলায় ৩১৬ টি আশ্রয়কেন্দ্র, ৭৫৫ টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত। পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা ও পর্যাপ্ত শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। পর্যাপ্ত পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সহকারী কমিশনার মারুফ দস্তগীর জানিয়েছেন, আশ্রয়নকেন্দ্র খোলা থাকলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কেউ আশ্রয় নেয়নি। কারন ঘূর্ণিঝড়টি মূল আঘাত করেছে ভারতে। তার প্রভাব পড়েছে বরিশালের উপকূলে। এছাড়া এই অঞ্চলের মানুষ স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি পানি উচ্চতা বা প্লাবন মোকাবেলায় অভ্যস্ত। মানুষ জানতো আজ পূর্ণিমার জোঁ। সঙ্গত কারনে কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেননি। যার যার বাড়ি ঘরেই থেকেছেন। তবে জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি ছিল।
তিনি আরো বলেন, নদী তীরবর্তী কিছু মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাস্তাঘাট, বাঁধ ভেঙেছে। মাছের ঘের ও ফসলী জমি তলিয়েছে।
ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, দ্বীপ উপজেলা মেহেন্দিগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শ্রীপুর ইউনিয়নের বহেরাচরে মুজিবব বর্ষের আশ্রয়ন প্রকল্পের প্রথম পর্যায় নির্মিত ৫টি ঘর জোয়ারের পানি স্রোতে পড়ে গেছে।
এছাড়া জয়নগর, দড়িচর-খাজুরিয়া, বিদ্যানন্দপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন বাঁধ, রাস্তা ও ব্রীজ-কালভার্ট ভেঙে গেছে। উলানিয়া ইউনিয়নের কালিগঞ্জ ঘাটের পল্টুন ছিড়ে গেছে। খাজুরিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওর্য়াডের সিকদার হাটের কমিউনিটি ক্লিনিকটি নদী ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে। মুলাদী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
উপজেলার কাজীরচর এলাকায় একটি রাস্তা ভেঙ্গেছে। হিজলা উপজেলায় রক্ষা বাঁধের ৩০০ মিটার ধ্বসে গিয়েছে। গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের সড়ক ভেঙে গেছে।
বাকেরগঞ্জ উপজেলার নলুয়া ইউনিয়ন এর বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া, শায়েস্তাবাদ, চন্দ্রমোহন ও চরমোনাই ইউনিয়নে জোয়ারের প্রভাবে প্রায় ১০০০ পরিবার পানিবন্দী।
বাবুগঞ্জ উপজেলা কিছু গাছ ভেঙে পড়লেও নদী ভাঙন ও বেড়িবাঁধ ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। উজিরপুর উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নে জোয়ারের পানি উঠে ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ডে জোয়ারের পানি উঠেছে। বানারীপাড়া উপজেলায় নদী-খালে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
গৌরনদী উপজেলায় নদী ও খালে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগৈলঝাড়া উপজেলায় এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং ফসলী জমি পানির নিচে রয়েছে।
জেলা প্রশাসন থেকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কারো মৃত্যু হয়েছে এমন তথ্য জানানো হয়নি। তবে বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুটি ইউনিয়নে পানিতে ডুবে দু্ইজন শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সত্যরঞ্জন খাসকেল।
এসএমএইচ
