ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news

পিরোজপুরের অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত

পিরোজপুরের অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব ও পূর্ণিমার জো'তে পিরোজপুরে দমকা হাওয়া ও নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলার প্রধান নদী কচা ও বলেশ্বরের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জোয়ারের পানিতে জেলার অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ইন্দুরকানি উপজেলায় বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে লোকালয় ও মঠবাড়িয়া উপজেলার মাঝের চরের বাঁধ ভেঙে বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জোয়ারের সময় জেলার নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে জেলার প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে ফসলের মাঠ, বাড়িঘর, হাটবাজার, ফেরিঘাট তলিয়ে যায়। ভাটার সময় আবার পানি নেমে যায়। মঠবাড়িয়া পৌরসভার দক্ষিণ বন্দর এলাকা, থানাপাড়া, উপজেলার বড়মাছুয়া, মিরুখালী, দাউদখালী, তুষখালী, ধানীসাফা, বেতমোর ও টিকিকাটা ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ইন্দুরকানি উপজেলার ৯ গ্রাম, কাউখালী উপজেলার ১৫, ভান্ডারিয়া উপজেলা সদরসহ ৫, নাজিরপুরে ১০, নেছারাবাদ উপজেলার ১০ ও পিরোজপুর সদর উপজেলার ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলার চরখালী, আমরাজুড়ি, সোনাকুর, বেকুটিয়া ফেরিঘাট জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যানবাহন ও মানুষের চলাচলে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

ইন্দুরকানী উপজেলা চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, ইন্দুরকানী উপজেলার পাড়েরহাট বাজার পানিতে ডুবে গেছে। কালাইয়া, পূর্ব ইন্দুরকানি, খোলপটুয়া, ট্যাংরাখালী, চন্ডিপুর, সাউদখালী, চরবলেশ্বর, পাড়েরহাট গ্রাম ও চরখালী ফেরিঘাট এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সাউথখালীতে পানি বেড়েছে ও বাতাস হচ্ছে। সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে তাদের জন্য শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবার জাপানী ব্যারাক হাউজ প্লাবিত হয়েছে। সব আশ্রয় কেন্দ্রের জন্য পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। পরিস্থিতি খারাপ হলেই তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে খাবার পৌছানো হবে।

কাউখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ মিয়া বলেন, উপজেলার ১৫ গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে সবজিক্ষেতসহ মাছের ঘেরের বেশ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

নাজিরপুর উপজেলার দেউলবাড়ির ইউপি চেয়ারম্যান মো. অলিউল্লাহ বলেন, নাজিরপুর উপজেলার মনোহরপুর, পদ্মডুবি, দেউলবাড়ি, সোনাপুর, উত্তর গাওখালী, উত্তর পাকুরিয়াসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে ইন্দুরকানি উপজেলার কচা নদী ও বলেশ্বর নদের তীরে টগরা গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, জোয়ারের পানি বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে ঢুকে বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। টগরা গ্রামের সোয়া তিন কিলোমিটার বাঁধের প্রায় দুই কিলোমিটার ভেঙে গেছে। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ওই গ্রামের ৩৫০টি পরিবার।

টগরা গ্রামের মো. আতিকুর রহমান বলেন, দুই বছর আগে বেড়িবাঁধ তৈরি করা হয়েছিল। গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জোয়ারের পানি উঠলে বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কচা নদীর তীরের বাড়িগুলোতে যাতায়াত করতে কষ্ট হচ্ছে।
পাউবোর পিরোজপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, জেলায় ২৯৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে মঠবাড়িয়া উপজেলায় ১৪০ কিলোমিটার ও ইন্দুরকানি উপজেলায় ৯৪ কিলেমিটার। যার বেশির ভাগ ক্ষতিগ্রস্থ। কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে। মঠবাড়িয়া উপজেলার বড়মাছুয়া স্টিমারঘাট এলাকার বাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ইন্দুরকানি উপজেলার টগরা, চারাখালী, কালাইয়া, কলারণ, পূর্ব চর বলেশ্বর, পূর্ব চন্ডিপুর, খোলপটুয়া ও সাউদখালী গ্রাম প্রতিরক্ষা বাঁধের অন্তত ১৫ থেকে ১৭টি স্থান ভাঙা রয়েছে। ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এতে পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে।

তিনি আরো বলেন, মঠবাড়িয়া উপজেলার বলেশ্বর নদের মধ্যে থাকা মাঝের চরের দুটি স্থানে বাঁধ ভেঙে চরের বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া পিরোজপুর সদর, ভান্ডারিয়া, মঠবাড়িয়া, নাজিরপুর কাউখালী উপজেলার ৪০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলার কচা নদীর পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ভাঙা বাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কার করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক আবু আলী মো: সাজ্জাদ হোসেন জানান, প্লাবিত গ্রামগুলোর অসহায় মানুষকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তালিকা তৈরি করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় জেলার ৭ উপজেলায় ৫৫৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া ৪৪৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২৩৫টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও ৩২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। জেলায় ৬৮টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।


এসএমএইচ
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন