ঢাকা সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

Motobad news

বাউফলে কেটে ফেলা হল তিন দশকের পুরানো সড়ক!

বাউফলে কেটে ফেলা হল তিন দশকের পুরানো সড়ক!
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মদনপুরা ইউনিয়নের রামলক্ষ্মন গ্রামে যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত প্রায় তিন দশকের পুরানো একটি সড়কের  সম্মুখভাগ কেটে যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এতে একটি স্বমিল ও একটি রাইস মিল বন্ধ হয়ে গেছে। আর তাতে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন ওই মিলের দুই মালিক ও মিল সংশ্লিষ্ট মিস্ত্রী ও শ্রমিকেরা।

স্থানীয় আবদুল লতিফ খান নামে প্রভাবশালী এক ব্যক্তি বাউফল-কনকদিয়া সড়কের শাখা ওই সড়কটির সম্মুখভাগে রাতের অন্ধকারে শ্রমিক দিয়ে কেটে ফেলেন বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন মিল মালিক আবদুল বারী ওরফে বারেক মৃধা ও মো. রফিক মৃধা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,১৯৯০ সালে নিজাম উদ্দিন খান নামে এক ব্যক্তি কনকদিয়া মৌজার ১৬০২ নম্বর খতিয়ানের ৫৮৭৮ নম্বর দাগের ৪০ শতাংশ জমির ওপর একটি স্বমিল ও একটি রাইস মিল স্থাপন করেন। তখন থেকেই ওই সড়কটি দিয়ে-ই মিল সংশ্লিষ্ট লোকজনসহ স্থানীয় লোকজন যাতায়াত করতেন। মিলে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হল ওই সড়কটি।  ১৯৯৮ সালে নিজাম উদ্দিন খান ওই জমিসহ মিল দুটি বিক্রি করে দেন স্থানীয় আবদুল বারী ওরফে বারেক মৃধা ও তাঁর ভাই মো. রফিক মৃধার কাছে। ২০০০ সালের ৭ এপ্রিল তৎকালীন মদনপুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ হাওলাদার স্থানীয় জমির মালিকদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে লিখিতভাবে মিলে যাতায়াতের ওই সড়কটি প্রশস্ত করে দেন।

পরবর্তীতে ২০২১ সালের জুন মাসে আবদুল লতিফ খান নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি ওই সড়কটি তাঁর জমির মধ্যে দিয়ে গেছে দাবি করে সড়কটির সম্মুখভাগে বেড়া দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করে দেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই বেড়া সরিয়ে দিয়ে যাতায়াতের পথ উম্মুক্ত করে দেন। পরে যাতায়াতে আর কেউ বাধা দেয়নি। সম্প্রতি (১২ জুন, রোববার) গভীর রাতে আবদুল লতিফ শ্রমিক দিয়ে সড়কটির সম্মুখভাগে পাঁচ ফুট পরিমান মাটি কেটে  যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেন।

মিল মালিক মো. রফিক মৃধা বলেন,‘তাঁর আয়ের একমাত্র উৎস হল মিল। মিল চললে পাঁচ সদস্যের সংসার চলে। মিলের আয়ের টাকায় স্নাতকে (সম্মান) পড়ুয়া মেয়ে, কলেজ পড়ুয়া এক ছেলে ও মাদ্রাসায় পড়ুয়া এক ছেলেসহ তিন সন্তানের পড়াশোনার খরচ চালান। মিল বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।’

আবদুর রহিম মেলকার (৬৫) নামে এক শ্রমিক বলেন,‘প্রায় ২৫ বছর পর্যন্ত খোলা টমটমে করে মিলের মালামাল আনা-নেওয়ার কাজ করে আট সদস্যের সংসার চালাইতেছিলাম। হঠাৎ করে মিলে যাওনের রাস্তা রাইতে কাইটা (কেটে) হালানোর (ফেলা) লইগা মিল বন্ধ হইয়া গেছে। আমার আয়ও বন্ধ অইয়া গেছে। ১৫ দিন তামাইতধার-দেনা কইরা খুব কষ্টে দিন কাটাইতেছি। আপনেরা রাস্তাটি দিয়া যাতায়াতের ব্যবস্থা কইরা দেন। না হলে মইরা যামু।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,আবদুর রহিমের মত অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক ওই মিলের ওপর নির্ভরশীল।

এ বিষয়ে আবদুল লতিফ মুঠোফোনে বলেন,‘রাতের অন্ধকারে কে বা কারা সড়কটি কেটে দিয়েছে তা আমার জানা নাই।’ ওই ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত না বলে দাবি করেন।

ইউএনও মো. আল আমিন বলেন,‘যাতায়াতের রাস্তা কেটে ফেলা অমানবিক। আগামি মঙ্গলবার সরেজমিনে যাব। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন