লঞ্চের হাইড্রোলিক হর্নে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি


পটুয়াখালী-ঢাকা রুটে নিয়মিত তিন থেকে চারটি ডাবল ডেকার যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করছে। আধুনিক বিলাসবহুল এসব লঞ্চে রয়েছে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা। তবে দুপুরের পর থেকে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে লঞ্চগুলো। বিকট শব্দের হাইড্রোলিক হর্নের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ঘাট এলাকার জনজীবন। এতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। তাই এসব হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপের দাবি উঠেছে।
শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুসারে, আবাসিক এলাকায় দিনের বেলা (ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা) ৫৫ এবং রাতে (রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা) ৪৫ ডেসিবল (শব্দের তীব্রতা পরিমাপের একক) এবং নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ও রাতে ৪০, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ও রাতে ৫০, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ ও শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ও রাতে ৭০ ডেসিবল পর্যন্ত শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ রয়েছে।
তবে পটুয়াখালীতে ঘাট থেকে ছাড়ার সময় লঞ্চে ব্যবহৃত হাইড্রোলিক হর্নের মানমাত্রা ৮৬ ডেসিবল।
পটুয়াখালী পৌর শহরের কালিকাপুর এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, মাঝে মধ্যে পরিবার নিয়ে লঞ্চে ঢাকায় যাওয়া-আসা করি। লঞ্চ ছাড়ার সময় বিকট শব্দে হাইড্রোলিক হর্ন বেজে ওঠে। এসময় শিশুরা ভয়ে কেঁপে ওঠে এবং অনেক বেশি কান্নাকাটি করে। এ হর্ন ব্যবহার বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।
পটুয়াখালী পৌর শহরের নবাবপাড়ার বাসিন্দা শাহাদাত খান বলেন, ‘অপ্রয়োজনে হাইড্রোলিক হর্ন বাজিয়ে শব্দ দূষণ করা হচ্ছে। বছরের পর বছর এভাবে চললেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ আশা করছি।
লঞ্চের অতিমাত্রার শব্দ মানব শরীরের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, শব্দ দূষণের কারণে শিশুরা সব থেকে বেশি ঝুঁকিতে পড়ছে। অনেক সময় শিশুদের কানের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া বিকট শব্দের কারণে শিশুরা অনেক বেশি ভয় পেয়ে মানসিক সমস্যায় পড়তে পারে।
পটুয়াখালী অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সহকারী পরিচালক মামুন অর রশীদ বলেন, ‘বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এরই মধ্যে এসব হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধে লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে বলেছি। এরপরও স্থায়ীভাবে ব্যবহার বন্ধে অধিদপ্তরকে জানানো হবে।’
পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘পটুয়াখালী লঞ্চঘাটটি পৌর শহর লাগোয়া, এ কারণে এখানকার শব্দ দূষণ সবারই ক্ষতি করে। বর্তমান সরকার শব্দ দূষণকে গুরুত্ব সহকারে দেখছে । এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে এ হর্নের যাচ্ছেতাই ব্যবহার বন্ধ করা যায় সে বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলাপ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহম্মদ কামাল হোসেন বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। এখন যেহেতু জেনেছি, দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এইচকেআর
