ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

Motobad news

মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং প্রকল্প বন্ধ করার পাঁয়তারা

মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং প্রকল্প বন্ধ করার পাঁয়তারা
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

সরকারের উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ করার জন্য মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং প্রকল্প বন্ধ করার পাঁয়তারা” করছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাংবাদিকদের জানান মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের বোর্ড ও জনসংযোগ বিভাগের উপ সচিব মোঃ মাকরুজ্জামান।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোংলা বন্দর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও বিশ্বের অন্যতম প্রধান ন্যাচারাল প্রটেক্টেড সমুদ্র বন্দর। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর হলেও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে এ বন্দরের ভূমিকা অপরিসীম এবং অপার সম্ভাবনার কেন্দ্রস্থল। এ বন্দরের অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০০২-০৩ অর্থ বছর থেকে ২০০৬-০৭ অর্থ বছর পর্য্ন্ত বন্দর একটি লোকসানি বন্দর হিসাবে পরিচিত পায়। তখন এ বন্দরকে মৃতপ্রায় বা ডেডহর্স হিসাবে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা মোংলা বন্দরের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসাবে ঘোষণা করেন এবং বন্দর উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি মোংলা বন্দরের উন্নয়নে গৃহীত কার্যক্রম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। ফলশ্রুতিতে মোংলা বন্দর লোকসানি বন্দরের নাম মুছে দিয়ে আজ একটি অর্থনৈতিকভাবে সুদৃঢ় বন্দর হিসাবে সুপরিচিত।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন উন্নয়নের ভাবনা, সরকারের জনবান্ধব ও উন্নয়নের সঠিক পরিকল্পনা এবং অক্লান্ত পরিশ্রমে বন্দরের উন্নয়ন আরও গতিশীল হচ্ছে এবং আমি আশাবাদী, উন্নয়নের এ ধারা আরও বেগমান হবে, ইনশা আল্লাহ।

বঙ্গোপসাগর হতে প্রায় ১৩১ কিঃমিঃ উজানে পশুর নদীর পূর্ব তীরে মোংলা বন্দর অবস্থিত। বঙ্গোপসাগর হতে চ্যানেলের প্রবেশ মুখ যা আউটার বার নামে এবং হারবাড়িয়া হতে বন্দর জেটি পর্যন্ত যা ইনার বার নামে পরিচিত। আউটার বার সম্প্রতি ড্রেজিং করায় মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়া এ্যাংকোরেজ এলাকা পর্যন্ত ৯.৫-১০ মি. ড্রাফটের জাহাজ আসতে পারছে। হারবাড়িয়া এ্যাংকোরেজ হতে বন্দর জেটি পর্যন্ত ২৩.৪ কিঃমিঃ নদীতে নাব্যতা ৫-৬ মিটার। ইনার বারে ৮.৫০ মিটার সিডি (চার্ট ডেটাম) গভীরতায় ড্রেজিং করা হলে মোংলা বন্দরের জেটিতে স্বাভাবিক জোয়ারের সহায়তায় ৯.৫০-১০ মিটারের অধিক ড্রাফটের জাহাজ নির্বিঘ্নে হ্যান্ডেল করা সম্ভব হবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরেও সর্বোচ্চ ৯.৫০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডেল করা হচ্ছে। সে বিবেচনায় পশুর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং করা হলে মোংলা বন্দরকে চট্টগ্রাম বন্দরের একটি কার্যকর বিকল্প বন্দরে পরিণত করা সম্ভব হবে। 

মোংলা বন্দরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নে সরকারের গৃহীত নানাবিধ উদ্যোগের মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ, খুলনা-মোংলা পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন, খানজাহাজন আলী বিমান বন্দর নির্মাণ, মোংলা বন্দরের সন্নিকটে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়াট সম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, বন্দর এলাকায় ভারত-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ইপিজেড সম্প্রসারণসহ নানা প্রকল্প প্রহণ করা হয়েছে। আশা করি ২০২১-২২ অর্থ বছরের মধ্যে উল্লিখিত প্রকল্পের কার্যক্রমের অভূতপূর্ব অগ্রগতি হবে এবং মোংলা বন্দরের চাহিদা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। ফলশ্রুতিতে মোংলা বন্দরের সম্ভাব্য বর্ধিত চাহিদা সুষ্ঠু ও দক্ষতার সাথে পরিচালনা ও বন্দর এলাকায় ১০ মিটারের অধিক ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিং এর জন্য পশুর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং এর গুরুত্ব অপরিসীম বিবেচনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং প্রকল্পটি ২৮/০১/২০২০ ইং তারিখে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। উক্ত প্রকল্পের আওতায় ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২১৬.০৯ ল.ঘ.মি. ড্রেজিং করা হবে। ড্রেজিং কাজটি সম্পন্ন হলে মোংলা বন্দরের জেটিতে ৯.৫-১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে।
 
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত সমীক্ষা অনুযায়ী মোংলা বন্দরে ২০২৫ সালে ৮.৭২ লক্ষ টিইউজ কন্টেইনার এবং ২০৫০ সালে ৪৫.৩২ লক্ষ টিইউজ কন্টেইনার এবং ৩০ হাজারেরও বেশি গাড়ি হ্যান্ডলিং এর সম্ভাবনা রয়েছে। রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র  চালুর পর বার্ষিক ৪৫ লক্ষ মেঃ টন কয়লা কাঁচামাল হিসেবে এবং রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাঁচামাল মোংলা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করতে হবে। এবছর পদ্না সেতু চালু হলে মোংলা বন্দরের ব্যবহার বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। ফলে জাতীয় স্বার্থে মোংলা বন্দরের বর্ধিত চাহিদা সুষ্ঠুভাবে মোকাবেলা করার জন্য মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। এ লক্ষ্যে জনস্বার্থে বন্দরে অধিক ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিং এর জন্য পশুর চ্যানেলের ইনার বারে নাব্যতা বৃদ্ধি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা জরুরী।

প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার পূর্বে ২০১৮ সালে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করার সময় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও জমির মালিকদের সাথে আলোচনা করে ড্রেজিং মাটি ফেলার জন্য জমি নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত জমিসমূহের অধিকাংশ নীচু জমি হওয়ায় বিভিন্ন সময় জোয়ারের পানি দ্বারা প্লাবিত হয়ে এলাকার জনসাধারণের ক্ষতিসাধন করে। ড্রেজিং মাটি দ্বারা জমি ভরাট করা হলে উক্ত জমি পানিতে প্লাবিত হবে না, নদী ভাংগনের আশংকা মুক্ত হবে এবং জমির মূল্যমান বৃদ্ধি পাবে। যাহা উক্ত এলাকার জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।

প্রস্তাবিত জমিসমূহ ২ বছরের জন্য ড্রেজিং মাটি ফেলতে ব্যবহৃত হবে। এই দুই বছরের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হারে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। জমির ব্যবহার শেষে জমির মূল মালিকগণ তাদের মালিকানা ফেরত পাবেন। পশুর নদী সুন্দরবন বেষ্টিত হওয়ায় এবং সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হওয়ায় ড্রেজিং মাটি কোন অবস্থাতেই সুন্দরবনের মধ্যে ফেলা যাবে না। তাই বৃহত্তর জনস্বার্থে অনিবার্য কারণে ড্রেজিং মাটি সুন্দরবনের বাইরে পশুর নদীর তীরবর্তী জমিসমূহে ফেলতে হচ্ছে। পশুর নদীর মাটি পলি মিশ্রিত হওয়ায় ড্রেজিং মাটি ফেলার পর সেখানে ফসলের উৎপাদনশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া এই জমির মধ্যে কোন বসতি না থাকায় কোন পরিবার বাস্তুহারা হওয়ার সম্ভাবনা নাই।

মোংলা বন্দরের গতিশীলতা বাড়লে এই অঞ্চলের মানুষের বহুবিধ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং মানুষের আর্থিক ও সামাজিক উন্নতি সাধিত হবে। ড্রেজিং কাজ বন্ধ হলে মোংলা বন্দর তথা দক্ষিনাঞ্চলসহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্ববহ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এর ফলে দক্ষিনাঞ্চল তথা সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হবে। তাই প্রকল্পের ড্রেজিং কাজ চলমান রাখা অতীব জরুরী। 

অনিবার্য কারণে ড্রেজিংয়ের মাটি পশুর নদীর তীরবর্তী জমিতে ফেলতে হচ্ছে। নদীর মাটি পলিমিশ্রিত হওয়ায় সেখানে ফসলের উৎপাদশীলতা আরও বাড়বে। এ জমিতে কোনো বসতি না থাকায় কোনো পরিবার বাস্তুহারা হওয়ার আশঙ্কা নেই। উল্লেখ্য মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলে ড্রেজিং করে নদের তীরবর্তী স্থানে পলিমাটি মিশ্রিত বালি ফেলার কারণে সেখানে তরমুজসহ অন্যান্য বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। পশুর নদে ড্রেজিংয়ের কাজ বন্ধ হলে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হবে। এ কারণে প্রকল্পের কাজ চলমান রাখা জরুরী। পশুর নদের পশ্চিম তীরে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। অদূর ভবিষ্যতে তা বাণিজ্যিক শ্রেণ্রির জমি হিসেবে ব্যবহারের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।


এমইউআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন