ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news

আমি আদালত ও বিচারকের কাছে কৃতজ্ঞ

আমি আদালত ও বিচারকের কাছে কৃতজ্ঞ
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

শ্বশুরবাড়িতে দাওয়াত রক্ষা নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে শুরু হয় ঝগড়। এ নিয়ে তার স্ত্রী করেন মামলা। মামলা স্বামীকে আসামি করলে স্বামী হাজতবাস করেন ১৫ দিন। তবে স্বামীকে যেতে হয়নি কারাগারে। আদালত উদ্যোগ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব নিরসন করে দেন। এতে তারা সব অভিমান ভুলে নতুন করে শুরু করেন দাম্পত্য জীবন।

সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় সলুকাবাদ ইউনিয়নের গড়েরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল বারি ও তার স্ত্রী নাসিমা আক্তারের ভুল ভেঙে দিয়ে নতুনভাবে বাঁচতে যিনি স্বপ্ন দেখিয়েছেন, তিনি সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন।

শুধু আব্দুল বারির স্ত্রী নাছিমা আক্তার নন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার ৫০ জন নারী। এই ৫০টি মামলার একসঙ্গে রায় দিয়েছেন সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন। কোনো আসামিকে কারাগারে না পাঠিয়ে সংসারজীবন চালিয়ে যাওয়ার শর্তে বাদীদের সঙ্গে আপস করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

গত ১৫ মার্চ (মঙ্গলবার) দুপুরে সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন। এ সময় সব মামলার বাদী-বিবাদী, তাদের আইনজীবী ও পরিবারের লোকজনসহ সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নান্টু রায় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর আদালতের পক্ষ থেকে ৫০ দম্পতিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছাও জানানো হয়।

আব্দুল বারি জানান, চাচাশ্বশুরের ছেলেদের একটি অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা হয়েছিল। পরে শ্বশুরও রাস্তায় পেয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন দাওয়াতে যাব কি না। সেখান থেকেই শুরু হয় ভুল-বোঝাবুঝি। আমার স্ত্রীর সঙ্গে হয় ঝগড়া। এ নিয়ে আমার স্ত্রী আমার বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়েছি অনেকবার। হাজতবাসও করেছি। পরে আদালত নিজ উদ্যোগে আমাদের সংসারজীবন চালিয়ে আপস করিয়ে দিয়েছেন।

আব্দুল বারির স্ত্রী নাছিমা আক্তার বলেন, আমার চাচা দাওয়াত করেছিলেন যাওয়ার জন্য। পরে আমার বাবাও তাকে রাস্তাঘাটে যেখানেই পায়, দাওয়াত দেন। এ নিয়ে আমার স্বামী রাগ করেন। বাড়িতে আসলে আমিও চাপ দিতাম অনুষ্ঠানে যেতে। বাড়িতেও শুরু হয় ঝগড়া। এখান থেকেই মামলা-মোকদ্দমার সূত্রপাত।


তিনি আরও বলেন, আমাদের দুই বছর বয়সী সন্তান রয়েছে। আমরা তাকে লেখাপড়া করাতে চাই। আদালত আমাদের সুযোগ দিয়েছেন। সংসারজীবন চালিয়ে যাওয়ার শর্তে আমাদের আপস করে দিয়েছেন। এ জন্য আমি আদালত ও বিচারকের কাছে কৃতজ্ঞ।

একই গ্রামের বাসিন্দা প্রতিবেশী ইউনূস আলী বলেন, বিয়ে-শাদি করলে একবার বউয়ে রাগ করবে, আরেকবার স্বামী রাগ করবে। এই ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ করা ভালো নয়। এ জন্য দুজনকেই আন্তরিক থাকতে হবে। আমরা চাই তারা যেন একসঙ্গে চলতে পারে।

আব্দুল বারির বড় বোন জুবেদা খাতুন বলেন, আমার ভাই ও ভাইয়ের বউকে বলেছি ঠিকভাবে চলতে। কোনো সমস্যা হলে যেন বড়দের জানায়। একসঙ্গে সংসার করলে ছোটখাটো ঝামেলা হতেই পারে। এ জন্য মামলা করার দরকার নেই।

এ ধরনের সমস্যা প্রতিটি পরিবারেই রয়েছে জানিয়ে বারির চাচা গোলাপ মিয়া বলেন, এর জন্য কেউ কোর্ট-কাছারি করে না। আমার ভাতিজা ভুল করেছে। আদালত এখন আপস করে দিয়েছেন। অনেক কৃতজ্ঞ। আমরা মুরব্বিরা এখন দেখেশুনে রাখব তাদের।

সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) অ্যাডভোকেট হাসান মাহবুব সাদী বলেন, আদালত পৃথক ৫০টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলায় একসঙ্গে যুগান্তকারী একটি রায় দিয়েছেন। আদালতে যে শুধু শাস্তি হয় তা নয়, পরিবারে শান্তিও ফেরানো হয়।

সুনামগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল তুহিন বললেন, বিকল্প উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তির চিন্তা ও আইনের আওতায় থেকে যে কয়টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন, সেগুলো শুভ উদ্যোগ। বিচারপ্রার্থী জনগণের কষ্ট লাঘবের উপায় তৈরি করেছেন। আমরা মনে করি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পারিবারিক শৃঙ্খলা ও শিশুদের সুরক্ষার জন্য এ উদ্যোগটি খুবই মহৎ।

সুনামগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট রোকেস লেইস বললেন, বিচারক মো. জাকির হোসেন তার দায়িত্ব পালনের সময়ে শিশু ও নারীদের মামলাগুলো ভালো সমাধান দিয়েছেন। পারিবারিকভাবে ছোটখাটো ঝামেলা নিয়ে স্বামীকে অভিযুক্ত করে ‘১১ গ’ ধারায় মামলাগুলো স্ত্রীরা করেছিলেন। এগুলো আপস করে দেওয়ার জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। তার দায়িত্ব পালনের সময়ে বেশ কিছু মামলা আপস হয়েছে। এটাকে সাধুবাদ জানাই আমরা।

তিনি আরও বলেন, স্বামী-স্ত্রীর ওপর মামলায় শুধু তাদের দুজনের ওপর প্রভাব পড়ে না। বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন ও সন্তানদের ওপর বেশি প্রভাব পড়ে। তাই এ ধরনের মামলা যাতে কম হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এই মামলাগুলো শুরু হওয়ার আগেই যাতে শেষ করে দেওয়া যায়, সেদিকে লক্ষ রাখা প্রয়োজন। মিলিয়ে দেওয়া অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ।


এসএম
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন