অসহায়ের পাশে নেই বিত্তশালীরা


করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত লকডাউনে (কঠোর বিধিনিষেধ) অভাব অনটনে দিনযাপন করছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়েছে মানুষ। আর বেকায়দায় পড়েছে মধ্যবিত্ত। না পাড়ছেন কারো কাছে চাইতে; না পাচ্ছেন করো সহায়তা। গতবছর লকডাউনে বেসরকারি উদ্যোগে দারিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা গেলেও এবছর তেমন কোন কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। দেশের বিত্তশালীদের নেই কোন ভূমিকা। এমনকি রাজনৈতিক নেতাদেরও পাওয়া যাচ্ছে না দরিদ্র, অসহায় মানুষের পাশে। সরকারি উদ্যোগে সহায়তা করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
এদিকে গতকাল সোমবার করোনা পরিস্থিতির মধ্যে চলমান বিধিনিষেধ আবারও বাড়িয়েছে সরকার। এই বিধিনিষেধ ১৬ মে পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে দিনমজুর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে দেখা দিয়েছে অর্থ ও খাদ্য সংকট। এমন সংকটময় মুহূর্তে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে নগরীর দারিদ্র মানুষেরা।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহযোগিতায় ২০১৫ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে শহরের বস্তিগুলোতে চালানো জরিপ অনুযায়ী, শহরের ৩৫টি বস্তিতে তখন ৫০ হাজার মানুষ বাস করত। গত ৫ বছরে বরিশালে বস্তির সংখ্যা না বাড়লেও বস্তিবাসী মানুষের সংখ্যা আরও বেড়েছে। এই দরিদ্র জনগোষ্ঠী সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এখন প্রায় ৭০ হাজার।
সরকারি হিসাবে দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ছিল প্রায় সাড়ে তিন কোটি। তবে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বলছে, করোনায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে। এপ্রিল মাসে ব্র্যাক ও পিপিআরসির প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কভিডের আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। এতে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ছয় কোটির কাছাকাছি গিয়ে ঠেকেছে। নতুন ওই জরিপে দেখা যায়, ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে এই নতুন দরিদ্র শ্রেণির সংখ্যা জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে। এছাড়া গত বছর ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ বস্তিবাসী শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যান, যাদের ৯ দশমিক ৮ শতাংশ এখনও ফেরেনি। আবার প্রাক-কভিড সময়ের তুলনায় শহরের বস্তিবাসীর আয় কমলেও খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় গত জুনের তুলনায় এ বছরের মার্চে দ্বিগুণ হয়েছে।
নগরীর পলাশপুর বস্তির বাসিন্দা দিনমজুর আবদুল্লাহ বলেন, সরকার যহন লকডাউন দিয়া আমাগো ঘরে রাখছে, আয় রোজগারের পথ বন্ধ, সরকার আমাগো খাওনের ব্যবস্থা করুক। এতদিন যদি ঘরবন্দি থাকতে হয় খাওন আইবে কই দিয়া? কেউ তো আমাগো দুঃখ দুর্দশা বোঝবেনা। বড়লোক, টাকাপয়সা ওয়ালা লোকজনের তো কোন সমস্যা নাই। না খাইয়া মরি তো আমরাই। তারাও তো আমাগো কোন সহায়তা করেনা।
গতবছর করোনায় অসহায় মানুষদের মাঝে আর্থিক সহায়তা করেছেন নগরীর দুটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী সোহাগ। ইচ্ছা থাকলেও এবছর কোন আর্থিক সহায়তা করতে পারছেন না বলে জানান তিনি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিগত ১ বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে আছে, প্রতিষ্ঠান থেকে কোন আয় নেই। শিক্ষকদের বেতন দিতে হচ্ছে। নেই ব্যবসা। এই অবস্থায় নিজেই খুব খারাপ পরিস্থির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক রেজওয়ানা ইসলাম বলেন, গতবছর হঠাৎ করেই লকডাউন, অনেকে চাকরি হারিয়েছে, এরকম একটা অবস্থায় বিত্তশালীরা অসহায় মানুষকে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। কিন্তু এবছর বেসরকারি খাতে প্রফিট কমে অর্র্ধেকে নেমেছে। সারা পৃথিবীতেই বর্তমানে মন্দা চলছে। এক বছর ধরে ব্যবসায়ীরা তুলনামূলকভাবে খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যারা এক্সট্রিম পর্যায়ে ধনী তারা হয়তো টিকে আছে কিন্তু মধ্যম পর্যায়ের ধনীরা লোকশানের মুখে পড়েছে। একারণেই স্বভাবিকভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে আর্থিক সহায়তা কমে আসছে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এর সদস্য সচিব ডাঃ মনিষা চক্রবর্তী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ না দেয়া সরকারের গণবিরোধী যে চরিত্র সেই চরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ। এর আগে আমরা দেখেছি এস. আলম গ্রুপের ৩১ শ’ ৭০ কোটি টাকার কর মৌকুফ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সারা দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীরর জন্য বরাদ্দ হয় ১০ কোটি টাকা। এটা থেকেই বোঝা যায় সরকার কাদের জন্য, কাদের পক্ষে দেশ পরিচালনা করে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন রক্ষায় আমরা রিকশা মিছিল করেছি। আমরা আশা করবো সরকার অন্তত ১ মাসের খাবার এবং ৫ হাজার টাকা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রত্যেক পরিবারে কাছে পৌঁছে দিবে।
এমইউআর
