ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news

করোনায় বরিশালে বেড়েছে কর্মহীনতা 

করোনায় বরিশালে বেড়েছে কর্মহীনতা 
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

-দেয়ালে দেয়ালে কর্মহীনতার ছাপ
-টিউশন হারিয়ে বিপাকে শিক্ষার্থীরা
-চাকরি হারানোরা ঝুকছেন টিউশনিতে

করোনাভাইরাসে সংক্রমনে বহির্বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশও বেড়েছে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা। বরিশালে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার। এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত কর্মজীবীরা এখন কর্মহীন। বেসরকারি খাতে চাকরি হারানো মানুষ নতুন কোন কর্মক্ষেত্র খুঁজে না পাওয়ায় পড়েছেন বিপাকে। আবার দেশের বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় টিউশনি করে খরচ চালানো শিক্ষার্থীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শহরের দেয়ালে দেয়ালে, বিদ্যুতের খুটিতে, খালি জায়গায় সর্বত্রই দেখা মিলছে টিউশনের বিজ্ঞাপন। আগে কখনোই এমন টিউশনের বিজ্ঞাপনে ছেয়ে যায়নি শহরের খালি দেয়ালগুলো। আবার প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও বেকার বসে আছেন। ক্লাস নেই, নেই কোচিং, নেই আয়। পাচ্ছেন না নতুন কর্মক্ষেত্র। অর্থসংকটে ভোগা এমনই কষ্টের গল্পের কথা বলেছেন করোনায় ভুক্তভোগী কর্মহীনরা।

প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ তরুণ-তরুণী বাংলাদেশের চাকরির বাজারে যোগদান করে। এদের বড় একটি সংখ্যক স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ করে সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশের চেষ্টা করেন। কিন্তু এবছর নেই নতুন চাকরি। তাই খুঁজছেন টিউশনি। এমনিতেই দেশে বেকারত্বের হার অনেক। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সেই সংকট আরো বেড়েছে। বিবিএসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর শেষে দেশে তিন কোটি ২৮ লাখ মানুষ দরিদ্র ছিল। করোনাকালে দেশে নতুন করে আরো এক কোটি ৬৩ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে বলে স¤প্রতি জানিয়েছে সরকারের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা (বিআইডিএস)। সেই হিসাবে দেশে এই করোনাকালে পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ বেঁচে থাকার লড়াই করে যাচ্ছেন।

করোনা  মহামারীতে দীর্ঘ ১০ মাস বাড়িতে বন্দি থাকার পর টিউশনের আশায় ফের বরিশালে পাড়ি জমিয়েছেন ইরফানুর রিফাত। শহরের দেয়ালে দেয়ালে  বাসায় গিয়ে যত্ন সহকারে পড়ানো হয় সম্বলিত পোস্টার লাগিয়েছেন গভীর রাতে।  অপেক্ষার প্রহর গুনেন কখন কল আসবে। কিন্তু কল আর আসে না। তিনি জানান, কবে এই মহামারী ও দন্যতা থেকে মুক্তি মিলবে।আর কবেই বা আমি টিউশনিতে ফিরতে পারবো তা আল্লাহ ভালো জানে।

নগরীর সাগরদিতে ভাড়া বাসায় থাকেন হেদায়েতুল ইসলাম (রূপক)।  তিনি বেসরকারি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইংরেজী শিক্ষক। নিজের নাম ও প্রতিষ্ঠানের নাম গোপন রাখার শর্তে তিনি বলেন, করোনা শুরুর ৬ মাস আগে ৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ভাড়া বাসায় নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন একটি কিন্টারগার্টেন। ১২ জন শিক্ষক ও ১৪৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ভালোই চলছিল তার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু করোনায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষকদের বেতন ও বাসা ভাড়া বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। প্রতিষ্ঠানের সব আয়ও বন্ধ। শেষে বাধ্য হয়েই ভাড়া বাসা ছেড়ে দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠান।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু গাজি জানান, যারা নিজের টিউশন  ফি দিয়ে চলতো করোনায় টিউশন হারিয়ে  তারা বিপাকে আছে।  মেসের ভাড়া, খাওয়া খরচ ও বাকি নিজের হাত খরচ। যেন এক মহামারির অভিশাপ রুপে দেখা দিয়েছে।  পরিবারেরও ইনকাম কমে যাওয়ায় কম বেশি সকলেই খেয়ে না খেয়ে জীবন পার করছে।  পরিবহন বন্ধ থাকায় বাড়িতেও যেতে পারছি না। বাড়তি  পরিবহন খরচ ওদিকে সামনে ইদ। যেন হতাশায় ভরিয়ে তুলেছে সবার জীবন। একাডেমিক পড়ালেখা থেকে একরকম দূরে থাকায় মানসিক ভাবেও ভালো নেই।  চাকরি ও ভবিষ্যত নিয়ে খুব মনোবল হীন হয়ে পড়েছে অনেকে। সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ  কেউ কোন সহায়তা করেনি।  উচ্চ শিক্ষা নিতে আসায় যেন আজ আমাদেন জীবনে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবারকে হেল্প করতে চাইলেও করতে পারছিনা। বিশ্ববিদ্যালয় এক বছরেরও বেশি বন্ধ, সেশনজট, ইনকামের একমাত্র উৎস হারিয়ে এক রকম অসহায় জীবনযাপন করছে সবাই।

বরিশাল সরকারি ব্রোজমোহন কলেজের শিক্ষার্থী আবির রায়হান বলেন, কলেজে ভর্তি হওয়ার পর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য টিউশনি ছিল একমাত্র সম্বল। রাতের আঁধারে অচেনা শহরের দেওয়ালে দেওয়ালে পোস্টার লাগিয়ে টিউশন খুঁজে পাই। নিজে চলে পরিবারকে সহায়তা করার একমাত্র পথ ছিল এটি। কিন্তু করোনার থাবায় বন্ধ হয়ে আছে জীবিকার পথ। মানবেতর জীবনযাপন করছি, জানিনা কবে এই ভয়াল গ্রাস থেকে মুক্তি পাবো।

সদ্য স্নাতকোত্তর পাশ করে চাকরি যুদ্ধে নামা  জহির রায়হান বলেন, অনেকে আছেন যারা টিউশনির টাকা দিয়ে শুধু নিজের খরচের পাশাপাশী  পরিবারকেও টাকা পাঠান। আমি নিজেও এর ব্যতিক্রম না। তিনি বলেন, আমার কলেজের এক ছোট ভাইর  বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবার থেকে অর্থিক সাপোর্ট বন্ধ হয়ে যায়। সে ৩ টা  টিউশনি করে মাসে ১২ হাজার টাকা পেত। এই টাকা দিয়েই নিজের মেস ভাড়া, খাবার খরচ, পড়ালেখার খরচসহ দুই ভাই বোন ও মায়ের খরচ ভালোভাবে চালিয়ে নিচ্ছিল। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে টিউশনি বন্ধ রয়েছে। আর এখন করোনার কি হবে পরের কথা আপাতত বেঁচে থাকায় যে কঠিন হয়ে উঠেছে। এমতাবস্থায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি এ করোনা পরিস্থিতি যেন দ্রুত স্বাভাবিক হয়।
 


/ইই
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন