বরিশাল পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্রে অকারণেই বন্ধ আল্ট্রাসনোগ্রাফি


ডা. তারিনা রহমানের পরামর্শে টিভিএস আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন পরামাণু চিকিৎসা কেন্দ্রে (বরিশাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড এ্যালাইড সাইন্সেস) গিয়েছিলেন শামিমা ইয়াসমিন।
কথিত নিয়োম মেনে সকাল ৭টায় গিয়ে সিরিয়াল দিয়ে দাঁড়ান তিনি। দীর্ঘ দুই ঘন্টা প্রচণ্ড রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে সকাল ৯টায় কাউন্টারে পরীক্ষার ফি জমা দিতে যান তিনি। ব্যবস্থাপত্র হাতে নিয়েই কাউন্টার ক্লার্ক টিভিএস পরীক্ষা হবে না বলে স্রেফ জানিয়ে দেন।
কারণ জিজ্ঞাসা করতেই কাউন্টারে দাঁয়িত্বরতরা বলেন, ‘ডাক্তার ম্যাডাম অসুস্থ। তিনি ২৮ এপ্রিল আসবেন। এরপর থেকে পরীক্ষা হবে। ২৮ তারিখই তিনি কিভাবে কিভাবে সুস্থ হবেন এমন প্রশ্ন উঠলেও তার জবাব দিতে পারেননি দায়িত্বরতরা।
একজন শামিমাই নন, মহামারি করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরু থেকে প্রতিদিনই এমন অনেক নারী চিকিৎসকের পরামর্শে টিভিএস আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে এসে বিমুখ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে লাঞ্ছিতও হচ্ছেন অনেক রোগী ও তাদের স্বজন। তবে ব্যয়বহুল এই পরীক্ষা নিয়ে কর্তৃপক্ষের আশানূরূপ কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘দক্ষিণাঞ্চলে সনোলজিক্যাল পরীক্ষার একমাত্র নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান বরিশাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড এ্যালাইড সাইন্সেস (পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্র)। সরকার নির্ধারিত মূল্যে মানসম্মত পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটিতে। কিন্তু রহস্যজনক কারণেই প্রতিষ্ঠানটিতে বন্ধ রয়েছে নারীদের টিভিএস আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা।
আলাপকালে প্রতিষ্ঠানটির অভ্যার্থনা কক্ষে দায়িত্বরতরা জানিয়েছেন, ‘মহামারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরু থেকেই পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্রে টিভিএস আল্ট্রাসনোগ্রাফি বন্ধ রয়েছে। এটি নারীদের গোপনাঙ্গের পরীক্ষা হাওয়ায় নারী চিকিৎসক ছাড়া করানো হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানটিতে দুজন নারী চিকিৎসক থাকলেও তারা দীর্ঘ দিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। এর মধ্যে ডা. নুসরাত জাহান মাতৃত্বজনিত কারণে ছুটি আছেন। অপরজন ফেরদৌস শারীমনও অসুস্থতা জনিত কারণে অনুপস্থিত বলে দাবি করা হলেও তার কি রোগ হয়েছে তা জানা নেই কারর।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, ‘টিভিএস পরীক্ষার ফি গ্রহণ না করার জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ২৮ এপ্রিলের আগে এ পরীক্ষা হবে না বলে রোগীদের জানিয়ে দিতে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী এখানে আসা রোগীদের আমরা বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়ে দিচ্ছি।
অপরদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে পরমাণু আল্ট্রাউন্ড কেন্দ্রে গিয়ে টিভিএস পরীক্ষার বিষয়টি সম্পকে খোঁজ নিলে দায়িত্বরতরা জানিয়েছেন আগামী ২ মে’র আগে ফেরদৌস শারমীন কর্মস্থলে আসবেন না। এ কারণে ওইদিন পর্যন্ত টিভিএস পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু থেকে টিভিএস সনোগ্রাফি বন্ধ থাকলেও প্রায় আড়াই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে কালার ডবলার আল্ট্রাসনোগ্রাফি। ইতিপূর্বে ডা. নামিদ নামের একজন সনোলজিস্ট বরিশাল পরমাণু আল্ট্রাসাউন্ড কেন্দ্রে এ পরীক্ষাটি করতেন। তিনি ময়মনসিংহে বদলি হওয়ার পর থেকে ব্যয়বহুল পরীক্ষাটি বন্ধ রয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, ‘পরমাণু শক্তি কমিশনের এ প্রতিষ্ঠানটিতে নারীদের টিভিএস নামক ওই আল্ট্রাসনোগ্রাফি’র ফি রাখা হয় ৭০০ টাকা। এছাড়া কালার ডবলারের ফি ১২শ টাকা। বাইরের যে কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টিভিএস’র ফি দেড় হাজার এবং কালার ডবলারের ফি রাখা হচ্ছে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ‘টিভিএস এবং কালার ডবলার আল্ট্রাসনোগ্রাফি সকল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হয় না। এর মধ্যে কালারডবলার আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেডিনোভা, এ্যাপোলো এবং ল্যাবএইড এবং পপুলারসহ হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে হয়। আবার টিভিএস পরীক্ষাও সচরাচল সকল প্রতিষ্ঠানে হচ্ছে। তার মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও হচ্ছে এ দুটি আল্ট্রাসনোগ্রাফি। এর ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এটি ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বরিশাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড এ্যালাইড সাইন্সেস এর তত্ত্বাবধায়ক ডা. নাফিজা আক্তার জানিয়েছেন, ‘আল্ট্রাসনোগ্রাফি বন্ধ থাকার বিষয়টি ঠিক নয়। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর থেকে টিভিএস পরীক্ষাটি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। যে রোগীটি গুরুত্বপূর্ণ তার পরীক্ষা আমরা করছি। আর যাদেরটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে না তাদেরকে ২৮ এপ্রিলের পরে আসতে বলা হয়েছে। তবে গুরুত্ব এবং গুরুত্বপূর্ণ নন এমন রোগীদের কিভাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কোন সদোত্তর দিতে পারেননি তিনি।
এমইউআর
