বন্ধুদের সঙ্গে মেতে ছিল তন্ময়, দুর্বৃত্তদের অস্ত্রের কোপে গেল প্রাণ


সকাল থেকেই বন্ধুদের সঙ্গে মেতে ছিল তন্ময়। বিদ্যালয় আঙিনায় গতকাল রবিবার ছিল এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় আয়োজন। সেই অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর ধারালো অস্ত্র হাতে মোটরসাইকেলে চেপে তিন অচেনা দুর্বৃত্ত ঢুকে পড়ে স্কুলে। হঠাৎ তন্ময়কে ধরে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে তারা। আর তাতেই নিথর এসএসসি পরীক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান তন্ময় (১৬)।
সহপাঠীরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গার গুলশানপাড়ার আল হেলাল মাধ্যমিক ইসলামী একাডেমি ক্যাম্পাসে। তন্ময় চুয়াডাঙ্গা শহরের নূরনগর কলোনি এলাকার আব্দুল মজিদের ছেলে। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। এ ঘটনায় গত রাত ৯টা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি। পুলিশও কাউকে আটক করতে পারেনি। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
কী কারণে তন্ময়কে হত্যা করা হয়েছে, সে রহস্যের কিনারা এখনো করতে পারেনি পুলিশ। তবে তার কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রেমবিষয়ক ঘটনা নিয়ে বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড হতে পারে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঘটনার সময় মোবাইল ফোনে কথা বলছিল তন্ময়। পেছন থেকে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপ দেয় ঘাতকরা। পরে মোটরসাইকেলে চেপেই হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
তন্ময় নিজেও একটি মোটরসাইকেলে করে স্কুলে এসেছিল।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাকিল আর সালান জানান, হাসপাতালে আনার সঙ্গে সঙ্গে তাকে অক্সিজেন দেওয়া হয়েছিল। তবে পাঁচ মিনিটের মধ্যে মারা যায় তন্ময়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। পিঠের দিকে এবং মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। এর মধ্যে পিঠের দিকের আঘাতটি গুরুতর। ওই আঘাতে তার ফুসফুস ছিদ্র হয়ে গেছে। এ কারণে সে অক্সিজেন নিতে পারেনি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রিপন আলী বলেন, ‘বিদায় অনুষ্ঠানটি হচ্ছিল বিদ্যালয়ের খোলা চত্বরে। অনুষ্ঠান শেষ হলে আমরা অফিসকক্ষে আসি। কিছুক্ষণ পরই বাইরে হট্টগোল শোনা যায়। বাইরে গিয়ে দেখি, কোপানো অবস্থায় পড়ে আছে তন্ময়।’ প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, ‘তন্ময় ছিল ভিজে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সেখানে নবম শ্রেণিতে সে ভালো ফল করতে পারেনি। পরে সে আমাদের স্কুলে ভর্তি হয়ে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করে।’
গতকাল বিকেলে শহরের নূরনগর কলোনি এলাকায় তন্ময়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে শতাধিক মানুষের জটলা। তাদের সবার দাবি, হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
তন্ময়ের বাবা আব্দুল মজিদ বলেন, ‘আমার ছেলেকে কারা মেরেছে এবং কেন মেরেছে তা বলতে পারব না। আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘বিদ্যালয় এলাকায় কাছাকাছি একটি সিসি ক্যামেরার খোঁজ মিলেছে। সেটির ফুটেজ দেখে কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন গোরস্তানপাড়ার শিহাবসহ চারজনের ব্যাপারে আমরা প্রাথমিক তথ্য পেয়েছি। তাদের মধ্যে একজন বাদে তিনজনই এর আগে কোনো না কোনো মামলায় কারাগারে ছিল। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া সবার বয়স ১৮ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।’
নান্দাইলে মাদরাসার শ্রেনিকক্ষে হামলা : এদিকে ময়মনসিংহ থেকে আঞ্চলিক প্রতিনিধি জানান, নান্দাইলের গাঙাইল ইউনিয়নের নিভিয়াঘাটা মাদরাসার শ্রেণিকক্ষে গতকাল দুপুরে পাঠদান চলাকালে হামলা চালিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত। এ ঘটনায় দপ্তরিসহ ছয় শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল সকালে মাদরাসার অদূরে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়াধাওয়ি চলছিল। ওই সময় দশম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী ঘটনা দেখতে বের হয়। এর মধ্যে একটি পক্ষ প্রতিপক্ষের ওপর হামলা না করে দল বেঁধে মাদরাসায় ঢোকে। পরে তারা দশম শ্রেণিতে ঢুকে অতর্কিতে শিক্ষার্থীদের পেটাতে থাকে। তাদের কেন মারধর করা হচ্ছে—এ ঘটনা জানতে মাদরাসার দপ্তরি মো. হুমায়ুন এগিয়ে এলে তাঁকেও পেটানো হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁর বাঁ চোখ। পরে আহত ছয় শিক্ষার্থীকে নান্দাইল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়।
এ ব্যাপারে প্রভাষক মো. নুরুল আমীন জানান, কোনো কারণ ছাড়াই একদল দুর্বৃত্ত হঠাৎ মাদরাসার শ্রেণিকক্ষে ঢুকে হামলা চালায়। কেন এই হামলা এর কারণ এখনো জানা যায়নি।
এ ব্যাপারে নান্দাইল থানার ওসি মিজানুর রহমান আকন্দ জানান, খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
এসএম
