ইলিশের নিষেধাজ্ঞায় কর্মহীন আনোয়ারা উপকূলের জেলেরা


দীর্ঘ ৬৫ দিনের মৎস্য অবরোধ কাটিয়ে গত ২৪ জুলাই ৬শত ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে নামে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপকূলের প্রায় ১০ হাজার জেলে। তাতেও কপাল খুলেনি তাদের। প্রথম দিকে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ না পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়তে হয় এবং পরবর্তীতে প্রায় দীর্ঘ একমাস অপেক্ষার পর ইলিশের ভরা মৌসুমের খরা কাটিয়ে আস্তে আস্তে জেলেদের জালে ধরা দিতে থাকে ইলিশ।
শুরু হয় উপকূলের ঘাটে ইলিশের মেলা। জেলেদের মুখে ফুটে হাঁসি। তবে তাদের হাঁসি যেন আর দীর্ঘায়িত হলোনা। মা ইলিশ প্রজনন নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২দিন ইলিশ মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় আবারও ইলিশ পল্লীতে যেন নেমে এসেছে খরা। ধার-দেনা করে সাগরে বোট নামিয়ে শ্রমিকের বেতনসহ অনেক লোকসানে রয়েছে বলে জানান বোট মালিকরা।
উপজেলার গলাকাটা ঘাট এবং সর্ববৃহৎ উঠান মাঝির ঘাট ঘুরে দেখা যায়, কয়েক দিন আগে যেখানে মাছের ক্রেতা-বিক্রেতায় সকাল-বিকাল ভরপুর ছিলো পুরো ঘাট। এখন সেখানে কয়েকজন জেলে ছাড়া কেউ নেই। দেখাযায়, সমুদ্রে থেকে সব ট্রলারগুলোকে কূলে তুলে সারিবদ্ধ ভাবে নোঙ্গর করা হয়েছে। অনেকেই নিষেধাজ্ঞার ফাঁকে নিজেদের জালগুলোকে সেলাই করে ঠিক করে নিচ্ছে । আবার অনেককে দেখা যায় মাছ ধরার জালগুলো রশি বেঁধে গাড়ি করে নিয়ে যেতে। ক্রেতার আনাগোনা নেই তাই ইলিশ মেলাকে ঘিরে গড়ে উঠা অর্ধশত চায়ের দোকানপাট গুলোও বন্ধ করে দিচ্ছে।
শৈবাল নামের এক বোট মালিক জানান, অনেক ধার-দেনা করে আমরা সাগরে বোট নামিয়েছিলাম। প্রথমদিকে মাছ না পেলেও শেষের দিকে মাছ পড়তেছিলো। কিন্তু হঠাৎ নিষেধাজ্ঞায় আমরা খুবই বিপাকে পড়ে গেছি। গলাকাটা ঘাটের অর্থ-সম্পাদক নূর মোহাম্মদ জানান, আমরা জেলেরা এই সাগরে মাছ ধরা ছাড়া আর অন্য কোন কাজ জানিনা। তাই এখানে মাছ ধরেই নিজের পরিবার চালাতে হয়, সন্তানদের লেখা-পড়া করাতে হয়। গত বছর অক্টোবরের শেষের দিকে নিষেধাজ্ঞা দিলেও এই বছর প্রথমেই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিছে।
যার কারণে আমরা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রাস্থ হয়েছি। উঠান মাঝির ঘাট কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ নাছির জানান, সবাই আড়ৎদার, মহাজন, ব্যাংক বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে সাগরে বোট নামিয়েছে। প্রথম দিকে শুধু খরচ পুষিয়েছি। শেষমেশ যখন জালে ইলিশ পড়া শুরু হয়েছে তখনই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো। অন্যান্য বছর আরও পরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও এই বছর ভরা মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় আমরা সবাই লোকসানে আছি। আর কয়েক দিন সময় পেলে মোটামোটি খরচ পুষিয়ে নেওয়া যেত।
এই বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রাশিদুল হক বলেন, মা ইলিশ প্রজনন নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন ইলিশ মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এরপর আবারও নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। মাছ ধরার এই বন্ধ সময়ের জন্য প্রতি জেলেকে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। এবং ভবিষ্যতে তাদের ক্ষতি পোষাতে প্রণোদনার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এস, এম, সালাহ্উদ্দীন /এইচকেআর
