ঝালকাঠীতে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী ঠাঁসা


প্রচন্ড গরমে ঝালকাঠিতে ডায়রিয়া ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ১৫ দিনে তিন হাজারেরও বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শয্যা সংকটের কারনে হাসপাতালের বারান্দায়, মেঝে, সিঁড়ির নিচেসহ যে যেখানে পারছেন সেখানে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জেলার চারটি হাসপাতালে আইভি স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে। এমন দুরবস্থার মধ্যে হাসপাতালের সেবীকাদের বির”দ্ধে সঠিকভাবে চিকিৎসা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে সেবীকাদের দাবি, ভয়াবহ পরিস্থিতি সামাল দিতে তাঁদের হিমসিম খেতে হচ্ছে।
চিকিৎসকরা জানান, প্রচন্ড গরম, নদীর পানি নোনা, খাবারে বিষক্রিয়া ও অনাবৃষ্টির কারনে ঝালকাঠিতে বেড়েছে ডায়রিয়া। গত ১৫ দিন ধরে হাসপাতালগুলোতে এ রোগে আক্রান্ত রোগী ঠাঁসা। করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ডায়রিয়ার প্রকোপে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টির হয়েছে। ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল, নলছিটি, রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিদিন ৫ শতাধিক রোগী ভর্তি হচ্ছে।
এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্করা। হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে যে যেখানে পারছেন খালি জায়গায় চাদর বিছিয়ে গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে, সেবীকারাও ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন না। হাসপাতালের মেঝেতে নোংড়া পরিবেশে চিকিৎসা নেওয়ায় ক্ষুব্দ রোগীর স্বজনরা।
এমন পরিস্থিতিতে দেখা দিয়েছে আইভি স্যালাইন সংকট। একজন রোগীকে একটির বেশি স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে না হাসপাতাল থেকে। বেশি প্রয়োজন হলে বাইরের ফার্মেসি থেকে স্যালাইন বেশি দামে কিনতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। তবে আশার কথা হচ্ছে, ঝালকাঠি-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু সদর হাসপাতাল ও নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুই হাজার স্যালাইন সরবরাহ করেছেন। এছাড়াও এক হাজার আইভি স্যালাইন হাসপাতালে পাঠিয়েছেন ব্যবসায়ী মাহফুজ খান।
সদর উপজেলার পিপলিতা গ্রামের ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী তাছলিমা বেগম বলেন, আমি দুই দিন ধরে ডায়রিয়ায় ভুগছি। বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। এখানে প্রথম দিন একটি আইভি স্যালাইন দিছে। পরে আরো তিনটি স্যালাইন লেগেছে, তা বাইরের দোকান থেকে কিনে আনতে হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগীর স্বামী অভিযোগ করেন, আমার স্ত্রী অসুস্থ হলে সোমবার রাতে হাসপাতালে নিয়ে আসি। সেবীকারা বাইরে থেকে স্যালাইন কিনে আনতে বলেন। আমি এনে দিলেও তাঁরা স্যালাইন পুস করেন সকাল ৭টায়। তাদের হাতে পায়ে ধরে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সদর হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ সেবীকা নুপুর রানী বলেন, রোগীর চাপ সালাতে আমরা হিমসিম খাচ্ছি। রাত ১২টা থেকে ১২ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছি, কাউকে কম সেবা দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু রোগীদের স্বজনকেও সহনশীল হতে হবে। আমারা সবাইকে সমান চোখে দেখি। চিকিৎসায় কোন অবহেল হচ্ছে না।
স্যালাইন সংকটের কথা স্বীকার করে সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী বলেন, ডায়রিয়া পরিস্থিতি ভয়াবহ, এই মুহূর্তে মানুষকে সচেতন থাকতে হবে। প্রচন্ড গরমে জুস, অপরিপক্ক আম ও ভাজাপোড়া খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। স্যালাইন সংকটের কথা শুনে আমাদের সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু মহোদয় দুই হাজার আইভি স্যালাইন দিয়েছেন। আরো অনেকেই এগিয়ে আসছেন।
এইচকেআর
