রাজাপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভেঙে পড়েছে


ঝালকাঠির রাজাপুরে নির্মাণের এক মাস না যেতেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর ভেঙে পড়েছে। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ঘরটি তৈরি করায় এমন অবস্থা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা জানান, উপজেলা মঠবাড়ি ইউনিয়নে ধানসিঁড়ি নদীর তীরে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য ১৪টি ঘর তৈরি করা হয়। গত ২০ জুন জমিসহ উপকারভোগীদের ঘর বুঝিয়ে দেয় উপজেলা প্রশাসন। গত এক সপ্তাহ আগে ওই আশ্রয়ন প্রকল্পের ৪২ নম্বর ঘরটির পেছনের অংশ ভেঙে পড়ে। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় ওয়ার্ডের চৌকিদার ও ঠিকাদারের সহযোগীকে নিয়ে ভেঙে যায়ওয়া অংশটি গুড়িয়ে নদীর পাড়ে পাইলিং দিয়ে সেখানে ফেলে রাখে। বিষয়টি রবিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় জেলাজুড়ে।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোক্তার হোসেন জানিয়েছেন ভেঙে যাওয়া ঘরটি এখনো কাউকে হস্তান্তর করা হয়নি। সম্পূর্ণ ঠিকঠাক করে উপকার ভোগীকে হস্তান্তর করা হবে। জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় রাজাপুরে প্রথম দফায় ৩৩৩টি ঘর নির্মাণ করে গৃহহীন দেওয়া হয়। এ প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে গত ২০ জুন আরো ৪৭টি পরিবারকে জমিসহ ঘর বুঝিয়ে দেয় উপজেলা প্রশাসন।
এতে উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের ধানসিঁড়ি নদীর পাড়ে ইন্দ্রপাশা গ্রামে ১৪টি ঘর নির্মাণ করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, দ্বিতীয় ধাপে নির্মিত ১৪টি ঘরের আড়া ও টিনের ছাওনির নিচে শিলকড়ই কিংবা ভাল মেহগনী কাঠ ব্যাবহার করার কথা থাকলেও স্থানীয় নিম্নমানের রেইনট্রি কিংবা চাম্বল কাঠ ব্যবহার করেছেন ঠিকাদার। সরেজমিনে দেখা যায়, এ প্রকল্পের ১৪টি ঘরের আটটি ঘর এক মাসের মাথায় সংস্কার উপযুক্ত হয়ে পড়েছে। প্রতিটি ঘরের মেঝে ফেটে গিয়ে গর্তে পরিনত হয়েছে। কয়েকটি ঘরের সামনের পিলার ভেঙে পড়েছে, দেয়ালের পলেস্তরা খসে পড়ছে, টিনের ছাউনি দিয়ে ভেতরে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করছে। দেয়াল ফাটল ধরেছে, জানালা খুলে পড়ে যাচ্ছে।
এ প্রকল্পের বাসিন্দা সুবিধাভোগী মমতাজ বেগম (৪৫) বলেন, আমাগো কিছু নাই দেইখ্যা প্রধানমন্ত্রী একখান ঘর দিছে, কিন্তু ঠিকাদারের কাজের মান খারাপের কারনে ঘরের যে অবস্থা তাতে যেকোন সময় ভাইঙ্গা মাথার উপর পড়তে পারে। ৪২ নম্বর ঘর ভাইঙ্গা পড়ার পর হইতেই আমরা আতঙ্কে আছি। আবদুর রহিম (৫০) বলেন, এতদিন এদিক ওদিক থাকার পর মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই পাইলেও মাত্র এক মাসেই ঘরের বিভিন্ন জায়গা ফাটল ধরেছে। ভাঙ্গা শুরু হইছে,মনে হয় আর তিন মাস পর এই ঘরে থাকার অবস্থা থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর এই সুন্দর উদ্দ্যোগকে যারা প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তাদের বিচার দাবি করছি।
এ ব্যাপারে রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোক্তার হোসেন বলেন, এই ঘরটি বরাদ্দ রয়েছে আছিয়া বেগম নামে এক ভ‚মিহীন নারীর জন্য। এ ঘরটি নির্মাণের সময় নিচে একটি ডোবা ছিল। এটা বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছিল, হয়তো নিচের বালু সরে গিয়ে ভেঙে গেছে। আমরা এ প্রকল্পের ১৩টি ঘর হস্তান্তর করেছি। একটি শুধু বাকি রেখেছিলাম। ভেঙে যাওয়া অংশটি পুনরায় নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। সব ঠিক হয়ে গেলে ঘর হস্তান্তর করা হবে। অন্যকোন ঘরে সমস্যা থাকলেও তা ঠিক করে দেওয়া হবে।
এইচকেআর
