সেনা কর্মকর্তার যোগদানের পরেই সুখবর এলো শেবাচিম হাসপাতালে
বরিশালবাসীর বিশ্বাস ছিল সেনাবাহিনী থেকে পরিচালক নিয়োগ হলে স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন ঘটবে দক্ষিণ বাংলার সর্ববৃহৎ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটতে শুরু করেছে এরই মধ্যে।
সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মশিউল মুনীর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের একদিনের মাথায় সুখবর নিয়ে এসেছেন এ অঞ্চলের অসহায় রোগীদের জন্য। খুব শীঘ্রই প্রতিষ্ঠানটিতে তিনি যুক্ত করতে যাচ্ছেন পরীক্ষা নিরীক্ষার তিনটি আধুনিক যন্ত্র।
এরই মধ্যে ঢাকার কেন্দ্রীয় মেডিকেল স্টোর (সিএমএসডি) থেকে যন্ত্রপাতিগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে শেবাচিম হাসপাতালের জন্য। এগুলো স্থাপন হলে সল্প এবং বিনামূল্যে হৃদরোগ ও উন্নত দন্ত চিকিৎসা সেবা পাবে এ অঞ্চলের মানুষ।
এমনটাই জানিয়েছেন, হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. এইচএম মনিরুজ্জামান। তিনি জানিয়েছেন, সিএমএসডি স্টোরে মজুদ থাকা সাপেক্ষে হৃদরোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্র ইকোকার্ডিওগ্রাম ও ব্যায়াম সহনশীলতা পরীক্ষার ইটিটি মেশিন এবং দন্ত চিকিৎসার এক্স-রে মেশিন। খুব শীঘ্রই এগুলো রোগীদের সেবায় হাসপাতালে স্থাপন হবে বলেন তিনি।
এর আগে চলতি বছরের গত ১৯ এবং ২০ অক্টোবর শেবাচিম হাসপাতালের দুটি বিভাগের জন্য তিনটি মেশিনের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরে। এর প্রেক্ষিতে গত ১৮ নভেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডাইরেক্টর (হসপিটাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট) ডা. মো. জয়নাল আবেদীন টিটো যন্ত্রগুলো শেবাচিমে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সিএমএসডি পরিচালককে চিঠি প্রদান করেন।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, ‘দক্ষিণাঞ্চলে উন্নতমানের হৃদরোগের চিকিৎসা নেই। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেই শেবাচিম হাসপাতালে এ রোগের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকায় পুর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীরা। ইতিপূর্বে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ইকোকার্ডিওগ্রাম ও ইটিটি মেশিন স্থাপন করা হয়েছিল শেবাচিম হাসপাতালে। কিন্তু দক্ষ জনবল এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায় এটিটি পরীক্ষা। ইকোকাডিওগ্রাম কোনোভাবে চললেও সেবা প্রাপ্তির সংখ্যা অনেক কম।
অপরদিকে, হাসপাতালের পশ্চিম প্রান্ত পঞ্চম তলায় ডেন্টাল ইউনিট চালু হয়েছে প্রায় একযুগ হতে চলেছে। অথচ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ হাসপাতালে নেই দাতের এক্স-রে মেশিন। ফলে দাতের এক্স-রে করতে বাহিরে ছুটতে হচ্ছে রোগীদের। এতে অর্থের যেমন ব্যয় হচ্ছে, তেমনি সময় নষ্ট হচ্ছে অসহায় এবং নিম্ন আয়ের মানুষের।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, গত সোমবার বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মশিউল মুনীর। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের ২৪ ঘণ্টা না যেতেই এ হাসপাতালের জন্য সুখবর পেয়েছে বরিশালবাসী। তারা মনে করেন, সেনাবাহিনীর চৌকস এই কর্মকর্তার প্রচেষ্টায় আধুনিক এবং মানসম্মত চিকিৎসা সেবায় ফিরবে দক্ষিণ বাংলার সর্ববৃহৎ এই হাসপাতালটি।
এদিকে, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই রোগীদের চিকিৎসা সেবা এবং চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের তদারকি শুরু করেছেন নয়া পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মশিউল মুনীর। মঙ্গলবার দিনভর হাসপাতালের নির্মিত মাল্টিপারপাস ভবন পরিদর্শন ও রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে একাধিক মতবিনিময় সভা করেছেন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে।
এর মধ্যে সকাল ৯টায় বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল হাসপাতালে শুভেচ্ছা জানান নবনিযুক্ত পরিচালক একেএম মশিউল মুনীরকে। পরে হাসপাতালের উন্নয়ন নিয়ে মতবিনিময় করেন তারা।
সকাল ১০টায় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম আরিফুর রহমান ও গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল আলমের সাথে মতবিনিময় করেন তিনি। এসময় প্রকৌশল বিভাগের দুই কর্মকর্তা ফুলেল শুভেচ্ছা জানান পরিচালককে। পরে তাদের নিয়ে নবনির্মিত মাল্টিপারপাস ভবন পরিদর্শন করেন ব্রিগেডিয়ার একেএম মশিউল মুনীর।
এছাড়াও হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ব্যাংকিং শাখার কর্মকর্তারা নবাগত পরিচালককে ফুলেল শুভেচ্ছা এবং সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে মতবিনিময় করেন।
এইচকেআর
