বিএনপির দাবি তত্ত্বাবধায়ক, চরমোনাই পীর চান জাতীয় সরকার


আওয়ামী লীগ বাদে বিএনপিসহ অন্যান্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ইসলামী আন্দোলন আয়োজিত এক সভায় বিএনপির প্রতিনিধি দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুললে তার বিরোধিতা করেন চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। জাতীয় সরকারের রূপরেখা তুলে ধরে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয় না, নিরপেক্ষও হয় না।
শনিবার (২৪ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘রাজনৈতিক সংকট উত্তরণ এবং একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে করণীয়’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় চরমোনাই পীর একথা বলেন। এসময় ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ হতে দাবি তোলা হয়, আপিল বিভাগের একজন বিজ্ঞ, সৎ ও গ্রহণযোগ্য বিচারপতিকে প্রধান করে জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। নিবন্ধিত সব দলের সমন্বয়ে সেই জাতীয় সরকার হবে।
মতবিনিময় সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকেও আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা আসেননি। বিএনপির পক্ষে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু ও যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সভায় যোগ দেন।
এদিকে জাতীয় পার্টির কেউ না আসলেও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহ সভায় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া দলীয়ভাবে জামায়াতে ইসলামীকে আমন্ত্রণ জানানো না হলেও দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য খলিলুর রহমান মাদানীকে দাওয়াত দিলে তিনি যোগ দেন মতবিনিময় সভায়।
মতবিনিময় সভায় বিএনপি নেতারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলে ধরলে চরমোনাই পীর এর বিরোধিতা করে বলেন, বিশেষ প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ তুলেছিল আওয়ামী লীগ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে বিএনপিও কারচুপির অভিযোগ তোলে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয় না, নিরপেক্ষও হয় না।
জাতীয় সরকারের রূপরেখা তুলে ধরে চরমোনাই পীর রেজাউল করীম বলেন, আপিল বিভাগের একজন বিজ্ঞ, সৎ ও গ্রহণযোগ্য বিচারপতিকে প্রধান করে নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় সরকার গঠিত হবে। যারা জাতীয় সরকারে থাকবেন, তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। বর্তমান মন্ত্রিসভার কেউ নির্বাচনকালীন সরকারে থাকতে পারবেন না।
তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে দাবি জানিয়ে চরমোনাই পীর বলেন, ‘কোনও কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচনের আয়োজন এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিয়ে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে।’
চরমোনাই পীর আরও বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে আয়োজনের পাঁয়তারা চলছে। মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানোর চেষ্টা চলছে। আগেও বলেছি, এখনও বলছি– দলীয় সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনেই ইসলামী আন্দোলন অংশ নেবে না।
মতবিনিময় সভায় আরও যোগ দেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মনজু, মুসলিম লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুল ইসলাম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, খেলাফতে রব্বানী পার্টির চেয়ারম্যান মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী ও সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ।
এইচকেআর
