বরগুনায় তিন নদীর সীমানা বিক্রি করছে প্রভাবশালীরা


বরগুনায় প্রভাবশালীদের টাকা না দিয়ে পায়রা, বিশখালী ও বলেশ্বর নদীতে মাছ ধরতে পারছেন না সাধারণ জেলেরা। তাদের সাথে চুক্তি না করে নদীতে মাছ ধরতে নামলেই হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, এ জেলায় প্রায় ৫০ হাজার জেলে রয়েছেন। এসব নদীতে মাছ ধরাই তাদের পেশা। কিন্তু এলাকার ২০ প্রভাবশালী নদীগুলোর সীমানা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে তাদের দখলে রেখেছেন। তাই জেলেরা নির্বিঘ্নে মাছ ধরতে পারছেন না।
ভুক্তভোগী জেলেদের অভিযোগ, নদীর বিভিন্ন সীমানায় মাছ ধরতে হলে সিন্ডিকেটের কাছ থেকে টোকেন নিতে হয়। এজন্য গুণতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা। টাকা না দিয়ে মাছ ধরতে গেলেই হামলা-মামলার শিকার হতে হয় জেলেদের।
বরগুনার সদর উপজেলার ছোনবুনিয়ার ভুক্তভোগী জেলে মো. জাফর জানান, নদীর বিভিন্ন সীমানা প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কাছ থেকে একজনে কিনে জেলেদের কাছে দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি করে।
‘মতবাদ’ এর অনুসন্ধানে বঙ্গোপসাগর থেকে চালিতাতলী গ্রাম পর্যন্ত অন্তত ১০টি পয়েন্টে পায়রা নদী আটকে খুটা জালে মাছ ধরেন এমন ২০ প্রভাবশালীর নাম জানা গেছে। এদের মধ্যে রয়েছে-জসিম চৌকিদার, লিটন খাঁ, আদাই মিরা, জলিল, পনু চৌকিদার, ইদ্রিস মীরা, সিদ্দিক ও আবুল বাশারসহ আরো অনেকে। নদী বিক্রির চুক্তিনামারও সন্ধান মিলেছে কয়েক জায়গায়।
জেলে সোবাহান জানান, প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্য দিনদিন বেড়ে যাওয়ায় হামলা-মামলার শিকার হয়ে নদীতে নামতেও পারছেন না তারা। তাই টাকা দিতে না পারায় মাছধরা বন্ধ রেখে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে তাকে।
আব্দুল মান্নান নামের এক জেলে জানান, দখলদার ইদ্রিস মিয়ার কাছ থেকে তিন লাখ টাকা দিয়ে মাছ ধরার চুক্তি করেছিলেন, কিন্তু এরপরেও প্রতারিত হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় গোপনে তার ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠিয়ে হয়রানি করা হয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন অভিযুক্ত আব্দুল মান্নান। তার দাবি, তিনি দীর্ঘদিন নদীতে যান না। ষড়যন্ত্র করে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এই ঘটনায় তালতলীর ইদ্রিস মিয়াকে দায়ী করেন মান্নান।
তবে অভিযুক্ত ইদ্রিস জানান, সিডরের বছর (২০০৭ সালে) ছোনবুনিয়া গ্রামের ইউসুফ আলীর কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকায় নদীতে মাছ ধরার নির্ধারিত স্থান ক্রয় করেন। তিন-চার বছর পর তিনি ঐ দখল পজিশন ভুক্তভোগী আব্দুল মান্নানের কাছে বিক্রি করেন। এ নিয়ে কিছুটা ঝামেলা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পায়রা নদীর ১২ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ১০টি চক্র এসব বেচাকেনার সাথে জড়িত।
বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ মৃধা জানান, তিনটি নদীতে কমপক্ষে ২০টি চক্র নদী বিক্রির সাথে জড়িত। প্রশাসন এ বিষয়ে দ্রুত হস্তক্ষেপ না করলে সাধারণ জেলেরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, নদীতে খুটা দিয়ে মাছের জন্য স্থান বিক্রি সম্পূর্ণ অবৈধ। অভিযোগ পেলে পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
একই ধরনের আশ্বাস বরগুনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পিজুষ চন্দ্র দে। তিনি বলেন, নদী আটকে মাছ ধরার স্থান বিক্রি সম্পূর্ণ অবৈধ। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিবো।
জিয়াদ মাহমুদ/ এইচকেআর
