ঝালকাঠিতে সিত্রাংয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি


ঝালকাঠিতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে তান্ডবে বিভিন্ন খ্যাতের প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন। এদিকে সিত্রাংয়ে পাঁচদিন অতিবাহিত হলেও ক্ষতিগ্রস্তরা কোন ত্রাণ সহায়তা পায়নি। তবে জেলা প্রশাসন বলছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার মাধ্যমে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে। এখন জেলার প্রায় ৮০ হাজারেরও অধিক পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শনিবার জেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, ঝালকাঠিতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে তান্ডবে ২৩১ বসতঘর সম্পর্ণ বির্ধ্বস্তসহ এক হাজার ৫৪৮টি আধা পাকা ও কাচাঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ ছাড়া কৃষি, মৎস্য, বিদ্যুৎ, সড়ক, বেড়িবাঁধ, গাছপালা, মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন খ্যাতের প্রায় ৪৯ কোটি ৬১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। অনেকে বসতঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে কিবাং অন্য কারও ঘরে আশ্রয় নিয়ে পরিবারসহ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কিন্ত সিত্রাংয়ের পাঁচদিন অতিবাহিত হলেও ক্ষতিগ্রস্তরা ত্রাণ বা বসতঘর নির্মাণে পায়নি কোন আর্থিক সহায়তা।
ঝড়ে জেলায় ৪৩ টি খুঁটি, ১১ টি ট্রান্সফার্মার, ৩৭০টি মিটার, ইনসুলেটর ৫১টি, ক্রোস আর্ম ৫১ ভেঙে নষ্ট হয়েছে। জেলায় ৫৮৯ টি স্থানে গাছ উপড়ে পড়ে বিদ্যুতের প্রায় ৪১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে করে পল্লী বিদ্যুতের প্রায় এক লাখ ৩২ হাজার গ্রাহকের মধ্যে এখনও ৮০ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে গ্রাহকরা চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইলফোনের সেবা ও দৈনন্দিন কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
নলছিটি উপজেলার সরই গ্রামের ময়মন বিবি (৬০) বলেন, আমার ঘরের ওপর রাতে গাছ উপড়ে পড়েছে। এতে বসতঘরটি বিধ্বস্ত হয়। রাতে ঘরের মধ্যে ঘুমাতে পারিনি। পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোন সহায়তা পাইনি।
বারইকরণ গ্রামের মো. আল আমিন বলেন, আমার দুই একর জমিতে একটি মাছের ঘের আছে। সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করে ভালোই ছিলাম। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে পানি বৃদ্ধি পেয়ে আমার মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। পানিতে প্রায় ছয় লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। আমি এখন নিশ্ব হয়ে গেছি।
একই গ্রামের সুমন মণ্ডল বলেন, টানা বৃষ্টিপাত ও তীব্র বাতাসে আমার পানের বরজ বিধ্বস্ত হয়েছে। পানের বজর থেকে যা আয় হতো এ দিয়েই আমাদের পরিবার চলতো। এখন বরজ ঠিক করতে যে টাকার প্রয়োজন, তা-ও আমার কাছে নেই। আমি কি করব ভেবে পাচ্ছি না।
নলছিটির কুলকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এইচএম আখতারুজ্জামান বলেন, ঘূণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুলকাঠি ইউনিয়ন। বিভিন্ন সড়কে গাছ উপড়ে পড়ে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। অনেকের বসতঘরেও গাছ পড়ে আছে।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার চরভাটারাকান্দা এলাকার কৃষক মো. চান বলেন, আমাদের আমন ধানের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে আছে। আমাদের এলাকার কৃষকদের সকলেরই ধান এখন পানির নিচে। পানি না কমলে ক্ষতি হতে পারে।
রাজাপুরের পালট গ্রামের রশীদ হাওলাদার বলেন, ঘূর্ণিঝড় গেছে পাঁচদিন আগে, এখনও বিদ্যুৎ আসেনি। ঘরে ফ্রিজে রাখা মাছ-মাংস পচে গেছে। বিদ্যুতের অভাবে ছেলে মেয়েদের পড়ালেখায়ও ক্ষতি হচ্ছে।
ঝালকাঠি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম প্রকৌশলী ইমদাদুল ইসলাম জানান, ১১৫ টিম কাজ করে প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকায় লাইন চালু করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকি সব এলাকায় লাইন চালু করার লক্ষে দিনরাত পল্লীবিদ্যুতের কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা কাজ করে যাচ্ছেন।
জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী জানান, আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের খাদ্যসামগ্রী সহায়তা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করা হচ্ছে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ত্রাণসহ ঢেউটিন, নগদ টাকা সহায়তা করা হবে। ঝড়ে বসতঘর ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন খ্যাতের প্রায় ৪৯ কোটি টাকারও ক্ষতি বিষয়টি সরকারকে অবহিত করা হয়েছে। সহায়তা পেলে যথাযথভাবে কাজ করা হবে।
এইচকেআর
