ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

Motobad news
শিরোনাম
  • ‘মব জাস্টিস’ মানবতার শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে : তারেক রহমান বৃহস্পতিবার শুরু এইচএসসি পরীক্ষা, অংশ নিচ্ছে ১২ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী হাসিনার সেই ‘৪০০ কোটি টাকার’ পিয়নের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট-সঞ্চয়পত্র ফ্রিজ একজন ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, একমত বিএনপি পৃথিবীর সর্বনাশের জন্য আমরা আসামি : প্রধান উপদেষ্টা আওয়ামী লীগ আস্তে আস্তে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই: ফয়জুল করীম আইএমএফের অর্থছাড়: ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো রিজার্ভ বাকেরগঞ্জের কারখানা নদীতে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, আতঙ্কে গ্রাম ছাড়চ্ছেন মানুষ পন্টুনের ধাক্কায় ট্রলার থেকে ছিটকে নদীতে, জেলে নিখোঁজ
  • আজ ২৯ এপ্রিল উপকূলে স্বজন হারানোর দিন

    আজ ২৯ এপ্রিল উপকূলে স্বজন হারানোর দিন
    গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

    আজ শুক্রবার সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিল, বাংলাদেশের উপকূলবাসীদের স্বজন হারানোর দিন। ১৯৯১ সালের এই দিনে এক মহা প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা। ২৯ এপ্রিল উপকূলবাসীর বেদনার দিবস হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। 

    প্রতি বছর এ দিনটি উপলক্ষে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সামাজিক -সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকেন। স্বজনহারা মানুষগুলোর ঘরে ঘরে দোয়া ও মোনাজাত হয়। ওই প্রাকৃতিক দুর্যোগের আজ ৩১ বছর অতিবাহিত হলেও কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের উপকূলবাসী এখনো অরক্ষিত।

    ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের দিবাগত মধ্যরাতে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশাল, পটুয়াখালী, রবগুনাসহ দেশের উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে ১২ থেকে ২০ ফুট উচ্চতায় জ্বলোচ্ছাসে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘গোর্কি’ ।

    এতে ২ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটার পাশাপাশি নিখোঁজ হয় আরো প্রায় ১ লাখ মানুষ । ৭০ হাজার গবাদী পশু মারা যায়। ঐ রাতের তাণ্ডবে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল বলে সরকারি হিসেবে জানা যায় । তবে বেসরকারি হিসেবে এ ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি হবে বলে জানালেন কোস্টাল জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আতা উল্লাহ খাঁন।

    হারিকেন এর ছোবলে বহু পরিবার স্বজন হারা হয়। এখনও সেই ভয়াল রাতের স্মৃতিতে উপকূলবাসী আঁতকে উঠেন। সে প্রলয়ংকরী ঘুর্ণিঝড়ের ২৯ বছর অতিবাহিত হলেও কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের উপকূলবাসী এখনো অরক্ষিত, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। এখনো বিভিন্ন স্থানে খোলা রয়েছে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। ফলে বিভিন্ন উপকূলীয় লোকালয়ে সাগরের লোনাজল এখনো প্রবেশ করছে।

    কক্সবাজারের মহেশখালীর উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফ বাদশা বলেন, গত ২৯ বছর ধরে তার এলাকায় ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ খোলা রয়েছে।

    কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার গোস্মামী জানান, কক্সবাজারের ৫৯৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৮০০ মিটার এখনো খোলা। ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ১৭৩০ মিটার। তবে ১১টি পয়েন্ট দ্রুত কাজ শুরু হবে বলে ও জানান তিনি।

    জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলের জেলে, লবন চাষী ও নিম্ন আয়ের মানুষগুলো চরম বিপাকে রয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার  উপকূলীয় সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হোবাইব সজীব। 

    ১৯৯১ সালের ওই দিনে সবচেয়ে বেশী প্রাণহানি ঘটে কক্সবাজারের মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়নে ।

    এ ইউপি চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান কামরুল হাসান  জানান, এখানে এমন কোনো বাড়ি বা ঘর নেই যে বাড়ি থেকে ৫-৬ জন লোক মারা যায়নি। তাই ২৯ এপ্রিল এলে এখনো প্রতিটি বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায়।

    ধলঘাটা সরওয়ার কামাল জানান, ১৯৯১ সালের পর থেকে ধলঘাটা এলাকার বেড়ীবাঁধ এখনো খোলা রয়েছে।

    কুতুবদিয়া দ্বীপের বাসিন্দা ছৈয়দ আলম ওই রাতের স্মৃতি উল্লেখ করে বলেন, সে ভয়াল রাতের কথা মনে পড়লে চোঁখে পানি চলে আসে। সে রাতের কথা কোনোভাবেই ভুলে যাওয়ার নয়। সেই  উপকূল এখনো অরক্ষিত।

    কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, সরকার কক্সবাজারের উপকূলকে রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উপকূলবাসীর বাসীর একটাই দাবি তা হলো, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে যেন দেশের উপকূলকে সাগরের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করা হয়। 

    ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে বেশি ক্ষতি হয় মহেশখালীর ধলঘাটা ও মাতারবাড়ী এই দুই ইউনিয়নে।

    প্রশাসন জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের পর বিভিন্ন সংস্থার অর্থায়নে ৮৪ টি সাইক্লোন শেল্টার (আশ্রয়কেন্দ্র) স্থাপন করা হয়েছে। এ সব আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের পর থেকে রক্ষণাবেক্ষণ বা সংস্কারের অভাবে প্রায় ৩৩টি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কয়েকটি নতুন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। মহেশখালী উপজেলার বর্তমান প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষের বসবাস হলেও জনসংখ্যা অনুপাতে আশ্রয়কেন্দ্রর সংখ্যা কম।

    কক্সবাজার (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, ‘বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মহেশখালী-কুতুবদিয়া উপজেলার উপকূলীয় জনগণের জানমাল রক্ষার্থে বেড়িবাঁধের যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। তবে ধলঘাটা, মাতারবাড়ি ও কুতুবদিয়ায় যেসব বেড়িবাঁধ অরক্ষিত রয়েছে, আগামীতে সেগুলির পুনর্নিমানের ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সরকারের আমলে বেড়িবাঁধের উন্নয়ন সাধিত হয়েছে বলেই আজ দলঘাটাও মাতারবাড়ি দ্বীপে কয়লা বিদ্যুতের মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।

    মহেশখালী দ্বীপে বাস্তবায়নাধীন কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল, এক্সক্লুসিভ টুরিস্ট জোন ও প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং উপকূলে বসবাসকারীদের জানমাল রক্ষার্থে আগামীতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান এমপি আশেক ।

    স্বজন হারানোর এই দিনে চট্টগ্রাম কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় সরকারি, বেসরকারি ভাবে বিভিন্ন সংগঠন নিহতদের স্মরণে প্রতিবছর দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন কর থাকেন। 


    এসএম
    গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ