ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

Motobad news
শিরোনাম
  • সংস্কারের প্রভাবে বেহাল ববির কেন্দ্রীয় মাঠ, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ শান্ত, ফিরলেন সাইফউদ্দিন বরিশালসহ চার বিভাগের অধিকাংশ স্থানে হতে পারে ভারী বৃষ্টি বিএম কলেজে ‘উত্তরণ’ সাংস্কৃতিক সংগঠনের জ্যৈষ্ঠ উৎসব  জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের জন্য অর্থ সংগ্রহ করত মালয়েশিয়ায় আটক বাংলাদেশিরা ডেঙ্গুর পাশাপাশি বাড়ছে করোনা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ ‘৬ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রা*ণ গেল ২ হাজার ৭৭৮ জনের’ দলের কেউ অপরাধ করলেই ব্যবস্থা নেবে বিএনপি: রিজভী বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে করোনা পরীক্ষার ফি পুনর্নির্ধারণ ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করুন: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ
  • বরগুনায় নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারী জালে ক্ষতিগ্রস্থ জলজ প্রাণি

    বরগুনায় নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারী জালে ক্ষতিগ্রস্থ জলজ প্রাণি
    গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

    বরগুনা জেলার তালতলী, পাথরঘাটা ও বামনা উপজেলায় অবৈধ চায়না দুয়ারী জাল দিয়ে অবাধে চলছে মাছ শিকার। আর নিষিদ্ধ লাখ লাখ মিটার জাল পেতে নদীতে অবাধে মৎস্য শিকার করছে শতশত জেলেরা। প্রশাসন কর্তৃক প্রায় প্রতিসপ্তাহে নিষিদ্ধ এ জালসহ ট্রলার আটক হলেও নিষিদ্ধ এ জালে মৎস্য শিকার থামছে না কিছুতেই। ফলে এ নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারী  জালে প্রতিদিন আটকা পরছে হাজার হাজার মণ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট বড় মাছ।

    বরগুনার বলেশ্বর নদ, পায়রা ও বিষখালী নদীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায়, এ  চায়না দুয়ারী দিয়ে প্রায় ২০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে  জাল পেতে অবাধে মাছ শিকার করা হচ্ছে। বিষখালী নদীর গোড়াপদ্মা থেকে নলী পর্যন্ত, চালিতাতলী থেকে সোনাতলা পর্যন্ত পায়রা নদীর দুই পাড়, বলেশ্বর নদের মোহনা থেকে পশ্চিমে চরদুয়ানি পর্যন্ত  এবং তালতলী থেকে তেঁতুলবাড়িয়া হয়ে বঙ্গোপসাগরের মোহনা পর্যন্ত এলাকাজুড়ে এই চায়না দুয়ারী জাল পেতে রাখা হয়েছে।

    চায়না দুয়ারী জালের ফাঁদে নির্বিচারে মারা পড়ছে নানা প্রজাতির মাছের কোটি কোটি রেনুপোণাসহ জলজ প্রাণী। এমন অবস্থা চলতে থাকলে হুমকির মুখে পড়বে জীববৈচিত্র্য। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী মৎস্য ব্যবসায়ীদের মদদে এসব অসাধু জেলেরা নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারী দিয়ে মৎস্য শিকার করছে।

    চায়না দুয়ারী  একটা জালের দাম মাত্র ৪ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। এই জাল দেশেই তৈরী হয় তবে এর শুতো গুলো কারেন্ট জালের সুতোর মতো দেখতে তাই একে সবাই চায়না দুয়ারী নামে ডাকে। আয়তন ১০০ ফুট থেকে ১৫০ ফুট পাশে দেড় ফুট চওড়া দেখতে একদম মোটা পাইপের মত। এই জালে লোহা দিয়ে তৈরী ফ্রেম ব্যবহার করা হয় বিধায় নদীর তলদেশে এ জাল ফেলা যায়। এই জালের তিন চার ফুট পরপর লোহা দিয়ে তৈরী ফ্রেম বসানো হয়। 

    তালতলীর চালিতাতলী এলাকার পায়রা নদীর জেলে  জাফর জানান, বর্তমানে আমাদের এলাকায় চায়না দুয়ারী জালে ছেয়ে গেছে। এই পায়রা নদীর মোহনা থেকে সব জায়গায় এই জাল পাতা হয়। মৎস অফিসের লোকজন প্রায় সময় অভিজান চালায় আবার কিছু জাল ধরতে পারে আর অনেক জাল খুজে পায় না। 

    তালতলীর তেতুল বাড়িয়ার জেলে সেলিম বলেন, মোরা জাইল্লারা যে জালে বেশি মাছ পামু হেই জালি তো কিনমু। এই জাল কোম দামে পাই আবার মাছ ও বেশি পাই হেইতে এই জাল পাতি। আম্নেগো যদি এই জাল বন্ধ হরতে মন চায় তাইলে দোহানদারেগো বেচতে দেন ক্যা। দোহানদারেরা মোগো দারে না বেচলে মোরা তো এই জাল পামুনা। 

    পাথরঘাটার বলেশ্বর নদীর জেলে রাজ্জাক বলেন, এই জালে একবার মাছ ঠুকলে আর বেড় হতে পারে না। এক বার জাল ফেললে কপাল ভালো থাকলে ২০ হাজার টাকার পর্যন্ত মাছ পেতে পারি।

    বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর তালতলী উপজেলা সমন্নয়ক আরিফ রহমান বলেন, এই চায়না দুয়ারী জালে ধরা পড়ে শুধু মাছই নয়, নদীতে থাকা কোনো জলজ প্রাণীও রক্ষা পাচ্ছে না। এমন কী মাছের ডিমও ছেঁকে তোলা হয় চায়না জাল দিয়ে। বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রেহাই পাচ্ছে না এই নিষিদ্ধ জাল থেকে। মা‌ছের সঙ্গে বি‌ভিন্ন ধর‌নের কাঁকড়া, কচ্ছপ, কু‌চিয়া, বি‌ভিন্ন প্রজা‌তির সাপ ছাড়াও পা‌নি‌তে বাস করা বি‌ভিন্ন প্রজা‌তির উপকা‌রি পোকামাকড় ও জা‌লে আট‌কে যা‌চ্ছে, ডাঙ্গায় তু‌লে এসব প্রাণী ও পোকা মাকড় মে‌রে ফে‌লছে মাছ শিকারিরা। 

    ইউএসএইড এর অর্থায়নে পরিচালিত আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডফিশ/ইকোফিশ-২ এর সহকারী গবেষক মোঃ বখতিয়ার রহমান বলেন, এইভাবে যদি অবৈধ জাল দিয়ে মাছ শিকার করা তাহলে কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের মৎস সম্পদ হুমকিতে পরবে। প্রশাসনের উচিত কঠোর পদক্ষেপ নেয়া যাতে এই জালের ব্যবহার কেউ না করে। প্রশাসনের উচিত জালের দোকান গুলোতে অভিজান পরিচালনা করা। যে দোকানে এই অবৈধ চায়না দুয়ারী জাল পাওয়া যাবে তাদের মোটা অংকের জরিমানা করা।

    বরগুনা জেলা মৎস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, আমরা গত ১ সপ্তাহে ১২০ টার মত চায়না দুয়ারী জাল জব্দ করেছি এবং পুড়িয়ে ফেলেছি, যার আনুমানিক বাজার মুল্য ৪ লক্ষ টাকা। আমাদের অভিজান চলমান রয়েছে আমরা আগামীকাল অর্থাৎ ২১ এপ্রিল আবার অভিজান পরিচালনা করবো। বিভিন্ন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা অভিজান গুলো করতেছি। শুধু নদী নয় খাল বা যে কোনো জায়গায় এই চায়না দুয়ারী জাল পেলে তা আমরা জব্দ করোবো।


    এমইউআর
    গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ