তালতলীতে টেন্ডার ছাড়াই মাদ্রাসার ভবন বিক্রি করে টাকা অত্মসাৎ


উপজেলা নির্বাহি অফিসারের অনুমতি ও টেন্ডার না দিয়েই বরগুনার তালতলী উপজেলার দক্ষিন ঝারাখালী ছালেহিয়া দাখিল মাদ্রাসার একটি ভবন বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট মাওলানা আব্দুল জব্বার ও মাদ্রাসার সভাপতি, সাবেক সুপারিনটেনডেন্ট মাওলানা আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে।
সেই সঙ্গে ভবন বিক্রি করা টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
মাদ্রাসার ইবতেদায়ী কারী নুরুল আমিন তালতলী উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা বরাবর এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা তথ্য কর্মকর্তা সঙ্গীতা রাণীর কাছে তদন্তভার অর্পণ করেন তিনি।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ ঝাড়াখালী সালিহিয়া মাদ্রাসায় একটি সরকারী নতুন ভবন বরাদ্দ পায়। নিয়ম অনুযায়ী নতুন ভবন নির্মাণের জন্য পূর্বের ভবনটি ভেঙে ফেলতে হবে। ওই ভবন ভাঙার জন্য উপজেলা নিবার্হী অফিসারের অনুমতি ও টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করতে হবে, কিন্তু মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার ও সভাপতি কোন রকমের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই নিজেরা গোপনে ভেঙে বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়াও বেসরকারি সংস্থা সেকায়েফ থেকে ২০১৬ সালে একটি নলকূপ বরাদ্দ পায় সেই নলকূপে মাদ্রাসার সাবেক সুপার, বর্তমান সভাপতি মাওঃ আঃ মতিন আত্মসাৎ করে নিজের বাড়িতে বসিয়ে সেখান থেকে পাইপ লাইন দিয়ে আবার তার অন্দরমহলে নেন। এবং ওই টিউবয়েল বসানোর তারিখে একটি ভুয়া রেজুলেশন দেখানো হয় যে রেজুলেশনে অধিকাংশ শিক্ষক ও কমিটির সদস্যদের ভুয়া স্বাক্ষর দিয়ে রেজুলেশন করেন।
সরেজমিনে জানা গেছে পূর্বের ভবনটি দৈর্ঘ্য ৮৫ ফুট, প্রস্থ প্রায় ১৮ ফুট টিনশেড একতলা বিল্ডিং, যার বর্তমান আনুমানিক মূল্য প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। ওই ভবনটি কোন রকমের টেন্ডার না দিয়েই গোপনে বিক্রি করে দেন মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা আব্দুল জব্বার ও সাবেক সুপার, বর্তমান মাদ্রাসা সভাপতি মাওলানা আব্দুল মতিন। এক্ষেত্রে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কিংবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়কে অবহিত পর্যন্ত করা হয়নি। ওই মাদ্রাসাটি বিক্রি করে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওঃ আঃ জব্বার ও মাদ্রাসার বর্তমান কমিটির সভাপতি সাবেক সুপার মাওঃ আঃ মতিন।
অভিযোগকারী শিক্ষক কারী নুরুল আমিন বলেন, টেন্ডার ছাড়া অধিকাংশ শিক্ষকদের না জানিয়ে তাদের পছন্দের কিছু শিক্ষক নিয়ে করোনাকালীন বন্ধের সময় মাদ্রাসার সাবেক সুপার, বর্তমান সভাপতি ও মাদ্রাসার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সুপার গোপনে মাদ্রাসার মালামাল স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করে দিয়ে মোটা অংকের টাকা আত্মসাত করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষকের সাথে আলাপ করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে, এছাড়াও তিনি গোপনে ভুয়া রেজুলেশন বানিয়ে শিক্ষকদের স্বাক্ষর জাল করে প্রতারণা করেন বলে শিক্ষকরা অভিযোগ করেন।
মাদ্রাসা সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্ধা মোঃ মোস্তফা ও মো. মোর্তজা বলেন, পূর্বে একটি ৮৫ ফুট দৈর্ঘ একতলা বিল্ডিং ছিল, ভারপ্রাপ্ত সুপার আঃ জব্বার ও সভাপতি , সাবেক সুপার মাওঃ আঃ মতিন এটা ভেঙ্গে প্রায় ৩০ হাজার ইট,টিন ,কাঠ ও দরজা-জানালা বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার আব্দুল জব্বার এর কাছে জানতে চাইলে তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন, কখনো বলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়ে বিক্রি দিয়েছি, আবার বলেন ঠিকাদার রাতের আঁধারে ভেঙে ফেলেছেন তা আমি জানিনা, আবার কখনও তিনি বলেন ভবন তিনি ভাঙ্গেনি।
ওই মাদ্রাসার সাবেক সুপার বর্তমান সভাপতি এসব বিষয় অস্বীকার করে বলেন, কমিটির মাধ্যমে রেজুলেশন করে ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়েছে।
জানতে চাইলে তালতলী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুল কবির মোঃ কামরুল হাসান বলেন, টেন্ডার ছাড়া মালামাল বিক্রি করা যাবে না।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মো. কাওসছার হোসেন বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি এবং তথ্য কর্মকর্তাকে তদন্তভার দেয়া হয়েছে, অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এইচকেআর
