ঢাকা বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

Motobad news
পায়রা ও লোহালিয়া নদীর ভাঙন 

মানচিত্রে মুছে যাচ্ছে কয়েকটি গ্রাম

মানচিত্রে মুছে যাচ্ছে কয়েকটি গ্রাম
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই সর্বগ্রাসী পায়রা ও লোহালিয়া নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত কয়েক দিনের অব্যাহত ভাঙনে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের প্রায় সহস্রাধিক বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মুরাদিয়া, পাঙ্গাশিয়া, লেবুখালী ও আংগারিয়া  ইউনিয়নের লেবুখালীর পুরাণ বাজার, আংগারিয়ার বাহেরচর, মুরাদিয়ার কালেখা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ মুরাদিয়ার মজুমদারহাট, রাজগঞ্জ ও চান্দখালী গ্রামের ওয়াপদা বেড়িবাঁধ ব্যাপক হুমকির মুখে রয়েছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় ভাঙন কবলিত এলাকার অসহায় মানুষের মধ্যে আতংকের পাশাপাশি উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বাড়ছে। 

খরস্রোতা  পায়রা ও রাক্ষুসে লোহালিয়া নদীর করালগ্রাসে দুমকি উপজেলার মানচিত্র ক্রমশই ছোট্ট হয়ে আসছে। অব্যাহত ভাঙনের কবলে পড়ে নদীতে চলে গেছে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের  সহস্রাধিক পরিবারের বাড়িঘর, স্কুল, কলেজ, মস্জিদ, মন্দির, মাদ্রাসা, ফসলি জমি, হাটবাজার, কাচা-পাকা ছোট বড় সড়ক এবং বেরিবাঁধসহ কোটি কোটি টাকার সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি। দুমকি উপজেলার মানচিত্র হতে চিরতরে মুছে যাচ্ছে বেশ কয়েকটি গ্রাম। এই অব্যাহত ভাঙণে কয়েক শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে। কিন্তু এ ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ণ বোর্ডের (ওয়াপদা) পক্ষ থেকে আদৌ কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। খরস্রোতা  পায়রা ও রাক্ষুসে লোহালিয়া নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে আঙ্গারিয়া, পাঙ্গাশিয়া, লেবুখালী এবং মুরাদিয়া ইউনিয়ন। এ চারটি ইউনিয়নে গ্রামের পর গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। 

এ চারটি ইউনিয়নের অন্তত: ১৫টি গ্রাম নদীতে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। নদী ভাঙন কবলিত অসহায় পরিবারগুলোর মধ্যে কেউ কেউ ইতোমধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে সক্ষম হলেও অধিকাংশ পরিবার খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। লেবুখালী পুরাণ বাজার সওজ’র সরকারী রাস্তার ওপর আশ্রয় নেয়া ২০-২৫ টি পরিবার খোলা আকাশের নিচে অবর্ননীয় দুর্ভোগে জীবন যাপন করছে। বাহেরচর এলাকায় ভাঙনের মুখে এখনও মাটির টানে পড়ে রয়েছে দু’শতাধিক ছিন্নমূল পরিবার। উত্তর মুরাদিয়া ও সন্তোষদির পাউবো’র বাস্তায় আশ্রয় নেয়া শতাধিক পরিবার চরম অর্থ ও খাদ্য সংকটের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে। লেবুখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জহির রায়হান লেবুখালীর ভাঙন কবলিত ছিন্নমূল মানুষের পূণর্বাসনের উদ্যোগ জানিয়েছেন। 

মুরাদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান শিকদার জানান, গত কয়েক দিনে দু’তিন দফায় লোহালিয়া নদীতে অধিক উচ্চতায় অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে ভাংগন তীব্র আকার ধারন করে। বৃদ্ধি পাওয়া পানি জোয়ার-ভাটায় স্রোতের তোড়ে ভাঙনে ওই ইউনিয়নের উত্তর মুরাদিয়া, সন্তোষদি, কালেখা, দক্ষিণ মুরাদিয়ার কলাগাছিয়া গ্রামের প্রায় শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। উত্তর মুরাদিয়া এলাকার বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দুমকি উপজেলা আওয়ামীলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অলি আহাদ ভাষানী বলেন, গত ৪/৫ বছর ধরে পাংশিঘাট, উত্তর মুরাদিয়া এলাকার কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন তীব্রতা অতি মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এ অস্বাভাবিক ভাঙন ঠেকাতে জরুরী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।  

এদিকে মুরাদিয়া ইউনিয়নের উত্তর মুরাদিয়া, সন্তোষদি ও চরগরবদি গ্রামের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে সেখানকার প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। মুরাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোঃ নাসির উদ্দিন খান জানান, লোহালিয়া নদীর ভাঙনে গত এক সপ্তাহে মুরাদিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের প্রায় দু’শতাধিক বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এমতাবস্থায় ভাঙন রোধ করা না গেলে অল্প দিনেই ওই ইউনিয়নের অসংখ্য বাড়িঘর ও আবাদি জমির ফসল নদীগর্ভে তলিয়ে যাবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এছাড়া একই ইউনিয়নের কালেখা আমির হোসেনের রাস্তার মাথা এলাকায় পাইলিংয়ের বাইরের এলাকার ঘরবাড়ি প্রচন্ড হুমকির মুখে। মজুমদার হাটের অর্ধেকের বেশি এলাকা ভেঙে নদী গর্ভে চলে গেছে। ভাঙন রোধকল্পে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী, ক্ষতিগ্রস্থ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙনের চিত্র তুলে ধরে পাউবো’কে এগুলো মেরামতের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের একাধিকবার জানানো হয়েছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ হাওলাদার সম্প্রতি পাউবো’র কর্মকর্তাদের নিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করলেও বাস্তবে এখনও পর্যন্ত কোন সমাধান পায়নি ভাঙন কবলিতরা। ইতিমধ্যেই ভাঙন কবলিত লেবুখালীর প্রায় ২৫-৩০টি আশ্রয়হীন পরিবার লেবুখালী গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে পূনর্বাসিত হয়েছে। তারা সেখানে উঠে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করেছেন। ভাঙন প্রতিরোধে জরুরীভাবে ব্যবস্থা না নিলে অদূর ভবিষ্যতে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রাম এবং অজস্র বাড়িঘর পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলেও স্থানীয় লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। 
 

 

 

জাকির হোসেন /এইচকেআর 

 


গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন