ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

Motobad news

দিব্যা ভারতীর রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে অজানা কিছু তথ্য

দিব্যা ভারতীর রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে অজানা কিছু তথ্য
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বলিউড অভিনেত্রী দিব্যা ভারতীর মৃত্যুরহস্য ২৮ বছর পরেও অজানা রয়ে গেলো। মাত্র ১৯ বছর বয়সে পাঁচতলা থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়। হত্যা, আত্মহত্যা নাকি দুর্ঘটনায় হয়েছিল সেই মৃত্যু। তা আজও অজানা রয়ে গেছে। দিব্যার মৃত্যু সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

১৯৭৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন এই অভিনেত্রী। নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তারপর আসেন অভিনয়ে। তেলুগু সিনেমায় দাগ্গুবাতি ভেঙ্কটেশের বিপরীতে শুরু। প্রথম হিন্দি সিনেমা ‘বিশ্বাত্মা’। ‘শোলা অউর শবনম’, ‘দিওয়ানা’ তাকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দেয়। ‘দিওয়ানা’-তে শাহরুখ খানের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন প্রয়াত অভিনেতা ঋষি কাপুরও।


‘শোলা অউর শবনম’-এ অভিনয়ের সময় গোবিন্দর সঙ্গে তার আলাপ। জানা যায়, তাদের মধ্যেও সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। দিব্যার সম্পর্কে গোবিন্দ বলেছিলেন, ‘দিব্যাকে আমার ভালো লাগে। এত মোহময়ী যে তার সামনে পুরুষরা নিজেকে সামলাতে পারে না। কিন্তু দিব্যার মোহে পা দিইনি আমি এখনও।’

গোবিন্দর মাধ্যমেই দিব্যার পরিচয় প্রযোজক সাজিদ নাদিওয়াদওয়ালার সঙ্গে। তার পর বন্ধুত্ব, প্রেম। ১৯৯২ সালের ১০ মে বিয়ে। তারপর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এই অভিনেত্রী। নতুন নাম নেন সানা নাদিওয়াদওয়ালা। অভিনয়ে যাতে প্রভাব না পড়ে, সে কারণে লুকিয়ে রাখেন বিয়ের কথা।

১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল পাঁচ তলা থেকে পড়ে গিয়ে প্রয়াত হন দিব্যা। যখন সবাই টের পান, দেরি হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি ১৯ বছরের অভিনেত্রীকে। দিব্যার রহস্যমৃত্যু নিয়ে বই লিখেছিলেন ট্রয় রিবেইরো। ঘটনাস্থলে যারা ছিলেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে অনেক অজানা তথ্য প্রকাশ করেছিলেন। রিবেইরো নিজেও এক জন সাক্ষী।

ট্রয়ের বই অনুযায়ী দিব্যা মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বহু দিন ধরে। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে মদ্যপান করেছিলেন। বাড়িতে একাধিক অতিথি এসেছিলেন। দিব্যা নিজের গ্লাস ভর্তি করে বারান্দায় একা সময় কাটাচ্ছিলেন। পড়ে যাওয়ার আওয়াজ শুনে সবাই ছুটে যান। ট্রয় জানিয়েছেন, অতিথিরাই হাসপাতালে নিয়ে যান তাকে। এরপর চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

ট্রয়ের লেখা থেকে জানা যায়, দিব্যার বাবা ও ভাইকে সামলানো যাচ্ছিল না। বাবা কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘ওরা আমার মেয়েকে মেরে ফেলল!’ ভোর বেলা দিব্যার মা হাসপাতালে পৌঁছান। তিনি বিশ্বাসই করছিলেন না। তবে হাসপাতালেই দিব্যার বাবা ও ভাই মাকে দোষারোপ করছিলেন। যার কারণ আজও অজানা।

সাজিদ হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন মৃত্যুর ঘণ্টা খানেক পরে। দিব্যার মৃতদেহ দেখে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন বলে জানিয়েছেন ট্রয়। তাকে আইসিসিইউ-তে ভর্তি করা হয়। জ্ঞান ফেরার পর স্ত্রীর মৃত্যু মেনে নিতে পারছিলেন না। আবার তাকে ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেন চিকিৎসকরা।

দিব্যার এক অতিথি (ডিজাইনার নীতা লুল্লা) পুলিশকে জানান, কয়েক মুহূর্তের মধ্যে সব কিছু ঘটেছে। তাই তিনি স্পষ্ট করে জানেন না যে দিব্যা আত্মহত্যা করেছিলেন, নাকি পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলেন।

দিব্যার বন্ধু পুলিশকে জানান, মৃত্যুর সময়ে নীতা তার সঙ্গেই ছিলেন। দিব্যা বারান্দার রেলিংয়ের ধারে দাঁড়িয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন। নীতা বাঁচানোর জন্য এগোতে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে দিব্যার ঝাঁপ। সে দিন সন্ধ্যায় সাজিদের সঙ্গে বিবাদ হয়। সাজিদ বা়ড়ি থেকে বেরি‌য়ে যান। দিব্যা হুমকি দিয়েছিলেন, ‘তুমি যদি ১০ মিনিটে ঘরে না ঢোকো, আমাকে আর দেখতে পাবে না।’ দিব্যার বন্ধু জনায়, সাজিদ হুমকিকে পাত্তা দেননি।

দিব্যার আর এক প্রতিবেশী বলেন, ‘সে দিন সাজিদের সঙ্গে ঝগড়ার পর অনেকগুলি ঘুমের ওষুধ খান দিব্যা। সাজিদ ভয় পেয়ে তাদের প্রতিবেশী নীতা লুল্লা ও তার স্বামীকে ডাকেন। তারা এসে দিব্যার ভাই (সেই সময়ে দিব্যার ভাই তার বাড়িতেই ছিলেন) এবং সাজিদকে বের করে দেন। বলেন, তিনি দিব্যার সঙ্গে আলাদা কথা বলবেন। পরিচারিকাকে থাকতে বলা হয়। তিনি ছিলেন রান্নাঘরে। দিব্যা রান্নাঘরে আরও মদ্যপান করে সবার অলক্ষ্যে বারান্দায় চলে যান। কয়েক মুহূর্ত পরেই সব শেষ হয়।

বোঝা যায়, ট্রয় তার সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দিতে চাননি পরিচারিকাকেও। তার বক্তব্য, মৃত্যুর আগে পরিচারিকাই শেষ বার দেখেছিলেন দিব্যাকে। কিন্তু ট্রয়ের আক্ষেপ, পুলিশ এক বারও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।

সূত্র : আনন্দবাজার


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন