ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news

যেভাবে মহানবীর সাহাবি হলেন রাজপুত্র

যেভাবে মহানবীর সাহাবি হলেন রাজপুত্র
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

উয়াইল ইবনে হুজর (রা.) একজন রাজকুমার সাহাবি। ইয়েমেনের ঐতিহ্যবাহী হাজরামাউত শহরের এক সম্ভ্রান্ত রাজপরিবারে তাঁর জন্ম। তাঁর বাবা হুজর ছিলেন হাজরামাউতের শাসক।

মদিনার পথে রাজপরিবারের সদস্য : প্রিয় নবীজির আগমনে যখন চারদিকে ইসলামের সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে, সেই সৌরভ মুগ্ধ করে সুদূর হাজরামাউতের রাজপরিবারের সন্তান উয়াইল ইবনে হুজর (রা.)-কে। ইসলামের প্রতি তাঁর মুগ্ধতার মাত্রা এত বেশি ছিল যে তিনি ইসলাম গ্রহণ করতে মদিনার উদ্দেশে রওনা হন সুদূর হাজরামাউত থেকে।

মহানবী (সা.)-এর আগাম সংবাদ : ইসলামের প্রতি তাঁর এই আগ্রহ মহান আল্লাহর ভীষণ পছন্দ হয়। যখন তিনি মদিনার কাছাকাছি পৌঁছেন-আর তিন প্রহর সফর করলেই তিনি মদিনায় পৌঁছে যাবেন, ঠিক এমন সময় মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবিবকে ওহির মাধ্যমে তাঁর আগমনের সংবাদ দিয়ে দেন। সংবাদ পেয়ে প্রিয় নবী (সা.) অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে সাহাবায়ে কিরামকে এই রাজ মেহমানের আগমনের সুসংবাদ দেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘সুদূর হাজরামাউত থেকে তোমাদের কাছে আসছে উয়াইল ইবনে হুজর। সে আসছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি আনুগত্যের শপথ নিয়ে। সে রাজপরিবাবের সন্তান।’

মদিনায় অভ্যর্থনা : তিন দিন পর যখন উয়াইল ইবনে হুজর মদিনায় আগমন করেন, রাসুল (সা.) তাঁকে স্বাগত জানান এবং কাছে টেনে নেন। নিজের চাদর বিছিয়ে তাঁকে কাছে বসান। এরপর তাঁর জন্য দোয়া করেন, ‘হে আল্লাহ উয়াইল ও তাঁর সন্তানদের বরকত দান করুন।’ (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৫/৭৯)

মহানবী (সা.)-এর সান্নিধ্যে শিক্ষার্জন :  এই সাহাবি প্রিয় নবীর সান্নিধ্যে ২০ দিন কাটান। এ সময় তিনি রাসুল (সা.)-এর কাছ থেকে দ্বিনের প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করেন। রাসুল (সা.) মসজিদ-ই-নববীতে নিজের পেছনে তাঁর জন্য স্থান নির্ধারণ করে দেন, যাতে তিনি রাসুল (সা.)-এর কাছ থেকে খুব সহজেই নামাজের মাসায়েল বুঝতে পারেন এবং শিখতে পারেন। কিছু বিজ্ঞ আলেমের মতে, উয়াইল ইবনে হুজর (রা.)-কে নামাজ শিক্ষা দেওয়ার জন্যই রাসুল (সা.) নামাজে জোরে ‘আমিন’ বলেছিলেন। তখন রাসুল (সা.) তাঁকে হাজরামাউতের বিভিন্ন গোত্রের আমেল নিযুক্ত করেন। হাজরামাউতে একখণ্ড ভূমিও তাঁকে বন্দোবস্ত করে দেন। ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে তাঁর সঙ্গে প্রেরণ করেন মুআবিয়া (রা.)-কে।

হাদিস বর্ণনা : অতঃপর উয়াইল ইবনে হুজর হাজরামাউত এলাকা ছেড়ে ইরাকের অন্তর্গত কুফায় চলে যান এবং বাকি জীবন কুফায়ই স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৫/৮০, আল-আলাম : ৮/১০৬)। তাঁর থেকে ৭১ হাদিস বর্ণিত আছে। তন্মধ্যে এককভাবে মুসলিম শরিফে ছয়টি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। (তাহজিবুল আসমা ওয়াল লুগাত, ইমাম নববী : ২/১৪২)

ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিতে সুদূর হাজরামাউত থেকে মদিনায় ছুটে আসা এই সাহাবির ইন্তেকালের সন-তারিখ সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। তবে আল্লামা জিরিকলি (রহ.) বলেন, তিনি আনুমানিক ৫০ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। (আল-আলাম, জিরিকলি : ৮/১০৬)


এমইউআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন