ঢাকা সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

Motobad news

টিকা না নিলে মোবাইল বন্ধের হুমকি, টিকাকেন্দ্রে লাখো মানুষের হুমড়ি

টিকা না নিলে মোবাইল বন্ধের হুমকি, টিকাকেন্দ্রে লাখো মানুষের হুমড়ি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

টিকা না নিলে জরিমানার পাশাপাশি মোবাইল ব্লক, সরকারি-বেসরকারি অফিস, রেস্টুরেন্ট ও শপিং মলে প্রবেশ নিষিদ্ধ এবং পরিবহন সেবা পাবেন না বলে সরকার ঘোষণা দেওয়ার পর পাকিস্তানের টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে লাখ লাখ মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন।

পাকিস্তানের দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করেছে করোনাভাইরাসে অতিসংক্রামক ডেল্টা ধরন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশটির সরকার ব্যাপকহারে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা করলেও টিকা নিতে সাধারণ জনগণের আগ্রহ তেমন দেখা যায়নি। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তারা ওই ঘোষণা দেওয়ার পর দেশটির কিছু কিছু এলাকায় টিকা নিতে আগ্রহী মানুষের সারি এক কিলোমিটারের বেশি ছাড়িয়ে যেতে দেখা গেছে।

দেশটির স্বাস্থ্য কর্মীরা বলেছেন, সারিতে যারা দাঁড়িয়েছেন তাদের অনেকেই কোভিড-১৯ এর হুমকি বিবেচনায় নয়, বরং বিধি-নিষেধের ভয়েই এসেছেন। টিকা নিতে সারিতে যারা দাঁড়িয়েছেন, স্বাস্থ্য কর্মীদের মন্তব্যের মিল পাওয়া গেছে তাদের কথাতেও।

থুঁতনির নিচে মাস্ক ঝুলিয়ে করাচির দক্ষিণাঞ্চলের একটি কেন্দ্রে টিকার অপেক্ষা করছেন ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল রউফ। তিনি বলেন, ‌‘আ‌মি ব্যক্তিগতভাবে করোনাকে ভয় পাই না। আমার বেতন বন্ধ হয়ে যাবে, আমাদের সিম বন্ধ হয়ে যাবে। এসব কিছুই কাজ করছে এখানে। যে কারণে আমি দ্বিতীয় ডোজ নিতে এসেছি।’

টিকাদানের বিরোধিতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে পাকিস্তানে। পাকিস্তান এবং প্রতিবেশী আফগানিস্তান বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে এখনও পোলিও একটি অনিরাময়যোগ্য রোগ রয়েছে। এ দু’টি দেশে পোলিওর টিকাদান কর্মসূচিতে বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী হামলা হয়। এমনকি টিকাদান কর্মীদের গুলি করে হত্যার ঘটনাও প্রায়ই ঘটছে। যে কারণে করোনার টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের নাগরিকদের মধ্যে প্রচণ্ড দ্বিধা কাজ করছে।

কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনাকারী পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী পরিচালিত ন্যাশনাল কমান্ড অ্যান্ড অপারেশনস সেন্টার (এনসিওসি) বলছে, দেশের ২২ কোটি মানুষের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৬ দশমিক ৭ শতাংশের টিকাদান পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে।

গত মাসে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা দেয়, করোনা টিকার সার্টিফিকেট ছাড়া কেউই সরকারি অফিস, স্কুল, রেস্তোরাঁ, পরিবহন, শপিং মলে প্রবেশ এবং বিমানে ভ্রমণ করতে পারবেন না। সরকারের এই ঘোষণার পরপরই দেশটিতে টিকা নিতে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায়। এমনকি গত সপ্তাহে একদিনে প্রথমবারের মতো ১০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার রেকর্ডও হয় দেশটিতে।

করাচির আইনজীবী মোহাম্মদ আতিক কুরেশি বলেন, ‘আমি টিকা নেওয়ার পর এই সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য এখানে এসেছি। কারণ আমাকে বিদেশ ভ্রমণ করতে হবে। আমি এটা ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবো না।’

বৃহস্পতিবার পাকিস্তানে নতুন করে আরও ৫ হাজার ৬৬১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে; যা গত তিন মাসের মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ। একই দিনে দেশটিতে করোনায় প্রাণ গেছে আরও ৬০ জনের। করোনায় আক্রান্তদের ৭০ শতাংশের শরীরে ডেল্টা ধরন পাওয়া গেছে। দেশটিতে এখনও হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন ৪ হাজারের বেশি মানুষ।

মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০ লাখের বেশি মানুষ এবং মারা গেছেন প্রায় ২৩ হাজার ৬০০ জন। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফয়সাল সুলতান বলেছেন, টিকাদানের সার্টিফিকেটের প্রয়োজনীয়তা টিকা নিতে মানুষকে উৎসাহিত করতে সহায়তা করেছে।

সিন্ধ প্রদেশের সরকারের মুখপাত্র মুর্তজা ওয়াহাব বলেছেন, মোবাইল ফোন বন্ধের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দেশটির কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে সরকারের বিধি-নিষেধ কার্যকর করতে শুরু করেছে।

সূত্র: রয়টার্স।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন