ঢাকা রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

Motobad news

মনুষ্যত্ব যখন ভূলুণ্ঠিত

মনুষ্যত্ব যখন ভূলুণ্ঠিত
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

সংগত কারণেই অনেক কিছু দেখে শুনে বুঝার পরও চুপ থাকতে বাধ্য হয় কিছু মানুষ। তবে সেই চুপ থাকার কারণে যদি সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে বিষবাস্প ঢুকে পড়ে, তখন কিন্তু সেই চুপ থাকা ব্যক্তিটিও পরিত্রাণ পাবে না। এটা যেমন একটি সমাজের জন্য হুমকি স্বরুপ, তেমনি রাষ্ট্র যন্ত্রের কাছেও অবমাননাকর বলে আমি মনে করি। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাগরিক মানে আমি যাচ্ছে তাই করে বেড়াব, সেটা কেমনতর কথা?

রাজনীতির সংস্পর্শে এসে ক্ষমতার খুব কাছাকাছি থেকে, যদি সে ক্ষমতাকে অপব্যবহার করা হয় তাহলে রাজনীতিকেও তো একধরনের অপমান করা হয় বলে মনে করি। হয়তো আমার মতের সাথে অনেকের অমিল থাকতে পারে। তবে এটা স্পষ্টত যে, কোন গণমানুষের নেতাকে কখনোই ক্ষমতার অপব্যবহার করতে দেখা যায়নি।  সেটা স্থানীয় রাজনীতি হোক, জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক রাজনীতির অঙ্গনেই হোক।

 ব্যক্তি স্বাধীনতা বলতে নিজেকে অন্যায়ের কাছে মাথানত না করে সঠিক সিদ্ধান্তে অটল থাকাটাই মূল। সেখানে ব্যক্তি স্বার্থের উর্দ্ধে হলো সমাজ, ধর্ম,  জাতি, এবং আন্তর্জাতিক পরিক্রমা। আর সেই অঙ্গনে নিজেকে অধিষ্ঠিত করা মানেই মনবীয় উচ্চ মার্গে তার অবস্থান।  কিন্তু এহেন কর্মে খুব কম সংখ্যক লোকই উপনিত হতে পেরেছেন। বিশ্বে যারা মহামানব আকারে তাদের নাম খচিত করেছেন, তাদের অধিকাংশই কখনোই চিন্তা করেননি তারা মহামানব হবেন। তাদের কর্মই মূলত ঐ স্নানটায় তাকে অধিষ্ঠিত করেছেন। কথা গুলো কেন জানি বারবার মনের মাঝে ঘুর পাক খায়।

সামাজিক যোগাযোগের বদৌলতে মূহূর্তের মধ্যেই সব কিছু চাউর হয়ে যায়। এটা যেমন সাধারন মানুষের কাছে মঙ্গল জনক, তদ্রুপ দায়িত্বশীল ব্যক্তি বর্গের কাছে নীতিমত আতঙ্ক বলা চলে। 

শত হলেও মানুষ তো যন্ত্রের দ্বারা নিয়ন্ত্রত নয়। ভুল কিংবা স্বভাবজাত প্রক্রিয়া হচ্ছে মানুষের জন্মগত ভাবে প্রাপ্ত। আর সে মানুষের মাঝে অমনুষ্য কিংবা পশুবৃত্তি জেগে উঠাটা স্বাভাবিক বিষয়। তাই তো মানুষ মনের অজান্তেই অনেক ভুল করে বসে। আর সোস্যাল মিডিয়ায় টক অফ দ্যা টাউন অন্য ভাষায় ভাইরাল হয়ে পরে। নানাবিধ ঘটন বা অঘটনের সমাহার ফেসবুকের বদৌলতেই হচ্ছে। 


সাম্প্রতিক মির্জা সাহেব জনহিতকর কাজ তথা ত্রাণ কার্যক্রম দিতে গিয়ে এক মুরুব্বি কে বুকের উপর ঘুষি বসিয়ে দিল। হয়তো বিগড়ে গিয়েছিল তার মেজাজ  আর তার মাঝে প্রাকৃত স্বরূপটাই উন্মোচিত হয়েছে।

এটা সে বুঝে শুনে করেন নি, এমনিতেই আসল রূপটা বের হয়ে এসেছে।  বাস্তবতা আসলে এখানেই। 

সাম্প্রতিক বরিশাল জেলার, বাবুগঞ্জ উপজেলার মীরগঞ্জ খেয়া ঘাটের ঘটনার ভিডিও দেখলে আতকে উঠতে হয়।  মানুষ কতটা বর্বর,  নির্মম আর নরপিশাচ হলে জীবিত মানুষকে হাত পা বেঁধে নদীতে ফেলে দেবার মতো সাহস হয়? সেখানের ঘটনা এটাই নতুন নয়, ইতিপূর্বে বিভিন্ন ন্যাক্কার জনক ঘটনা ঘটেছে। যে বিষয় গুলো উপজেলা প্রশাসনের নখদর্পনে।  কিন্তু এবারের ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনও হাত পা ঘুটিয়ে দায়ভার এড়িয়ে যেতে চাচ্ছেন তার প্রমান মিলেছে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে।  

উপজেলা প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভূমি কর্মকর্তার অসহায়ত্বের প্রকাশ,  যা কিনা আমাদের নিজেদের প্রতি ধিক্কার দিতে ইচ্ছে হয়। সামান্য ঘাট ইজারাদার কতটা ক্ষমতাসীন হলে উপজেলা প্রশাসনও তাদের ভয়ে কুঁকড়ে যায়। 

অথচ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটা বিরাট প্রশাসনিক কাঠামো রয়েছে উপজেলা পর্যায়ে। যে ম্যাজিষ্ট্রেসি পাওয়ার দেয়া আছে জনগনের সুবিধায় যথাযথ প্রয়োগের জন্য। সেটা ও যথাযথ প্রয়োগ করতে পারছে না তারা।

 উল্টো সে জেলা প্রশাসনকে দায়ী করছেন।  জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্তা ব্যক্তি সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মনে হয়েছে সদ্য আকাশ হতে ভূমিতে নেমেছেন।  এই মাত্র সে ঘটনার বিবরণ শুনলেন আসলে কি তাই হওয়া উচিত? যেখানে সোস্যাল মিডিয়া তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে সেখানে এমন দায়িত্বশীল কর্তা ব্যক্তির জবাবে জনগন এমনিতেই হতাশায় নিমজ্জিত হয়। 

অথচ জেলা প্রশাসন চাইলে মাত্র মৌখিক নির্দেশে ইজারা বাদ করে, ইজারাদার কে কাঠগড়ায় দার করিয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে পারে।
উপজেলা প্রশাসনের বক্তব্য মতে, জেলা প্রশাসন থেকে তদবীরের কারনে উপজেলা প্রশাসন কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে পারে না। বিষয়টি একটি রাষ্ট্র যন্ত্রের জন্য ভাবনার বিষয়।  

আমাদের বাবুগঞ্জ উপজেলায় অনেক সাংবাদিক রয়েছেন, যারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বহুল ঘটনা জনসম্মুখে নিয়ে আসেন, সে জন্য তারা মাঝে মাঝে হুমকির সম্মুখীন ও হন। এ বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে নিয়ে আসা উচিত। 

সত্য উদঘাটনে যদি জীবন সংহারের সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সাংবাদিকেরা কিভাবে বস্তুুনিস্ঠ সংবাদ তুলে ধরবেন?
প্রসঙ্গ ক্রমে বলতে হয়, মীরগঞ্জের ঘটনার বিবরন থেকে স্পষ্টতরভাবে বুঝা যায়। মানুষ তার বিবেককে বিসর্জন দিয়ে দানব রুপ নিতে যাচ্ছে।  এখনও লাগাম না টানলে হয়তো পথে ঘাটে এমনতর দৃশ্য  কেবল মোবাইলে ভিডিওই হতে থাকবে।

 

------- এস, এম মনিরুজ্জামান 


এমবি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন