ভ্রমণের উপযুক্ত পরিবেশ হোক কুয়াকাটায়


ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানের প্রতিবাদে খাবার হোটেল বন্ধ করেছিল কুয়াকাটার হোটেল ব্যবসায়ীরা। এটি পর্যটকদের জন্য এক ধরণের সতর্কতা মেসেজ, যে পঁচা বাসী খাবার বিক্রির পরও ঐক্যবধ্য তারা। অনিয়মের পক্ষে আন্দোলন করার যথারীতি সাহস দেখালো। যেহেতু কুয়াকাটা বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায়।
সুতরাং এখানে আমি জীবনে সবচেয়ে বেশিবার গিয়েছি। যতবার গিয়েছি ততবার থাকার ও খাবার হোটেলে প্রতারিত হয়েছি। এজন্য এখন গেলে লেম্বুর চর নয়তো আলীপুরে গিয়ে খাই।
শতভাগ ব্যবসায়ি যে ধুরন্ধর তা কিন্তু নয়। তবে পর্যটন এলাকার অধিকাংশরা ধুরন্ধর। এটি আমার ব্যক্তিগত মতামত। আপনার মতামত ভিন্নও হতে পারে।
কিভাব? একটি নমুনা দেই, সর্বশেষ ১৩ ও ১৪ জুলাই কুয়াকাটা অবস্থান করেছি। ওই সময়ে সম্ভবত কোন সরকারি ছুটি চলছিল। কোন হোটেলেই থাকার জন্য রুম খালি ছিল না। কিছু কিছু হোটেলে ছিল। যেসব হোটেলে থাকার জন্য রুম ছিল সেগুলোর ধারণা এমন দু’ মাস আগে যে রুমের ভাড়া দরকষাকষি করে ৪ শ থেকে ৫ শ টাকায় থাকা গেছে সেই রুম একদাম ২ হাজার। এই রুমে একটি পুরানো চৌকি/খাট, তেল চিটচিট বালিশ, গন্ধযুক্ত মশারি আর শরীর দুর্বল একটি ফ্যান পাবেন।
আর তুলনামূলক ভালো হোটেলের রুমের ভাড়া নূন্যতম ৪ হাজার টাকা। হোটেল ভেদে এর বেশিও আছে। ১৩ জুলাই রাতে পৌঁছে দেখি হোটেলের বারান্দাও কেউ কেউ জনপ্রতি সাড়ে ৩ শ টাকা করে ভাড়া দিয়েছেন। যে ট্যুরিস্ট স্পটে পর্যটক পেলে ৪ শ টাকার ২ হাজার টাকা হয়ে যায়, যেখানে হোটেলের বারান্দাও ভাড়া দেওয়া হয় সেখানে ব্যবসায়ীরা কেমন হতে পারে আন্দাজ করুন।
আসি খাবারের প্রসঙ্গে। আপনি যদি দরদাম করে না খান তাহলে পকেটের সব টাকা দিয়ে আসতে হবে। পর্যটক কম থাকাকালীন সময়ে এক পিরিচ লাউ ৫০ টাকা। পর্যটক বাড়লে সেই লাউয়ের দাম ৭০ থেকে ১শ টাকায় বিক্রি হয়। ভাবুনতো, ঢাকা শহরে একটি আস্ত লাউ ১০০ টাকার বেশি দিয়ে কেউ হয়তো কিনবেন না। সেখানে এক পিরিচ লাউ সবজি কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকায়। শুটকি ভর্তা বা ভাজি এক প্লেট কিনবেন ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়। অথচ শুটকি কিন্তু কুয়াকাটায় তৈরী হয়। আর মাছ, মুরগি বা অন্যান্য তরকারি খেতে বসবেন, এক এক হোটেলে এক এক দাম।
কেন রে ভাই? এটাই কি কুয়াকাটার ব্যবসায়ীদের পুঁজি? মানুষের পকেট কাটা? আবারো বলছি, দরাদাম করে না খেতে বসলে বিল যা হবে তা আপনি দিতে পারবেন না। দরদাম করে বসলে যে আপনি জিতবেন তাও কিন্তু নয়। তখন আবার খাবারে পরিমান কম পাবেন।
উপকার হচ্ছে, কত টাকা বিল হচ্ছে তার একটি প্রাথমিক ধারণা আপনার মাথায় থাকবে।
আর যেসব হোটেল ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করছেন তাদের সকলের হোটেলে মাশাল্লাহ বলে পঁচা, বাসী, বালুযুক্ত খাবার পাবেনই। যতবার গিয়েছি ততবার একই অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরেছি।
আমি সাধুবাদ জানাই পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনকে, পঁচা-বাসী খাবার পরিবেশেন ঠেকাতে, হোটেল ব্যবসায়ীদের শঠতামি ঠেকাতে অভিযান চালিয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকুক। কুয়াকাটা পর্যটকদের উপযোগী হোক। সৎ ব্যবসায়ীরা স্বচ্ছন্দ্যে ব্যবসা করুক। অসৎরা বারবার জরিমানা গুনুক। এই প্রত্যাশা রইলো।
লেখক : বার্তা সম্পাদক, দৈনিক মতবাদ
এসএমএইচ
