ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

Motobad news
নির্বাচনের ১২ দিন পার হলেও

বাউফলে এখনো বাড়ি ফিরতে পারেনি পরাজিত নৌকার ৫০ নেতা-কর্মী

বাউফলে এখনো বাড়ি ফিরতে পারেনি পরাজিত নৌকার ৫০ নেতা-কর্মী
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ১২ দিন পরেও বাড়ি ফিরতে পারেননি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নদী বেষ্টিত চন্দ্রদ্বীপ ইউপির পরাজিত নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থীর অন্তত ৫০ নেতা-কর্মী। কিছু দিন আগে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি ছিল। রফা করে কেউ কেউ বাড়ি ফিরেছেন।

আবার অনেকে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করে হামলার শিকার হয়ে ফের পালাতে বাধ্য হয়েছেন।মানবেতর জীবন যাপন করছেন তাঁদের পরিবার-পরিজন। সর্বশেষ গত বুধবার সন্ধ্যার দিকে মো. ফিরোজ (২৮) নামে নৌকার এক কর্মীকে হাতুড়িপেটা করা হয়েছে। তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

২১ জুন (সোমবার) নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই বিজয়ী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের অব্যাহত হামলা ও মারধরের ভয়ে পালিয়ে থাকা নেতা-কর্মীরা বাড়ি ফিরতে পারছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।

ওই ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও স্থানীয় সরকারদলীয় আওয়ামী লীগের সাংসদ আ স ম ফিরোজের ভাতিজা এনামুল হক ওরফে আলকাস মোল্লা।

প্রসঙ্গত, দলীয়ভাবে মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো তালিকার ১ নম্বর ক্রমিকে নাম ছিল স্থানীয় সাংসদ আস ম ফিরোজের ভাতিজা আলকাস মোল্লার নাম। তিনি গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় মনোনয়ন পান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আমির হোসেন হাওলাদার। কিন্তু সাংসদ ফিরোজ তা মেনে নিতে পারেননি।

নির্বাচনের আগে আমির হোসেন সাংসদ আ স ম ফিরোজের সঙ্গে দেখা করলে নেতা-কর্মীর সামনে তাঁর ভাতিজা বিদ্রোহী প্রার্থী এনামুল হককে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যেতে বলেছিলেন আমির হোসেনকে। এ সংক্রান্ত অডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে ভাইরাল হয়। যা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, সাংসদ ফিরোজের ভাতিজা আলকাস মোল্লা এই প্রভাবের কারণেই স্থানীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা তাঁর ভাতিজার পক্ষ করেছে। আর এ কারণেই নৌকার প্রার্থী হেরে গেছে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টার দিকে সরেজমিনে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের পাশের ইউনিয়ন নাজিপুরের নিমদী লঞ্চঘাট এলাকায় দেখা যায়, সরু বিবি (৭০) এক বৃদ্ধা বসে কাঁদছেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন,পোলার (ছেলে)অপেক্ষায় আছি। পোলায় আমার সঙ্গে দেহা (দেখা) করতে আইবো। নৌকায় ভোট দেওনের লইগা এলাকায় যাইতে পারে না।এর মধ্যেই তাঁর ছেলে চলে আসে।ছেলেকে জড়িয়ে চুমো খান সরু বিবি।

সরু বিবি বলেন,নৌকায় ভোট দেওয়ায় তাঁর ছেলে মো. জাফর মোল্লা (৫৫) ও তাঁর তিন নাতি নির্বাচনের দিন রাতে ট্রলারে করে পালিয়ে গেছে। তাঁরা বাড়ি যেতে পারে না।তবে জাফর ভয়ে মুখ খুলতে চান না।

চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চর রায় সাহেব থেকে দ্বিতীয় দফায় পালিয়ে এসেছেন মো. আবু দালাল (৫০) ও তাঁর স্ত্রী মোসা. বিলকিস বেগম (৪৫)। তাঁরা নাজিরপুর ইউনিয়নের ধানদী গ্রামে তাঁদের এক স্বজনের বাড়ি আশ্রয় নিয়েছেন।তাঁর দুই ছেলে মো. রাব্বি (২২) ও আবদুল্লাহ (১৬) পালিয়ে ঢাকায় চলে গেছেন।

আবু দালাল বলেন,নির্বাচনের দিন রাতে তাঁদের সঙ্গে পালিয়ে আসা কয়েকজন বাড়ি ফিরেছেন। তাই তিনি ও তাঁর স্ত্রী ট্রলারে করে গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেন। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছানোর পর আনারস প্রতীকের ২০-২৫ জনের একটি দল তাঁদেরকে মারার চেষ্টা করলে একটি ঘরে আশ্রয় নেন। সেখানেও হামলার চেষ্টা চালায় হামলাকারিরা। নিরুপায় হয়ে ওই ঘর থেকে পালিয়ে খালের মধ্যে দিয়ে একটি বাগানে আশ্রয় নেন তাঁরা স্বামী ও স্ত্রী। বৃষ্টি ও কাঁদার মধ্যে রাত তিনটা পর্যন্ত সেখানে অবস্থানের পর রায় সাহেব গুচ্ছগ্রামে যান। সেখানে গিয়েও ওই রাতে হামলার শিকার হন তাঁরা। একপর্যায়ে স্ত্রীকে ফেলে রেখে ভোর রাতের দিকে কলাগাছের টুকরা নিয়ে নিমদী লঞ্চঘাটের দিকে পাড়ি দেন আবু দালাল। প্রায় দেড়ঘন্টা পর সেখানে পৌঁছান।

বিলকিস বেগম বলেন,‘নদীতে মাছ ধইরা, হেই মাছ বিক্রি কইরা সংসার চলে আমাগো। বাড়ি যাইতে পারি না।নৌকায় ভোট দিয়া কি আমরা অপরাধ করছি?’

ইউনিয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ছালাম শরীফের অভিযোগ,‘তিনিসহ এরকম নৌকার অন্তত ৫০ কর্মী-সমর্থক পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।’

নৌকার পরাজিত প্রার্থী আমির হোসেন হাওলাদার বলেন,‘এমপির (সাংসদ ফিরোজ) ভাতিজা হওয়ার কারণে আলকাস মোল্লার কর্মী-সমর্থকদের হামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে পারছেন না নৌকার কর্মী-সমর্থকেরা। এমপির প্রভাবের কারণে প্রশাসনিক ক্যু করে তাঁকে হারানো হয়েছে। আপনাদের লেখনির মাধ্যমে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানান। আমাদেরকে বাঁচান।’

এ বিষয়ে আলকাস মোল্লা বলেন,‘নৌকার কর্মীরাইতো আমাকে ভোট দিয়ে বানিয়েছে।তাঁরাতো আমারই কর্মী। তাঁদের ওপর হামলা ও মারধরের অভিযোগ সত্য না। বিজয়ী মেম্বার প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকেরা পরাজিত মেম্বার প্রার্থীদের মধ্যে বিরোধের জেরে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছিল। যা এখন আর ঘটছে না।’


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন