ঢাকা রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

Motobad news
শিরোনাম
  • শেবাচিমে অভিযান, ব্যাগ রেখে পালালেন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা সমন্বয়ক পরিচয়ে সাবেক এমপি শাম্মীর বাসায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি নির্বাচন সবার জন্য চ্যালেঞ্জের হবে: সিইসি গাজায় ক্ষুধার যন্ত্রণায় রাস্তায় লুটিয়ে পড়ছে মানুষ, কান্না থামছে না শিশুদের ৪-৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন ভন্ডুল করার অপচেষ্টাকে রুখে দিতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা শেবাচিমে উদ্বোধন হলো আধুনিক মানের কেবিন আমতলীর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনগুলোতেই সেবা কার্যক্রম চালু   গোপালগঞ্জের ঘটনায় সাবেক বিচারপতির নেতৃত্বে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিশন রাশিয়ায় উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত, ৪৯ আরোহীর সবাই নিহত
  • গাজায় ক্ষুধার যন্ত্রণায় রাস্তায় লুটিয়ে পড়ছে মানুষ, কান্না থামছে না শিশুদের

    গাজায় ক্ষুধার যন্ত্রণায় রাস্তায় লুটিয়ে পড়ছে মানুষ, কান্না থামছে না শিশুদের
    একবেলার খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছে গাজাবাসী। ফাইল ছবি: এএফপি
    গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

    গাজার মধ্যাঞ্চলীয় শহর দেইর আল-বালাহর বাসিন্দা আকরাম বাসিরের তিন সন্তান। ক্ষুধার যন্ত্রণায় সারাক্ষণ কান্নাকাটি করছে তারা। কিন্তু কিছু করার নেই ৩৯ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি বাবার। কেবল ক্ষুধার্ত সন্তানদের জড়িয়ে ধরে আশ্বাসই দিতে পারেন, ‘যখন ইসরায়েলের অবরোধ শেষ হবে, তখন তোমরা যা খুশি তাই খেতে পারবে।’

    ‘আমি কিছুই করতে পারছি না। শুধু মানসিকভাবে সান্ত্বনা দিচ্ছি—বলি, ইনশাআল্লাহ, সব ঠিক হয়ে যাবে, খাবার আসবে। এর বাইরে আমাদের আর কিছু করার নেই,’ মিডল ইস্ট আইকে বলেন আকরাম বাসির।


    গাজার ২১ লাখ মানুষের মতো তার পরিবারও গত মার্চ মাস থেকে পূর্ণাঙ্গ অবরোধের মধ্যে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।

    ‘খাবার মেলে একবেলা, তাও অপুষ্টিকর’
    বাসির বলেন, আমার সন্তানদের অনেক কিছুই বদলে গেছে অনাহারের কারণে। ওরা ওজন হারাচ্ছে, অতিরিক্ত ঘুমাচ্ছে, মনোযোগ দিতে পারছে না—সারাদিন শুধু খাবারের কথা ভাবে। বিশেষ করে মিষ্টি।

    অভুক্ত অবস্থায় দিন পার করছে গাজার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ
    কখনো কখনো তারা সামান্য কিছু খাবার পান, তবে সেটা পুষ্টিগুণহীন। ‘ওদের পেট কখনোই ভরে না। খাবার খেয়েও ক্ষুধা মেটে না, সবাই ওজন হারিয়েছে। সামান্য পরিশ্রমেই ক্লান্ত হয়ে পড়ি,’ বলেন তিনি।

    এরপরও বাসির ভাবেন— যেভাবেই হোক, সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তবে তার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে। বাবা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।

    ‘তিনি কয়েকবার মাথা ঘুরে পড়ে গেছেন। কিছুদিন আগে হাত ভেঙে গেছে। আমরা তাকে সারাক্ষণ নজরে রাখি। কিন্তু দুধ, ডিম বা পুষ্টিকর কিছু না থাকায় তার শরীর সুস্থ হচ্ছে না।’

    ‘চার-পাঁচ দিন পর পর একবার রুটি জোটে’
    জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের বাসেম মুনীর আল-হিন্নাওয়ি গত এক মাসে মাত্র চার-পাঁচ দিন পর পর একবার রুটি খেতে পেরেছেন।

    যুদ্ধে বাবাকে হারানো ৩২ বছর বয়সী এই তরুণ এখন দুটি পরিবারের একমাত্র ভরসা: তার মা, বোনেরা, ভাইয়েরা, স্ত্রী ও এক বছরের সন্তান।

    ‘যেদিন রুটি পাই না, সেদিন হয়তো একটা ছোট বিস্কুট কিনে দেই শুধু ওদের ক্ষুধা কমাতে। কখনো কখনো ডাল সিদ্ধ করি, যদি পাওয়া যায়।’

    অবরোধের শুরুতে ক্ষুধা সহ্য করাই কঠিন ছিল, তিনি বলেন। ‘কিন্তু এখন অপুষ্টির যে শারীরিক ধকল, তা সহ্য করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমি ৩৯ কেজি ওজন হারিয়েছি, আমার ভাইবোনরাও ১৫ থেকে ২০ কেজি হারিয়েছে।’

    ‘আমার বোন কয়েকদিন পর পর অজ্ঞান হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। স্ত্রী দুগ্ধদান করছেন, কিন্তু এখন এতটাই দুর্বল হয়ে গেছেন যে হালকা কাজও করতে পারেন না।’

    ‘চার দিন শুধু লবণ পানি খেয়ে টিকে থাকি’
    অল্প কিছু খাবার পেলেও তা শুধু ছোটদের জন্য রাখা হয়। বড়রা শুধু লবণ গুলে পানি পান করে।

    ‘পাঁচবার খাবার বিতরণ কেন্দ্রে গেছি, প্রতিবার খালি হাতে ফিরেছি। ট্যাংক, ড্রোনের গুলির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনও দিন গেছে, টানা চার দিন কিছু না খেয়ে শুধু লবণ পানি খেয়ে বেঁচে ছিলাম।’

    হিন্নাওয়ি জানান, তার মা যিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, ২০ মিটার হাঁটলেও পড়ে যান।

    রাস্তায় লুটিয়ে পড়ছে মানুষ
    গাজায় গত কয়েক সপ্তাহে অনাহারে মারা গেছেন অন্তত ১১৩ জন, যাদের মধ্যে ৮১ জন শিশু। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২৮ হাজারের বেশি অপুষ্টির ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, যদিও প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।

    ‘আমরা প্রাপ্তবয়স্করা কখনো কখনো এ অনাহার সহ্য করতে পারি। কিন্তু ছোট শিশুরা কীভাবে বুঝবে, তাদের ইচ্ছা করে না খাইয়ে রাখা হচ্ছে। তারা কীভাবে বুঝবে যে, আমরা বাবা-মায়েরা নই, যারা তাদের খাবার দিচ্ছে না?’

    হিন্নাওয়ি জানান, শেখ রাদওয়ানে হাঁটার সময় দেখলাম এক নারী রাস্তায় হঠাৎ পড়ে গেলেন ক্ষুধায়। তাকে রাস্তার পাশে রাখা হয়। পরে এক বাসিন্দা এক চামচ চিনি এনে খাইয়ে তাকে একটু সুস্থ করেন।

    ‘মানুষ আর পারছে না। আর না। আমাদের সহ্যশক্তির সীমা শেষ।’


     


    গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ